Trending

আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের পাশে থাকতে চাই: ব্লিনকেন

বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদেরকে জবাবদিহিতায় নেবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ভিসা বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে সরকারের ওয়েবসাইটে। একই দিনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকারের পক্ষে এক প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। এতে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে জোরালো ভূমিকার কথা ব্যক্ত করেছেন তিনি। 

বাইডেনের ওই  ঐতিহাসিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের কথা উল্লেখ করেন ব্লিনকেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশি গার্মেন্ট শ্রমিক ও অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের চাই। তিনি বেঁচে আছেন কারণ তার পক্ষে মার্কিন দূতাবাস কথা বলেছে। 

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৬ই নভেম্বর প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউস। এ মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের পরে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

এ সময় ব্লিনকেন বলেন, বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও সম্মানের সঙ্গে অনুমোদন দিতে সরকারসমূহ, শ্রমিক ও ওয়ার্কারদের সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখবো। এর অর্থ হলো- আমাদের সব রাষ্ট্রদূত, বিশ্বজুড়ে দূতাবাসগুলো যারা পরিচালনা করছেন তারা ওয়ার্কার এবং ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন, যাতে তাদের কণ্ঠের প্রতিফলন ঘটে।

বিজ্ঞাপন তিনি আরও বলেন, এসব ক্ষেত্রে যখন আমরা আমাদের কণ্ঠস্বরকে, আমাদের এডভোকেসিকে ব্যবহার করি, তখন যারা শ্রম অধিকার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের সুরক্ষিত ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের উদ্যোগ বড় ব্যবধান তৈরি করতে পারে। 
ওদিকে হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার প্রথমবার প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। তাতে বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকারের প্রতি তার প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এবং এজেন্সিকে নির্দেশনা  দেয়া হয়েছে।

ব্লিনকেন বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং উচ্চ শ্রমমানকে এগিয়ে নিতে ওই মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে ওকালতি করা এবং তাদের জীবন-মান উন্নত করা আমাদের কূটনীতির কেন্দ্রে রয়েছে। এটি স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকারের পক্ষে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় যে, শ্রম অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতির প্রধান বিষয়। এটি কেবল একটি ঘরোয়া সমস্যা নয়; এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়, বৈদেশিক নীতির বিষয়।  

এই নীতির অধীনে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ পদক্ষেপের কথা ব্যাখ্যা করেন ব্লিনকেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার রক্ষা ও প্রচারের জন্য প্রথমত আমরা সারা বিশ্বের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতকে আলোচনায় যুক্ত করবো। এর অর্থ হলো, আমাদের সব রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসকর্মী দেশে দেশে শ্রমিকদের সঙ্গে, ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবেন, যাতে তাদের কণ্ঠস্বর আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হতে পারে। 

দ্বিতীয়ত: যারা শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দেবে, ভয় দেখাবে, শ্রম ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তি, শ্রম সংগঠনের উপর আক্রমণ করবে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের সঙ্গে থাকতে চাই। কল্পনা আক্তার একজন বাংলাদেশি গার্মেন্টসকর্মী এবং গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার কর্মী। তিনি বলেছেন যে, তিনি জীবিত রয়েছেন কারণ মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন তাদের আওয়াজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কাজ করতে শুরু করবে তখন যারা শ্রম অধিকার সুরক্ষায় এবং তা উন্নত করতে কাজ করছে, তাদের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে।

তৃতীয়ত: আমরা বহির্বিশ্বে শ্রমিক অধিকার এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবো। এজন্য শ্রমিক অধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের বৃহত্তর পর্যায়ে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে যাতে তারা যে কোনো ধরনের হেনস্তা চিহ্নিত এবং প্রতিরোধ করতে পারে।

চতুর্থত: আমরা শ্রমিকের অধিকার এবং জীবন-মান উন্নয়নের জন্য সরকারগুলো এবং জি-২০ ও জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবো। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থায় আমরা যেসব কাজ করি, তার অংশ হবে এটিও। সারা বিশ্বে এসব সংস্থার গভীর প্রভাব রয়েছে। আমরা শ্রমের পক্ষে ওকালতি করতে এই সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করবো।

পরিশেষে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বাণিজ্য চুক্তি এবং সাপ্লাই চেইন যাতে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টা আরও বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য আমদানি বন্ধ করবে।

ওই বক্তব্যে অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বের বহু দেশেই শ্রমিকদের কথা বলার অধিকার নেই। এর চেয়েও খারাপ অবস্থা আছে, যেখানে শ্রমজীবী মানুষদের একটি সুন্দর জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। তারা হয়রানি ও অপব্যবহারের শিকার হন। শুধুমাত্র নিজের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, এমনকি হত্যার শিকার হন। তাদের মধ্যে আছেন, কম্বোডিয়ার শ্রমিকেরা, গুয়াতেমালার কৃষক নেতারা এবং এস্বাতিনির শ্রম আইনজীবীরা। অগণিত সাহসী ব্যক্তি সংগঠনের অধিকার, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে কাজ করার অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। তারা জোরপূর্বক শ্রম, পাচার ও বৈষম্য থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য লড়াই করছেন। আমরা তাদের জানাতে চাই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে আছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রতিটি শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা রয়েছে। এটা শুধু আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকই নয়, এটা আমাদের স্বার্থও নিশ্চিত করে।  কারণ, শ্রমিকের অধিকার এমন অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে যা শেষ পর্যন্ত আমেরিকান ভোক্তা, শ্রমিক, ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীদের উপকার করে? আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে এটা জেনেছি, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটে জেনেছি। এটাই আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শুধু ইউনিয়নগুলোর ইতিবাচক প্রভাবগুলোর দিকে তাকান। ইউনিয়নের কারণে শ্রমিক বেশি মজুরি পায়। শুধু তাদের নিজেদের জন্যেই নয়, এ কারণে অন্যদেরও মজুরি বৃদ্ধি পায়। ইউনিয়নগুলো লিঙ্গ ও বেতন বৈষম্য হ্রাসে কাজ করে। এতে সমাজ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। আবার ইউনিয়নগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। কারণ শ্রমিকেরা তুলনামূলক ভালো কাজের পরিবেশ পায় এবং তারা আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি ইউনিয়নগুলো আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে সারা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ভালো ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমস্ত কারণে মার্কিন সরকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য। 

ব্লিনকেন তার ভাষণে বলেন, ওয়ার্কার্স এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো হলো গণতন্ত্রের মূল রক্ষক। ইতিহাসজুড়ে বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কমিউনিস্ট পোল্যান্ড, ব্রাজিলের সামরিক শাসন এবং মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রপন্থি গণআন্দোলনের মূলে রয়েছে ট্রেড ইউনিয়নগুলো। শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন তাদের অধিকার এবং নাগরিক সমাজের জায়গা তৈরিতে এবং শ্রমিকদের কথা শোনার বিষয়ে সহায়ক হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor