লজিস্টিক্সের ক্ষেত্রে মানুষের জায়গা নিচ্ছে রোবট
চিঠি বা পার্সেল দ্রুত প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ই-কমার্সের রমরমার কারণে পার্সেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কম্পিউটার ও রোবটের সাহায্যে সেই প্রক্রিয়ায় আরো দক্ষতা আনার চেষ্টা চলছে।
হ্যার্মেস ফুলফিলমেন্ট কোম্পানির শিক্ষানবিস হিসেবে ইয়োনাস বেহরেন্ট বলেন, ‘‘আমি আলাদা করে এখানেই আবেদন করেছিলাম। কারণ জানতাম যে আমি যন্ত্র নিয়ে অনেক কাজ করবো। বিশেষ করে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। সেটাই কোনো মেকানিককে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার করে তোলে। হ্যার্মেস গ্রুপ এখানে অত্যন্ত ডিজিটালাইজড উপায়ে কাজ করে। কিন্তু প্রথমে সেটা জানতাম না। সেই কারণেই সে সব আমার জন্য আরও উত্তেজনাপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক করে তুলেছে।”
হ্যার্মেস লজিস্টিক্স সেন্টারে আরেকটি রোবট পার্সেল পাঠানোর কাজে সাহায্য করছে। অ্যামেরিকার কোভেরিয়েন্ট কোম্পানি সেই মডেল তৈরি করেছে। বিভিন্ন টেক্সটাইল কোম্পানির পার্সেল আলাদা করে প্রাপকদের কাছে পাঠায় সেই রোবট। সেটির মধ্যে বিশেষ সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম করা হয়েছে। কোভেরিয়েন্ট কোম্পানির কর্ণধার টেড স্টিনসন বলেন, ‘‘কোভেরিয়েন্ট ব্রেন সেই প্রণালীকে চোখ ব্যবহার করতে দিচ্ছে। সেই চোখ দিয়ে টোট ব্যাগের মধ্যে উঁকি মারতে দেয়। কোভেরিয়েন্ট ছবি তোলে। সেই ছবির সাহায্যে টোটের মধ্যে কী আছে, তা বুঝতে পারে। যেমন এখানে টোটের মধ্যে এক টিশার্টের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। কোভেরিয়েন্ট ব্রেন সেটিকে টোটের মধ্যে কোনো বস্তু হিসেবে শনাক্ত করতে পারে।”
হাল্ডেসলেবেনে হ্যার্মেস লজিস্টিক্স সেন্টার ইউরোপের আধুনিকতম এমন স্থাপনার মধ্যে পড়ে। প্রায় ২৬টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা জুড়ে সেটি বিস্তৃত। সারা বছরে অটোর অধীনস্থ বনপ্রিক্সের মতো ফ্যাশন কোম্পানি ও ঘর সামগ্রী সরবরাহকারীর প্রায় ২০ কোটি পার্সেল সেখান দিয়েই গ্রাহকের কাছে যায়। গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। একমাত্র সমান আকারের পার্সেল হলে তবেই সেটা সম্ভব।
ভিন্ন পণ্য ও ছোট আকারের কনসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে সেটা অনেক বেশি কঠিন। আগে হাতে করেই সেগুলি আলাদা করা হতো। ভবিষ্যতে একাধিক রোবট অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে মিলে সেই দায়িত্ব পালন করবে। অটো গ্রুপ নিজস্ব লজিস্টিক্স সেন্টারের জন্য ইতোমধ্যেই ১০০ রোবট অর্ডার করেছে। অটো গ্রুপের প্রতিনিধি জি ‘বেটি’ হু বলেন, ‘‘অটো গ্রুপে আমরা বাণিজ্যিক লজিস্টিক্সের বেড়ে চলা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন। একদিকে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। অন্যদিকে আমরা আমাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ দিতে চাই। এভাবে লজিস্টিক্সের কাজ আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই।”
কোম্পানির প্রায় ৩,৬০০ কর্মী সেই নীতিকে কীভাবে দেখছেন? তাদের মধ্যে অনেককে এখন নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। হাতের কাজ থেকে শুরু করে যন্ত্র চালনা করা এবং ভুল সংশোধনও করতে হবে। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে হ্যার্মেসের কর্মী বিয়র্কা ক্রাইবিশ বলেন, ‘‘রোবট আমার কাজ অনেক সহজ করে দিচ্ছে। সেটি আমাকে সাহায্য করছে। কনসাইনমেন্ট পরীক্ষা করে প্যাক করছে। তারপর সেগুলি ডিসপ্যাচে চলে যাচ্ছে। চাকুরি হারানোর ভয় আমার নেই। আমাদের কম্পিউটার ও রোবটও পরীক্ষা করতে হয়, সেগুলির উপর নজর রাখতে হয়। কখনো রিসেট করতে হয়। না আমার সেই ভয় নেই।”
আরো বেশি রোবট কাজে লাগানোর প্রেক্ষাপটে সব কর্মী নতুন দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কিনা, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যতে সেখানে হয়তো হাতে গোনা কিছু মানুষের প্রয়োজন পড়বে। শুধু মনিটরিং এবং কাজের শেষে রোবট কুকুর চার্জ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ থেকে থেকে রোবটের ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যায়।