Hot

আমদানিকারকদের কারসাজি রোজা ঘিরে সিন্ডিকেটের কবজায় ফলের বাজার

তদারকির অভাবেই এমন পরিস্থিতি-গোলাম রহমান

ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে ফল ও খেজুরের দাম এমনিতেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এর মধ্যে আমদানিকারক সিন্ডিকেট রমজান ঘিরে বাড়তি মুনাফা করার ছক তৈরি করছে। আমদানি পর্যায় থেকে বাড়িয়েছে দাম। যে কারণে পাইকারি পর্যায়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ফল ও খেজুর। ফলে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এতে পরিবারের জন্য যারা নিয়মিত ফল কিনতেন, তারা বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। এছাড়া খুব প্রয়োজন হলে খরচ সমন্বয় করে একটি-দুটি করে ফল ওজন দিয়ে কিনছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি মূল্যের কারণে ইফতারে ফল কিনে খাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ভোক্তাসাধারণ।

বুধবার রাজধানীর পাইকারি আড়ত বাদামতলী গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্রাউন আপেল ১৮ কেজির বাক্স বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় দাম ছিল ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। পাইকারি আড়তে ১৮ কেজির বাক্সে মাল্টা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারি আড়তে ১৮ কেজি ওজনের বাক্সে চায়না কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা ছিল। পাশাপাশি রাজধানীর পাইকারি ফলের বাজার বাদামতলীর খেজুরের আড়তে পাঁচ কেজি প্যাকেটের মরিয়ম প্রিমিয়াম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। মাবরুর খেজুর প্রতি প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা, যা আগে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বড় আকারের ম্যাডজুল খেজুরের পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা, যা আগে ৬ হাজার টাকা ছিল। ছয় কেজি ওজনের আজোয়া খেজুরের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকা, যা গত বছর একই সময় ৬ হাজার ২০০ টাকা ছিল। দাবাস ক্রাউন খেজুরের পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৩ হাজার ৪০০ টাকা ছিল।

বাদামতলী জননী ফলের আড়তের মহাজন জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে যে দরে ফল আনি, পরে কিছু কমিশনে বিক্রি করে দিই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, রোজা উপলক্ষ্যে এবার আমদানিকারকা দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়তে শুরু করেছে।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ ফলের পাইকারি আড়তের একাধিক বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেছেন, বাজারে এবার চাহিদার তুলনায় খেজুরের মজুত পর্যাপ্ত। রোজা ঘিরে খেজুরের চাহিদাকে পুঁজি করে একশ্রেণির আমদানিকারক, কমিশন এজেন্টরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের যুক্তি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা এবং পরিবহণ ব্যয় গত বছরের তুলনায় বেশি। কিন্তু অনেক আমদানিকারক উচ্চমূল্যের খেজুর শুল্ক ফাঁকি দিতে কম দাম দেখিয়ে আমদানি করেছে। কিন্তু বাজারে বিক্রি করছে চার থেকে পাঁচগুণ দামে। তারা জানান, দেশে হাতে গোনা ৪০০ জন আমদানিকারক ফল আমদানি করেন। এর মধ্যে খেজুর আনেন ১০০ জন। আর এ গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর হাতে ক্রেতারা জিম্মি। তারা চিহ্নিত; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। দাম বাড়লেই পাইকরি আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানি করে খেজুর আনতে দুই মাস সময় লাগে। ডলার সংকটে পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছি না। খেজুরের আমদানি শুল্ক কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর ও কাস্টমসের সঙ্গে কথা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো সমাধান হয়নি। তাই দাম বাড়ছে।

এদিকে রোজায় বিভিন্ন ধরনের ফলের চাহিদা বেশি থাকে। এবার দেশি ফলের মধ্যে বরই, কমলা, পেয়ারা, বারোমাসি তরমুজ, ডালিম, কলার সরবরাহ থাকবে। এরপরও আমদানি ফলের চাহিদাও রয়েছে। এর মধ্যে খেজুরের চাহিদা বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ডলার সংকটে খেজুরের এলসি খোলা আগে কমলেও এখন বাড়ছে। এছাড়া সার্বিকভাবে ফলের এলসি খোলা বেড়েছে ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে আগে এলসি খোলা কমায় এখন আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রোজা উপলক্ষ্যে এবার ফল ও খেজুরের পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। সেসব পণ্য দেশে অসতেও শুরু করেছে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিদেশি ফলকে ‘বিলাসপণ্য’ দেখিয়ে আমদানিতে এলসি মার্জিন ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে গত বছর রোজা থেকে ফলের দাম বাড়তি। এখন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এর মধ্যে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ালে ক্রেতা ভোগান্তিতে পড়বে। তাই তদারকির মাধ্যমে শিগ্গিরই ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

বুধবার বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোজা ঘিরে একটি রোডম্যাপ অনুযায়ী বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। একই সময় বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলের বাজারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। অনিয়ম পেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto