Hot

আশেপাশে চারপাশে সংকট, সংকট আর সংকট: দিশেহারা মানুষ যাবে কোথায়?

সংকট, সংকট আর সংকট। সার্বিক সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জনগণ। সংকটের এ ঘূর্ণি থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে মানুষ? যারা এ সংকট থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে পারেন, তাদের এ বিষয়ে মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। তাদের নজর আগামী জানুয়ারির দিকে। সে সময় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীনদের মাথাব্যথা একটাই-কীভাবে নির্বাচনের দুয়ার অতিক্রম করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। ক্ষমতার বাইরে যারা আছেন, তাদেরও একই চিন্তাভাবনা-কীভাবে ক্ষমতার মসনদে বসা যাবে। জনগণের কল্যাণের বিষয়টি রাজনীতিকদের মাথায় নেই। হতভাগা জনগণ বাঁচল না মরল, তাতে কিছু আসে-যায় না। ক্ষমতার গদিই রাজনীতিকদের কাছে আসল।

সংকটের কথা বলতে গেলে কোনটা দিয়ে শুরু করা যায়? সব সংকটই তো গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারির শুরু থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় রকমের ধাক্কা খায়। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনযাত্রা হয় বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্নআয়ের মানুষ। দেশে দরিদ্র ও বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেই সময় থেকে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে, এখনো বাড়ছে। করোনার কামড় আলগা হলেও বাজারের আগুন জ্বলছেই, জনজীবনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আরও বেড়েছে।

দ্রব্যমূল্যের অবাধ ঊর্ধ্বগতি

দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত কীভাবে বেঁচে আছে তা ভুক্তভোগীই জানেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি উচ্চবিত্তদের প্রভাবিত করে না। দাম যতই বাড়ুক, তারা কিনতে পারেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। দেশের জনসংখ্যার বিশাল অংশ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র। প্রকৃত অর্থে জনসংখ্যার এ বিশাল অংশই জনগণ এবং তারাই ক্ষমতার উৎস। এ উপেক্ষিত জনগণই রাজনীতিকদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, অবশ্য যদি সুযোগ পান। রাজনীতিকরা অবহেলিত জনগণের ওপর নির্ভর করেই ক্ষমতায় বসেন এবং পরে জনগণের কথা ভুলে যান। ক্ষমতায় গিয়ে তারা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করতে কিন্তু ভুলে যান না।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ব্যবসায়ীদের বিশেষ গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেট দায়ী, এ কথা সবাই বলছেন। সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া বা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে বারবার। সংসদেও কথা উঠেছে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী সাড়া দেননি। কোথায় যেন তার বাধা আছে। সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে বাজারে অভিযান চালায় এবং বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে বিক্রেতাদের জরিমানা করে। এসব অভিযান মূলত খুচরা বিক্রির দোকানে অথবা ছোট পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকে। বড় ব্যবসায়ী বা বড় পাইকাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অথচ তারাই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী ডিমের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি পিস ১২ টাকা। তাহলে এক ডজনের দাম দাঁড়ায় ১৪৪ টাকা। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির আগে ডিমের দাম ছিল প্রতি ডজন ১১০-১২০ টাকা। সেটি বেড়ে ১৬০ টাকার উপরে গিয়েছিল। এখন যে দাম নির্ধারণ করা হলো, সেটিও তো আগের চেয়ে অনেক বেশি। এ দামও খুচরা বিক্রেতারা মানছে না। বর্ধিত দামেই তারা ডিম বিক্রি করছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালাবে রাজধানীর খুচরা বাজারসহ দেশের সর্বত্র। তাতেও কাজ না হলে ডিম আমদানি করা হবে।

পেঁয়াজসহ অনেক নিত্যপণ্যই আমদানি করা হয় ভোক্তার চাহিদা পূরণের জন্য। কিন্তু ডিমের বিষয়টি ভিন্ন। দেশে ডিমের ঘাটতি নেই, ভোক্তার চাহিদা পূরণের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম দেশেই উৎপাদিত হয়। উচ্চমূল্যের কারণে মাছ-মাংস সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ডিম মোটামুটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল বলেই নিম্নআয়ের মানুষ ডিম দিয়ে আমিষের চাহিদা মেটাতেন। এটারও সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী যখন সিন্ডিকেট দমন করতে পারছেন না বা করছেন না, তখন ডিম আমদানি করাই উচিত। এতে বাজারে সরবরাহ বাড়বে, ভোক্তারাও ন্যায্যমূল্যে ডিম পাবে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববাজারের সর্বত্রই ডিমের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। প্রতিবেশী ভারতে ডিমের দাম বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেক। সেখান থেকে আমদানি করলে খরচ পড়বে কম, বাজারেও কম দামে সরবরাহ করা যাবে। সরকার যদি ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত তা করতে পারবেন কি?

মাংস আমদানি নয় কেন?

