Bangladesh

পোশাক কারখানা খুলছে, নতুন ৫ মামলা

  • নতুন ৫ মামলায় ৬১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
  • আশুলিয়া ও সাভারে মোট মামলা ৪০টি। আসামি প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার।
  • গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৫ জনকে।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে বন্ধ হওয়া রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো গতকাল সোমবার থেকে খুলতে শুরু করেছে। শ্রমিকেরাও শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরেছেন।

অবশ্য গতকাল পর্যন্ত গাজীপুর, আশুলিয়া ও মিরপুরের প্রায় শতাধিক কারখানা বন্ধ ছিল। আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবার কারখানাগুলো ধাপে ধাপে খুলতে পারে।

এদিকে আশুলিয়ায় বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নতুন করে পাঁচটি মামলা হয়েছে। গত রোববার রাতে আশুলিয়া থানায় মামলাগুলো করেছে ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি কারখানার কর্তৃপক্ষ। এই ৫ মামলায় ৬১ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান।

বিজিএমইএ গতকাল জানায়, গাজীপুরের কাশিমপুর ও কোনাবাড়ী এলাকার তিনটি কারখানা ছাড়া বাকিগুলো গতকাল উৎপাদন শুরু করেছে। অন্যদিকে আশুলিয়া ও মিরপুরের প্রায় ৯৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

সব মিলিয়ে কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে শুধু আশুলিয়া ও সাভারে দায়ের করা ৪০ মামলায় নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯৫ জন।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল জানায়, গাজীপুরের কাশিমপুর ও কোনাবাড়ী এলাকার তিনটি কারখানা ছাড়া বাকিগুলো গতকাল উৎপাদন শুরু করেছে। অন্যদিকে আশুলিয়া ও মিরপুরের প্রায় ৯৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। টঙ্গী, গাজীপুর, শ্রীপুর, মাওনা, ময়মনসিংহ, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গত রাতে বলেন, ‘আমাদের শিল্পের শ্রমিকেরা বুঝতে পেরেছেন, এই মুহূর্তে মজুরি যেটুকু বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি সম্ভব না। সে কারণে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরতে চাচ্ছেন। মালিকেরাও কারখানা চালাতে চান। ইতিমধ্যে গাজীপুরের অধিকাংশ ও আশুলিয়ার কিছু কারখানা খুলেছে। কাল ও পরশুর (আজ ও আগামীকাল) মধ্যে বাকি কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য আমরা আলোচনা করছি।’

গতকাল দেখা যায়, সকালে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর বাজার, মৌচাক, তেলিচালা, কোনাবাড়ী, জরুন ও ভোগড়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে।

মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, ‘কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখন বেশি জোর দিচ্ছি। তারপর আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মামলার বিষয়ে আলোচনা করব। কারখানা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ও শিল্পের বাইরে থেকে যাঁরা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের বিচার আমরা চাইব। তবে নিরীহ শ্রমিকেরা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করব।’

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। আর মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। মালিকপক্ষের এই মজুরি প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা পরদিন বিক্ষোভে নামেন।

আমাদের শিল্পের শ্রমিকেরা বুঝতে পেরেছেন, এই মুহূর্তে মজুরি যেটুকু বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি সম্ভব না। সে কারণে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে ফিরতে চাচ্ছেন।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান

প্রথমে গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা আশুলিয়া ও মিরপুরে ছড়ায়। এই আন্দোলনে গাজীপুরের চারজন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। গত মঙ্গলবার পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত হয়। তবে শ্রমিকেরা আরও বেশি মজুরির দাবি করছিলেন। তাঁরা বলেছেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে নির্ধারিত মজুরি দিয়ে তাঁদের চলা কঠিন।

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সুপারিশ করেছিল, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হতে পারে ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। বাড়তি মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকলে গত বুধবার থেকে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ‘কাজ নেই, মজুরি নেই ভিত্তিতে’ কারখানা বন্ধ করা শুরু করেন মালিকেরা।

আমাদের যে বেতন বাড়িয়েছে তাতে হয়তো প্রয়োজন পুরোপুরি মিটবে না। মানিয়ে নিতে হবে

শ্রমিক মোসলেম উদ্দিন

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে এবারের আন্দোলনে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ী এলাকার তুষুকা গ্রুপের কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। গত শনিবার কোনাবাড়ী ও কাশিমপুরের ৩৮টি কারখানা বন্ধ ছিল। তার মধ্যে গতকাল ৩৫টি খুলেছে।

সরেজমিনে গতকাল দেখা যায়, সকালে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর বাজার, মৌচাক, তেলিচালা, কোনাবাড়ী, জরুন ও ভোগড়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন। সারা দিনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

গাজীপুরের আমবাগ এলাকার একটি কারখানার শ্রমিক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের যে বেতন বাড়িয়েছে তাতে হয়তো প্রয়োজন পুরোপুরি মিটবে না। মানিয়ে নিতে হবে।’

কারখানার শ্রমিকেরা বন্ধকালে মজুরি পাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘এটি কারখানাগুলোর নিজস্ব ব্যাপার। এভাবে আমরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করব না।’

Show More

One Comment

  1. Great items from you, man. I’ve consider your stuff prior to and you are simply extremely fantastic.
    I actually like what you’ve obtained here, certainly like what you’re stating and the best way through
    which you say it. You’re making it enjoyable and you continue to care for
    to keep it sensible. I can not wait to learn far more from you.
    That is really a great web site.

    Stop by my web page – vpn special coupon code 2024 (http://vpnspecialcouponcode.wordpress.com/)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button