Bangladesh

সক্ষমতার ৫৬% বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় দেশে

দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত জ্বালানির অভাবে সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে। ফলে সক্ষমতার বাকি ৪৪ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট সক্ষমতা রয়েছে ২৪ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৩ সালে করা বিদ্যুৎ খাতভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মূলত দেশের ৯টি জোনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এমন ১৬০টি কেন্দ্রের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির পর্যাপ্ত সমীক্ষা না করেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে কয়লা ও গ্যাস।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে লোকসানের অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের বর্তমান এই মডেল কোনোভাবেই টেকসই নয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে স্থানভেদে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা রাখা হয়েছে।

নিরবচ্ছিন্নভাবে এক-চতুর্থাংশ বা অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনার নিশ্চয়তাও দিয়েছে সরকার। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রাখলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয় সেটিই ক্যাপাসিটি চার্জ।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান দিতে হয়েছে প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর আগের ১২ বছরে সংস্থাটি লোকসান দিয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপন্ন হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ গ্যাস ও কয়লা সংকট। এ ছাড়া এগুলোর আমদানি খরচও বেশি। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করতে সরকারকে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়।

আইএমইডি বলছে, ইউনিটপ্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ, স্বল্প মূল্যে জ্বালানি ও জমি ক্রয়, সহজে ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তি এবং শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা বন্ধ করা না হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তহবিল সংকটের সমাধান হবে না।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে ৬৭টি প্রকল্প বিশ্লেষণ করেছে আইএমইডি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পিডিবি, পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি (ডিপিডিসি), নেসকো, শ্রেডা, ইজিসিবি, পাওয়ার সেল, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), আরপিসিএল ইত্যাদি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি ‘হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেছে আইএমইডি। সংস্থাটি বলেছে, সাত বছর পার হলেও কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন মাত্র ১০ শতাংশ। প্রকল্প শুরুর বছর থেকেই এসব প্রকল্পের অগ্রগতি হয়নি।

এই খাতে ৩ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদ্যুতের সিস্টেম লস দাঁড়ায় ৮.৭৩ শতাংশ। দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের লোকসান ছাড়া অন্য সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য নয়। ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সিস্টেম লস থাকতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ, বিদ্যুৎ খাতের টেকসই উন্নয়ন—এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অনেক আগে থেকে বলে আসছি এর স্থায়ী সমাধান দরকার। দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস অনুসন্ধানের কথাও বলেছি, কিন্তু কোনো কিছু হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনটি একটি ভালো কাজ হলেও এতে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা হতাশাজনক। এই খাতে অনিয়মের জন্য যারা দায়ী, তাদের যেন জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button