আশা-নিরাশার দোলাচলে জলবায়ু সম্মেলন শুরু
বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরতে বলেছেন ড. ইউনূস
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন। জাতিসংঘের বার্ষিক এ সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত। এতে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বনেতারা। বিশ্বের শিল্পোন্নত ২০ দেশের মধ্যে মাত্র কয়েকটি দেশের নেতারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশ্বব্যাপী ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী। এ কারণে সোমবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অনেকটা জুড়ে ছিল প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ।
বাসস জানায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার বাকুতে পৌঁছেছেন। পরে তিনি বাংলাদেশের কর্মকর্তা, এনজিও এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে কপ২৯ সম্মেলনে জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাতে বলেছেন।
তিনি বাকুর একটি হোটেলে সমন্বয় সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে বলেন, ‘আমাদের প্রধান প্রচেষ্টা হবে আমাদের উদ্বেগ ও দাবিগুলো চূড়ান্ত ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা।
বৈঠকে পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ সম্মেলনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। প্রধান উপদেষ্টা আজ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বনেতারা প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ১০০ বিলিয়ন ডলার দিচ্ছেন না। অথচ যুদ্ধের জন্য ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করছেন তারা। যুদ্ধ বন্ধ করলেই জলবায়ু মোকাবিলা করে সবুজ বিশ্ব গড়া সম্ভব। ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও এ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উৎস থেকে মাত্র ৭১০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে, যা প্যারিস সম্মেলনে প্রতিশ্রুতির অর্থের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ।
অর্থায়ন নিয়ে নানা শঙ্কা
এবারের আলোচনার মূল বিষয় অর্থায়ন। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির আওতায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। এ লক্ষ্যে কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামলাতে ২০২৫ সাল নাগাদ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছিল বড় অর্থনীতির দেশগুলো। তবে এখন পর্যন্ত সেই সহায়তার পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। আর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকা বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণকারী চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলো এ তহবিলে অর্থ দিচ্ছে না।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি যখন প্রতিবছর আরও তীব্র হচ্ছে, তখন কপ সম্মেলন সফল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক জোয়েরি রগেলজ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের পৃথিবী যে একটু একটু করে উষ্ণ হচ্ছে, তা থামাতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।’
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশবিষয়ক ভানুয়াতুর বিশেষ দূত রালফ রেগেনভানু বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বিভক্ত সমস্যা, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এমনিতেই সমাধান হবে না এবং আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দূষণকারীর আসন্ন প্রেসিডেন্টের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করব।’
সম্মেলনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভ বলেন, ‘আমরা ধ্বংসের পথে আছি। সম্মেলনটি সবার জন্য নতুন পথের সূচনা করার অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।’
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু এনজিও অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের সহ-ব্যবস্থাপক অ্যালি রোজেনব্লুথ বলেন, জলবায়ু আন্দোলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন ‘ভয়াবহ’ দুঃসংবাদ। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে কয়েক ডজন পরিবেশগত বিধি প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজ দেশকে বের করে নিয়েছিলেন, যা তিনি আবার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের আসন্ন ভূমিকা দেশটির জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিতে বড় বাধা হতে পারে।