অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন: খরচ করে মহাপরিকল্পনা হয়, বাস্তবায়নের খবর নেই।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জনগণের অর্থ খরচ করে নানা বিষয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। অনেক ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনা কাগজে-কলমেই আটকে থাকছে। এতে অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে নগর উন্নয়ন।
অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধ এবং ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দেশের পৌরসভাগুলোর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল ২০০৮ সালে। ইতিমধ্যে ২৫৬টি পৌরসভার মহাপরিকল্পনার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ এখনো চলছে। পরিকল্পনাগুলো প্রণয়নে সরকারের খরচ হয়েছে ৩২ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নানা জটিলতায় ব্যয়বহুল এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে গ্রামীণ নগর হিসেবে পরিচিত পৌরসভাগুলো অপরিকল্পিতভাবেই গড়ে উঠছে।
জনগণের করের টাকায় দেশের পৌরসভাগুলোর মতো সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থায় এমন মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো কাগজে-কলমে থেকে যাচ্ছে।
এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার পরিণতি দেখছে নগরবাসী। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকা ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিছু এলাকায় গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পানি সরেনি। সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিরপুরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
নগর–পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চাহিদা থাকার কারণে মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হলেও এর বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে নিস্পৃহ থাকেন। ফলে অর্থ খরচ করে বৃহত্তর জনস্বার্থে যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, তা আর পূরণ হয় না।
রাজধানীতে বাস্তবায়নের আগেই অকার্যকর
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ২০১৫ সালে ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা তৈরি করে। ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনায় ৪৭টি খালের কথা উল্লেখ আছে। এসব খাল উদ্ধার এবং এর সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়ে বলা ছিল।
ঢাকা ওয়াসা জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব সরিয়ে নেয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সিটি করপোরেশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে ওয়াসার তৈরি ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
ঢাকার পয়োবর্জ্য পরিস্থিতি বদলাতে ২০১৩ সালে রাজধানীর পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। সে অনুসারে ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ রোধে পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ১০ বছরে মাত্র একটি শোধনাগার নির্মিত হয়েছে, কিন্তু পয়োবর্জ্য শোধনাগার পর্যন্ত পৌঁছানোর নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়নি। বাকি চারটি শোধনাগার এখনো খাতার পাতায় রয়ে গেছে৷
চট্টগ্রামেও তথৈবচ
চলতি বছরের সাত মাসে চট্টগ্রাম নগর ডুবেছে ১০ বার। বৃষ্টি ও জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা কিংবা বন্যাজাতীয় দুর্ভোগ থেকে চট্টগ্রাম নগরবাসীকে মুক্তি দিতে ১৯৯৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল ‘চিটাগং স্টর্ম ওয়াটার ড্রেনেজ অ্যান্ড ফ্লাড কন্ট্রোল মাস্টারপ্ল্যান’। এটি ‘ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা’ নামে পরিচিত।
নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে কী করণীয়, মহাপরিকল্পনায় তার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ২০ বছর মেয়াদি এই মহাপরিকল্পনার মেয়াদ পার হলেও অধিকাংশ নির্দেশনাই বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে সময় যত যাচ্ছে, নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা ততই প্রকট হচ্ছে।
এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। প্রণয়নের সময় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯০০ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় এখন বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যয় কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
বৃষ্টি ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। জোয়ারের পানি নগরীর বিভিন্ন খাল উপচে অনেক এলাকা ডুবিয়ে দেয়। এ জন্য মহাপরিকল্পনায় কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে ৩৬টি জোয়াররোধক ফটক (টাইডাল রেগুলেটর) নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল।
জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নদীর সঙ্গে যুক্ত ১২টি খালের মুখে জলকপাট নির্মাণ করার কথা ছিল। এ পর্যন্ত ১০টির অবকাঠামো নির্মাণ হলেও সেগুলো চালু হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নগরের কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত নগরের ২৩টি খালের মুখে জলকপাট নির্মাণের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি।
নিজেরাই মানছেন না মহাপরিকল্পনা
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন চলছে অনেকটা ‘দিনে আনি, দিনে খাই’-এর মতো। বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে, পৃথক্করণ না করেই প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ময়লা রাখার ঘর (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) বা এলাকাভিত্তিক ময়লার কনটেইনারে রাখা হচ্ছে। সেখানে থেকে ল্যান্ড ফিল্ডে ফেলা হচ্ছে।
সনাতন এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক ও পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে দুই সিটি করপোরেশন।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ইতিমধ্যে নিজেদের অনুমোদিত মহাপরিকল্পনা থেকেই সরে গেছে। মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বর্জ্য থেকে কয়েক ধরনের সম্পদ উৎপাদন করা হবে। বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী বায়োগ্যাস, কম্পোস্ট, নবায়িত উপাদান (রিসাইকেল), কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ-বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কিন্তু তারা সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে সরে এসে ব্যাপক মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই সিটির মহাপরিকল্পনা একই ধরনের। উত্তর সিটি মহাপরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
