আসছে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’
আগামী সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল। এই মডেলের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে।
এ বিষয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, অক্টোবর মাসের ২১ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কার আভাস দিয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বেশিভাগ আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।
এখানে উল্লেখ্য যে, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সঙ্গে সমুদ্রের কোন স্থানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিলে সেই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায়। সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ডানা। এই নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার এর দেওয়া। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা অক্টোবর মাসের ২৪ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত করতে পারে।
পলাশ বলেন, ১৭ অক্টোবর তারিখে একই সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা ৭০ থেকে ৮০ আশঙ্কা নির্দেশ করেছে ১৬ অক্টোবর তারিখে প্রদত্ত পূর্বাভাস অনুসারে।
আজ ১৭ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি হওয়া নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেলেও কোনো স্থানের উপকূলে আঘাত করবে সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কোনো পূর্বাভাস করা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় ডানা কোন উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করবে তা জানার জন্য কমপক্ষে আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সঙ্গে নির্দেশ করেছে যে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগ ও ভারতের ওড়িশা রাজ্যের মধ্যবর্তী যেকোনো উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় বর্ষা মৌসুম শুরু পূর্বে ও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে বর্ষাকালের মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি বাংলাদেশের স্থলভাগ ত্যাগ করেছে ১৪ অক্টোবর। অর্থাৎ, বাংলাদেশের উপরে ২০২৪ সালের বর্ষা মৌসুম অফিসিয়ালি শেষ হয়ে গেছে ১৪ অক্টোবর।
পলাশ জানান, বর্ষাকাল যেহেতু সবেমাত্র শেষ হলও তাই আজ ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয় নাই; তাই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে। আজ ১৭ অক্টোবর পূর্ণিমা রাত। ঘূর্ণিঝড়টির উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে ২৪ কিংবা ২৫ অক্টোবর। ২৪ অক্টোবর চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে ৯০ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্ব থাকবে যার কারণে জোয়ার-ভাটার উচ্চতা সর্বনিম্ন পরিমাণে থাকবে। ফলে এই সময়ে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত করলে জলোচ্ছ্বাসের উপরে সামুদ্রিক জোয়ার প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম থাকবে।
যেহেতু অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখের পরে সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে তাই সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি নিম্ন কিংবা মধ্যম মানের শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ডানা যদি ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকূলের দিকে পৌঁছায় ও ওই সময় ওই স্থানের উপরে বায়ু শিয়ারের মান অনুকূল অবস্থায় থাকে তবে ঘূর্ণিঝড়টি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে যেহেতু ওড়িশা উপকূলে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা প্রায় ২ থেকে আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রয়েছে।
এদিকে সপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও
চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এসময় সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচদিনের শেষের দিকে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।