International

শিশুদের প্রাণরক্ষায় স্কিন দান পাঁচ চীনা ওয়ান্ডার উইমেনের

খুদে ভাগ্নে-ভাগ্নি দু’জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ছোট্ট শরীর দুটোর কোথাও আর পুড়তে বাকি নেই। মাথার চুল থেকে নখ, সর্বত্র শুধু পোড়ার দগদগে ক্ষত। কোমা থেকে ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় ছিলই না। কিন্তু আশার শেষ আলোটা দেখিয়েছিলেন চিকিৎসক— স্কিন ডোনেশন বা ত্বক দান! আর সেটাই করে ছোট্ট দুটো প্রাণকে বাঁচিয়ে তুললেন মা এবং তার চার বোন। চীনের এই ঘটনা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

চীনের শানডং প্রভিন্সের ঘটনা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানে এক বাড়িতে আগুন লেগে গুরুতর আহত হয় ছ’বছরের মেয়ে কিকি এবং তার চার বছরের ভাই ডনডন। ভোর চারটের সময়ে বাচ্চাদের ঘরে কী থেকে আগুন লেগেছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে মা মিনের বিশ্বাস, তিনি এসির সুইচ অন করেছিলেন, তা থেকেই আগুন লাগে।

সেই অনুশোচনার আগুনে পুড়তে থাকেন মা নিজেও। কারণ, জখম দুই সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও আশার খবর মেলেনি। পাঁচ দিন ধরে কোমায় ছিল তারা। পুড়ে গিয়েছে শ্বাসযন্ত্র, কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় শরীর নিস্তেজ, আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে একের পর এক অঙ্গ।

এ পরিস্থিতিতে দুই সন্তানকে বেইজিংয়ে স্পেশালিষ্ট ট্রিটমেন্টের জন্য নিয়ে আসেন মিন। চিকিৎসক জানান, ভয়াবহ পোড়ার ক্ষত সারাতে স্কিন-গ্রাফটিং অপারেশনই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কে নিজের চামড়া দান করবে? মিনের মুখে সব কথা শুনে এগিয়ে এলেন তার চার বোন। পরীক্ষা করে দেখা গেল মিন এবং তার চার বোনই কম্প্যাটিবল ডোনার, অর্থাৎ তাদের চামড়া বাচ্চা দু’টোর শরীর গ্রহণ করতে পারে।

স্কিন গ্রাফটিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত ডোনারের পা, থাই, পিঠ বা মাথার তালু থেকে ‘ডারমেটোম’ নামে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে স্কিন তোলা হয়। মানুষের ত্বকের অনেকগুলো স্তর রয়েছে। মোট ঘনত্বের মাত্র এক-অষ্টমাংশ পুরু স্তর তুলে নেয়া হয়। সেটা এতটাই সূক্ষ্ম, যে ডোনারের শরীরে কোনও ক্ষত বা খুঁত চোখেও পড়ে না।

তবে, স্কিন ডোনেশন সার্জারির ক্ষেত্রে জ্বর আসা, বমির মতো একাধিক সাইড-এফেক্ট থাকে। সেই সব সাইড এফেক্ট সয়েই স্কিন ডোনেট করেছেন কিকি আর ডনডনের মা এবং খালারা। তাদের একজনের কথায়, ‘আমাদের পাঁচ জনকেই পুরো মাথা কামাতে হয়েছে। ভাবিনি কোনও দিন এভাবে ন্যাড়া হবো। কিন্তু বাচ্চাগুলোকে বাঁচানোর জন্য সবকিছু করতে রাজি ছিলাম।’

সেই আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। ৩ মার্চ স্কিন-গ্রাফটিং অপারেশন সফল ভাবেই হয়েছে। জ্ঞান ফিরেছে দুই ভাইবোনেরই। আর সেটা শুনেই অভিভূত নেটিজেনরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিকি-ডনডনের খালাদের নাম হয়েছে ‘ওন্ডার ওম্যান’।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button