মহাপরিকল্পনায় সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ‘ইকো টাউন’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বর্জ্যের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা হয়। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন এবং রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের মতো সুবিধা থাকবে এই ইকো টাউনে। উত্তর সিটিতে দুটি ইকো টাউন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। একটি আমিনবাজারে, অন্যটি নাসিরাবাদ এলাকায়। একইভাবে দক্ষিণ সিটি মাতুয়াইলে একটি ইকো টাউন গড়ে তোলার বিষয়ে বলা হয়েছে।
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তর সিটি করপোরেশন ৭৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পও নিয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার পর পুরো ঘটনাই বদলে গেছে। ডিএনসিসি ইকো টাউন ধারণা থেকে সরে এসেছে। এখন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে একমুখী রেখায় এগোচ্ছে।
আলমারিতে তালাবদ্ধ মহাপরিকল্পনা
স্থানীয় সরকার আইন–২০০৯-এ বলা আছে, পৌরসভা গঠনের বা এই আইন বলবৎ হওয়ার অনূর্ধ্ব ৫ বছরের মধ্যে পৌর এলাকার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০০৮ সালে পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।
দেশে মোট পৌরসভা ৩২৯টি। এলজিইডি জেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, দ্বিতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প, তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প, ভোলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
বস্তুত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সক্ষমতা পৌরসভাগুলোর নেই। একদিকে যেমন তাদের প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব, অন্যদিকে তেমনই তাদের আর্থিক ভিত্তিও দুর্বল। তাই বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় করা এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলছেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পৌরসভাগুলো এখনো নিজেদের মতো করে কাজ করে চলেছে। আবাসিক এলাকায় দেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি। কৃষিজমিতে উঠছে বাড়িঘর। বর্জ্য রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। উন্নয়নের পরিকল্পনা বলতে কিছু নেই।
এলজিইডির নগর পরিকল্পনাবিদ ওয়ালিদ মাহমুদ বললেন, জনগণের টাকায় করা পৌরসভাগুলোর মহাপরিকল্পনা আলমারিতে পড়ে আছে। ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার ১০ বছর পার হয়ে গেছে। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও মহাপরিকল্পনাগুলোর গেজেট হয়নি। ফলে বাস্তবায়নের আগেই মহাপরিকল্পনা তামাদি হওয়ার পথে।
এলজিইডি সূত্র থেকে জানা গেছে, ৭৩টি পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এখনো বাকি। এর মধ্যে কক্সবাজার, তারাব, সাভার, নওয়াপাড়া, মোংলা বন্দর ও কাটাখালী পৌরসভা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় পড়েছে। এলজিইডি এই সাতটি পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে না। বাকি ৬৬টি পৌরসভার মহাপরিকল্পনা একাধিক প্রকল্পের আওতায় প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে এলজিইডি।
পৌরসভার আয়তনের ওপর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের খরচ নির্ভর করে। এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলছেন, বর্তমানে আয়তন ভেদে একটি পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ৩৫ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ২০১৪-১৫ সালের আগে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে খরচ ছিল গড়ে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা।
এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৮ সালে এলজিইডি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যবিধিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত কার্যবিধিতে উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, অনুমোদন ও সরকারি গেজেটে ঘোষণার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।
গেজেট হওয়া টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক বলেন, মহাপরিকল্পনার বিষয়টি নতুন। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। পৌরসভাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। মহাপরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্প বরাদ্দ ছাড়া এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
গেজেট প্রকাশ নিয়ে টানাপোড়েন
গেজেটের জন্য ২০১৫ সালে পৌরসভার মহাপরিকল্পনাগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহাপরিকল্পনাগুলো সেখান থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় ইংরেজিতে লেখা মহাপরিকল্পনা বাংলায়ও লেখার নির্দেশনা দেয়।
মহাপরিকল্পনাগুলো বাংলায় লিখতে যথেষ্ট সময় নেয়। বাংলায় অনুবাদের পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে টুঙ্গিপাড়া, কোটালিপাড়া, টাঙ্গাইল, মাধবপুর ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার গেজেট হয়। বাকিগুলোর গেজেট নোটিফিকেশন জারির কাজ প্রক্রিয়াধীন।
পৌরসভা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন পরিকল্পনাবিদ পুলিনচন্দ্র গোলদার। তিনি বলছিলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ঠেকাতে মহাপরিকল্পনাগুলো করা হয়েছিল। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এগুলো বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না করলে সুফল মিলবে না।
সংশ্লিষ্টদের দায় নিতে হবে
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের পর গেজেট করার আগে বেশ কিছু বিষয় যাচাই–বাছাই করতে হয়। এ জন্য সময় লাগছে। গত ১০-১৫ বছরে পৌরসভায় উন্নয়ন হয়েছে। ফলে তখন করা মহাপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। বছরখানেকের মধ্যে পৌরসভাগুলোর মহাপরিকল্পনার গেজেট করা হবে। অন্যান্য সংস্থার মহাপরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত। বরাদ্দ না পেলে বাস্তবায়ন অনেক সময় ধীর হয়ে যায়।
তবে গবেষণা ও নীতি–বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলছিলেন, জনগণের টাকায় প্রণীত এই মহাপরিকল্পনা কেউ উল্টিয়ে দেখে বলে মনে হয় না। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় একদিকে অর্থের অপচয় হয়, অন্যদিকে অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে।
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করে আদিল বলেন, মহাপরিকল্পনা ছাড়া আধুনিক নগর গড়া সম্ভব নয়। যেসব সংস্থা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদেরও উদ্যোগ ও দায় নিতে হবে।