আরও কঠিন হয়ে এলো রমজান
চলতি সপ্তাহে শুরু হচ্ছে মাহে রমজান। রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ক্রেতারা এখন ব্যস্ত। কিন্তু বাজারে প্রায় সবকিছুর দামই চড়া। প্রতি বছর দাম বাড়বে এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে খেজুর, চিনি, শরবতের জন্য লেবু, সব ধরনের মাছসহ মুরগির দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। গরুর মাংস কেজিতেই বেড়ে গেছে অন্তত ১০০ টাকা। ছোলার দামও বেড়েছে। এ ছাড়া সবজির দাম কিছুটা কমলেও ইফতারি তৈরিতে ব্যবহৃত এমন সবজির দাম এখন বাড়তির দিকে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। উল্টো কিছু পণ্যের দাম বেড়েই চলছে।
সবমিলিয়ে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে এবারের রমজান আরও কঠিন হয়ে এলো। এতে চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে ক্রেতাদের। সংশ্লিষ্টরা বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। মূল্যস্ফীতিও বেশি। কাজে আসছে না বাজার ব্যবস্থাপনা। তাই ভোক্তাও সুফল পাচ্ছেন না।
ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার কোনো পণ্যের দাম শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীয়রা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে।
রোজায় পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ই ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যের শুল্ক ছাড়ে তেমন কাজে দেয়নি। নিত্যপণ্যের দাম কমবে এমন আশায় সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এর পরও দাম বাড়লে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামার প্রভাব নেই। আগের মতোই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ভোগ্যপণ্য। এমনকি শুল্ক ছাড়ের পর উল্টো চিনির দাম এক দফা বেড়েছে।
খেজুর: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বলছে, দেশে বছরে খেজুরের চাহিদা ১ লাখ টনের। শুধু রমজানেই দরকার হয় ৫০ হাজার টন। ফল আমদানিকারকদের দাবি, ১০ শতাংশ কমালেও এখনও সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুরে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ১৫০ টাকার মতো। বাজারে এখন এক কেজি সাধারণ মানের (জায়েদি) খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। গত বছর রোজার আগে এ ধরনের খেজুরের কেজি ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সে হিসাবে এবার প্রতি কেজি খেজুর কিনতে ক্রেতাকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে ২০০ টাকা। শুধু খেজুর নয়, সব ফলের দরই চড়া।
ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিলাসী পণ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় খেজুর আমদানিতে উচ্চ শুল্ক রয়েছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি খেজুরে সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দর বেড়েছে।
ছোলা-চিনি: বছরে চিনির চাহিদা ২২ লাখ টন। রোজায় দরকার হয় ৩ লাখ টন। দেশে চিনি উৎপাদন হয় ৩০ হাজার টনের মতো। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়। গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এখন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, অর্থাৎ চিনির কেজিতে অতিরিক্ত খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অন্যদিকে বছরে প্রায় ২ লাখ টন ছোলা আমদানি হয়। রোজায় দরকার হয় ১ লাখ টন। গত বছর বাজারে এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১২ টাকা দরে। সে হিসাবে এবার কেজিতে বেশি খরচ করতে হবে ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
পিয়াজের দর: পিয়াজের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ টনের। গত বছর রোজার আগে পিয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই দাম এখন প্রায় তিন গুণ। প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা দরে। সে হিসাবে কেজিতে বেশি খরচ হবে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
আলু: বছরের অন্য সময়ের চেয়ে রোজায় চাহিদা থাকে বেশি আলুর। বাজারে এখন ভরপুর আলু। তবু কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে। গত বছরের এ সময়ে কেজি ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। তাতে গত রমজানের চেয়ে এবার কেজিতে বেশি গুনতে হবে ১৪ থেকে ১৫ টাকা।
এদিকে এখনই মাঝারি আকারের একটি লেবুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে।
মাছ-মাংস: ব্রয়লার মুরগি গত দু’দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দু’দিন আগে কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হলেও বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩৫ টাকায়। গত বছর এ সময় দর ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে গত বছরের এ সময়ের দরকে ছাড়িয়েছে গরুর মাংস। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। গত বছর রোজার আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা, অর্থাৎ ভোক্তাদের এবার গরুর মাংসের কেজিতে অতিরিক্ত গুনতে হবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে আসা মাইনুল বলেন, ছোলা, চিনিসহ রোজার কয়েক পদের পণ্য কিনতে গিয়ে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ। বললেন, প্রতিবছর রোজার আগে সরকার বলে শুল্ক কমানো হয়েছে, দাম কমবে। তবে যারা বাজার করে, তারা জানে বাজারে কী হচ্ছে। শুধু মুখে বলে দিলে হয় না; কার্যকর করতে হয়।
কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার শুল্ক কমানোসহ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সেই উদ্যোগ তেমন দৃশ্যমান হচ্ছে না।
মাছের বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০/২২০ টাকা, পাঙাশ ১৮০/২২০ টাকা, শিং ৫২০/১ হাজার ৫শ’ টাকা, শোল ৯০০/১ হাজার টাকা, মাগুর ৫৫০ টাকা, কৈ ২৫০/৩০০/, ১ হাজার ৫শ’ টাকা, রুই ৩৮০/৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০/৪৮০ টাকা, টেংরা ৫৫০/৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকার ওপরে।