আগেই বলা হয়েছে, আমিষের অন্যতম উৎস মাছ-মাংস মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি, খাসি ১২০০-১৩০০। ভারত ও ব্রাজিল গরুর মাংস রপ্তানি করে। ভারতে গরুর মাংস প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা। সেখান থেকে আমদানি করলে নিশ্চয়ই অনেক কম দামে ভোক্তাদের দেওয়া যাবে। অসাধু মাংস ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও ভেঙে দেওয়া যাবে। মাংস আমদানির কথা একবার শোনা গিয়েছিল, তারপর আর খবর নেই। এ ব্যাপারে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের মাথাব্যথা নেই, কারণ ৮০০ টাকা কেজি মাংস তাদের জন্য সমস্যা নয়। সমস্যা শুধু সাধারণ মানুষের। তাদের কাছে গোমাংস সোনার হরিণ।

আলু সমাচার

নিত্যপণ্যের কথা বলতে গেলে আলু ও শাকসবজির কথা বলতেই হয়। একসময় আলু ছিল সবচেয়ে কম দামি খাদ্য। আলুর দাম মাঝেমধ্যে এত কমে যেত যে, কৃষক আলু বাজারে বিক্রি না করে গরুকে খাওয়াতেন। সেই সস্তা খাদ্য আলুও এখন মহার্ঘ। দশ-পনেরো টাকার আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকার উপরে। অথচ দেশে আলুর ঘাটতি নেই। যথেষ্ট পরিমাণ মজুত আছে; যা দিয়ে ডিসেম্বরে নতুন আলু আসা পর্যন্ত ভোক্তার চাহিদা মেটানো যাবে। তাহলে আলুর দাম এত বাড়ল কেন? দাম বাড়েনি, বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু মাছ-মাংস-সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে, তারা কম মূল্যের আলুর দিকে ঝুঁকেছেন। এটাই অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ এনে দিয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে অস্বাভাবিক হারে আলুর দাম বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী আলুর দামও বেঁধে দিয়েছেন, ৩৫ টাকা কেজি। সেটিও তো বেশি। তা-ও কার্যকর হয় কিনা দেখা যাক। শেষ পর্যন্ত আলুও আমদানি করতে হবে না তো? সবজির বাজারে আগুন তো জ্বলছেই। সবজি সরবরাহে ঘাটতি নেই, বাজারে প্রচুর সবজি। কিন্তু ছোঁয়া যায় না, দাম এত বেশি। দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। মানুষ খাবে কী? বাঁচবে কী করে?

ডেঙ্গুর রেকর্ড

জনজীবনের সংকট নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি আরেকটি সংকট জনজীবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গুর কথা বলছি। মশাবাহিত এ রোগটি মহামারি আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিবছরই কম-বেশি হয়, প্রাণহানিও ঘটে। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই সারা দেশে গড়ে প্রায় ১৫ জন মারা যাচ্ছেন। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা আটশ’র কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গত বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিল ২৮১। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার রোগী দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি। এ ছাড়া সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও অসংখ্য মানুষ রয়েছেন, যারা হাসপাতালে যাননি, বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি এডিস মশাবাহিত রোগ। এডিস মশার বিস্তার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু মশার বিস্তার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ডেঙ্গু যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অনেক কিছুই প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। সেখানে কার্যকর উদ্যোগ দেখছি না।’

বেসরকারি হাসপাতালে গলাকাটা দাম

ডেঙ্গুতে যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, প্রাণে বাঁচার আশায় হাসপাতালে ছুটছে, সে সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছে, মুনাফার পাহাড় গড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউর খরচ অনেক কম, কিন্তু এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যাও কম। গুরুতর রোগীকে স্বজনরা তখন বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসার জন্য গলাকাটা দাম দিতে হয়। প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আইসিইউর জন্য লাখ লাখ টাকা বিল দিতে গিয়ে বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। রোগী মারা গেলেও পুরো বিল শোধ করে লাশ নিতে হয়। না হলে লাশ আটকে রাখে। করোনা মহামারির সময়ও বেসরকারি হাসপাতালের এমন নিষ্ঠুর আচরণ দেখা গেছে। বেসরকারি হাসপাতালের মালিক দেশের বড় ব্যবসায়ীরা। মানুষের জীবন নিয়ে তারা ব্যবসা করছেন, মুনাফা লুটছেন। সরকার জানে, কিছু বলে না, এদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না।

জনগণ যাবে কোথায়?

আলোচনার শেষ পর্যায়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। নির্বাচনের আর চার মাস বাকি। সরকারপক্ষ ও বিরোধীপক্ষ উভয়েই অনড় অবস্থানে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে আপস করবে না। বিএনপি ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না। বিএনপির রাজপথের আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলন পাশাপাশি চলছে।

বিএনপি কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে-আওয়ামী লীগ বলছে, তারাও বসে থাকবে না। এর ফল দাঁড়াবে একটাই-সংঘাত ও সহিংসতা। রাজনৈতিক সংকট আরও জটিল হবে। সংকটে সংকটে জর্জরিত অসহায় জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছাবে। তারা যাবে কোথায়?

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor