সন্দেশখালীতে তৃণমূলের সহিংসতার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ক্ষোভ
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সন্দেশখালীতে আজ মঙ্গলবার শাসক দল তৃণমূলের নেতাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমসহ বিভিন্ন দল। অত্যাচারের প্রতিবাদে বসিরহাটে এসপি অফিস ঘেরাও করতে যান বিজেপির নেতা–কর্মীরা। এর নেতৃত্ব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে তাঁদের। বিজেপির কর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে গেলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে, মারধর করে এবং গ্রেপ্তার করে বিজেপির কর্মীদের।
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি, জমি দখল, অত্যাচার ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। সেই অত্যাচারের প্রতিবাদে আজ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাট, বহরমপুর, রামপুরসহ খোদ কলকাতাও।
গত ৫ জানুয়ারি ভোরে সন্দেশখালীতে রেশন দুর্নীতি–কাণ্ডের তদন্তের জন্য ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) একটি দল যায় সেখানকার তৃণমূলের দাপুটে নেতা শেখ শাজাহানের বাসভবনে তল্লাশি চালাতে। এ সময় শেখ শাজাহানের আশ্রিত একদল নেতা–কর্মী হামলা চালান ইডির কর্মকর্তাদের ওপর। এ হামলায় তিন ইডি কর্মকর্তা আহত হন। এরপরই শাজাহান পালিয়ে যান। পুলিশ দীর্ঘদিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি শাজাহানকে।
এ ঘটনায় শাজাহানের বাহিনীসহ তাঁর অনুগামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গর্জে ওঠে সন্দেশখালী। এত দিন সন্দেশখালীর নির্যাতিত নারীরা শাজাহানের বাহিনীর অত্যাচারের ভয়ে মুখ খোলেননি। এবার তাঁরা ফাঁস করছেন নারীদের ওপর শাজাহান বাহিনীর অত্যাচার ও ধর্ষণের নানা ঘটনা।
সন্দেশখালীর নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ বহরমপুরে আন্দোলনে নামেন বাম সমর্থকেরা। এর নেতৃত্ব দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বহরমপুরের টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গে বাম দলের। এখানে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। ধরপাকড় করে বাম দলের নেতা–কর্মীদের। এ সংঘর্ষে আহত হন বহু নেতা–কর্মী। পুলিশ গ্রেপ্তার করে বহু কর্মী–সমর্থককে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কংগ্রেসও আজ সন্দেশখালীর নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। বিক্ষোভ দেখায় উত্তর চব্বিশ পরগনার রামপুর এলাকায়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেসের নেতারা। হাওড়ার উলবেড়িয়ায় আজ প্রতিবাদ মিছিল ও সংঘর্ষ হয়েছে।
অন্যদিকে আজ সন্দেশখালীর নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন কামদুনির প্রতিবাদীরা। কামদুনিতে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলেও ন্যায়বিচার পাননি এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি, ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল শাসক দলের মদদ।
এদিকে ১০ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সন্দেশখালীর আন্দোলন স্তিমিত করতে পুলিশ সন্দেশখালীতে জারি করে ১৪৪ ধারা। আজ ওই ১৪৪ ধারা জারিকে আইনমাফিক না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেন গুপ্ত বাতিল করে দেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের আরেক বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় আজ সন্দেশখালীর ঘটনা নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে দায়ের করেন একটি মামলা এবং এ নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছেন।