সংশোধিত এডিপি ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, পরিকল্পনা কমিশনের খসড়া চূড়ান্ত
অনুমোদনের জন্য এনইসিতে উঠছে ১২ মার্চ * মূল এডিপি থেকে কাটছাঁট ১৮ হাজার কোটি টাকা * প্রকল্প বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৫৮৮টিতে
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে মূল এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের সাড়ে ৭ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বাদ যাচ্ছে। তবে বরাদ্দ কমলেও বাড়ছে প্রকল্প সংখ্যা। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এ খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১২ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে আরএডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলো হলো দারিদ্র্য বিমোচনমূলক প্রকল্প, সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প এবং বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প। এছাড়া পরিবহণ ও যোগাযোগ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নগর ও পল্লি অবকাঠামো, তথ্য ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রকল্প অগ্রাধিকার পেয়েছে। তিনি আরও জানান, আরএডিপিতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প শেষ করার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে যে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ১৫টি সেক্টরের আওতায় প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। এছাড়া ৯টি উন্নয়ন সহায়তা খাতে মোট বরাদ্দ হচ্ছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা এবং বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতের থাকছে ১৮ হাজার ৫৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এসব মিলে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি এই হিসাবের বাইরে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে হিসাব করলে মোট সংশোধিত এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি বরাদ্দ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭০২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার ৮৪ হাজার ৬৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বর্ধিত সভা সূত্র জানায়, ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের ক্ষেত্রে ৩৬টির বরাদ্দ কমছে। ২টির বরাদ্দ অপরিবর্তিত আছে এবং ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে। এদিকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো-বরাদ্দের ক্রমানুসারে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এসবের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হবে মোট সংশোধিত এডিপির ৬৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বর্ধিত সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ ১ হাজার ৩৩৮টি, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ৩৫টি, কারিগরি সহায়তা ১১৫টি এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৯২টি। তবে মূল এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা আছে ১ হাজার ৩৪০টি। ফলে তুলনামূলক বৃদ্ধি পাচ্ছে ২৪২টি প্রকল্প।
সূত্র জানায়, বর্ধিত সভায় অংশ নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, মূল এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বাবদ বরাদ্দের চাহিদা কম থাকায় ইআরডি থেকেও কম বরাদ্দ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীতে বৈদেশিক অর্থের চাহিদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইআরডি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রকল্পের রেডিনেস না থাকায় বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য ইআরডি, অর্থ বিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশন সম্মিলিতভাবে প্রজেক্ট রেডিনেস ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ প্রয়োজন। কেননা বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় করতে না পারলে পরে কমিটমেন্ট চার্জসহ অন্যান্য বিভিন্ন চার্জ পরিশোধ করতে হয়।
এছাড়া আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সভায় বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকের আন্তরিক তৎপরতা ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। একাধিক প্রকল্পে একজন পিডি, পিডিদের বদলি, অর্থছাড়ে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন অনেক সময় সম্ভব হয় না।
সমাপ্ত প্রকল্পের লক্ষ্য কমছে : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে মূল এডিপির তুলনায় প্রকল্প সমাপ্তের লক্ষ্য কমছে। এক্ষেত্রে এডিপিতে ৩৪৬টি শেষ করার কথা ছিল। এর মধ্যে বিনিয়োগ ২৮৭, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ১৭টি, কারিগরি সহায়তা ৩২টি এবং নিজস্ব অর্থায়নের ১০টি প্রকল্প। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে শেষ করার প্রকল্পের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩৩২টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ ২৭১টি, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ১৯টি, কারিগরি সহায়তা ২৯ এবং স্ব-অর্থায়নের ১৩টি প্রকল্প রয়েছে। ফলে তুলনামূলক এ ক্ষেত্রে প্রকল্প কমছে ১৪টি প্রকল্প।
অন্যান্য যত প্রকল্প : পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) ৭৬টি প্রকল্পের তালিকা যুক্ত হচ্ছে সংশোধিত এডিপিতে। মূল এডিপিতে এ সংখ্যা ছিল ৭৯টি। ফলে কমছে ৩টি প্রকল্প। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্প থাকছে ৩১২টি। সংশোধিত এডিপিতে নতুন অননুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ৭৫৭টি, বৈদেশিক সহায়তার সুবিধার্থে অননুমোদিত প্রকল্প ২৩২টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প থাকছে ৪০টি।