Bangladesh

আইএমএফ ঋণের পরেও কাটেনি ডলার সংকট

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিপরীতে দেওয়া শর্ত পরিপালনে নতুন পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের অর্থ রিজার্ভে আর দেখাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক ধাক্কায় ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অবশ্য ডলারের চাপ সামলাতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন শুরু করেছে উভয় দেশ। তবুও আমদানি-রপ্তানির এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে আমদানির ক্ষেত্রে যে নিয়ন্ত্রারোপ করা হয়েছিল তা এখনো বহাল রয়েছে। তবুও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখনো খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলেও প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। এতে অবমূল্যায়িত হচ্ছে টাকা।

এদিকে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া গেলেও তার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি ডলারের বাজারে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ইতিবাচক কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আলোচনা শুরু হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। তার আগে সংস্থাটির দেওয়া ৩৮ ধরনের শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে সরকারকে। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে বার বার। যার প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ দুই অঙ্কের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। এ ছাড়া নতুন নিয়ম রিজার্ভ গণনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন করে পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। অন্যদিকে মার্কিন ডলারের অভাবে নিয়মিত গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে পারছে না সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা। বিল বকেয়া রাখায় জরিমানাও গুনতে হচ্ছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়তে শুরু করলেও রিজার্ভ সে হারে বাড়ছে না। ২৬ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি জুনের প্রথম ২৫ দিনে প্রবাসীরা ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। যা গত বছরের একই মাসের প্রথম ২৩ দিনে পাওয়া ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। এতে চাপে থাকা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে। এদিকে নতুন অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৭২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের রপ্তানি সম্ভব হয়েছিল। সে হিসাবে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় আড়াই বিলিয়ন ডলার কম হয়। অন্যদিকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা ডলার সংকট নিয়ন্ত্রণে আনতে বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণারোপ করে সরকার। এতে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের আমদানির পরিসংখ্যানেও তার প্রভাব দেখা যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পণ্য আমদানি ব্যয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ কমেছে। আর আমদানি হওয়া পণ্যের পরিমাণ কমেছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। এরপরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে আমদানির সংকটও কাটছে না। ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই আমদানি করতে পারছেন না। এলসি খুলতে ব্যাংকের শাখায় শাখায় ঘুরলেও অনেকে তা খুলতে পারছেন না। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডলার সংকট খুব কম সময়ে কেটে যাবে বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে আমরা আমদানিতে নিয়ন্ত্রণারোপ করেও আমদানি কমাতে পারিনি। আবার রপ্তানিও আশানুরূপ বাড়াতে পারিনি। ফলে আমরা ডলার সংকট কাটাতে পারিনি বলে তিনি মনে করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor