আস্থাহীনতায় ঢালাও দরপতন শেয়ার বাজারে

দেশের শেয়ার বাজারে ঢালাও দরপতন টানা ষষ্ঠ দিনে গড়াল। গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৯ পয়েন্টের বেশি। এ নিয়ে গত ছয় কার্যদিবসে সূচক কমেছে ১৫৮ পয়েন্ট। অব্যাহত এ দরপতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। ক্রমাগত লোকসানে তাদের পীঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এদিকে দিনদিন লেনদেন কমছে। এ অবস্থায় অনেক ব্রোকারেজ হাউজের শাখা অফিস বন্ধ হচ্ছে। জনবল ছাঁটাই করা হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলেছেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করলে বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু তাদের সেই আশা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। কারণ, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষা পাচ্ছে না। প্রতিদিন ঢালাও দরপতন হচ্ছে।
তারা বলেছেন, পুঁজিবাজার সংস্কারে টাস্কফোর্সের সুপারিশ দিতে যদি সাত মাস লাগে। তাও এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি বিষয়ে তারা সুপারিশ করেছে। তাহলে পুঁজিবাজার সংস্কারে কতদিন লাগবে? লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা পরই দাম কমতে থাকে। দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ২৩৪টির। আর দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬০টির। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২৬ পয়েন্টে ও বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এ নিয়ে টানা গত ছয় কার্যদিবস সূচক কমেছে। এর মধ্যে গত ২০ এপ্রিল ২২.৯৫ পয়েন্ট, ১৭ এপ্রিল ৮ পয়েন্ট, ১৬ এপ্রিল ২৬ পয়েন্ট, ১৫ এপ্রিল ৩৭ পয়েন্ট, ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের বন্ধ ছিল। এর আগের দিন ১৩ এপ্রিল সূচক কমে ৩৫ পয়েন্টের বেশি।
এদিকে গতকাল সূচক কমলেও এদিন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫৯ কোটি ৪ লাখ টাকা।
আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫১ কোটি ৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দেশের প্রধান এই শেয়ার বাজারে গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো; বিচ হ্যাচারি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, মিডল্যান্ড ব্যাংক, শাহিনপুকুর সিরামিক, উত্তরা ব্যাংক, শাহজিবাজার পাওয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, ফাইন ফুডস এবং দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। অন্যবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনকৃত মোট ১৯৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৫টির, কমেছে ১১৫টির এবং ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে এই বাজারের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬২ পয়েন্ট। গতকাল সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
টানা এ দরপতন নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান। গতকাল ইত্তেফাককে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা রাখতে পারছে না। টানা দরপতনের পাশাপাশি দিনদিন লেনদেন তলানিতে এসে ঠেকেছে।
তিনি বলেন, দুইটা স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকাররা লোকসানে চলে গেছে। এ অবস্থায় অনেক ব্রোকার হাউজের শাখা অফিস বন্ধ হচ্ছে। জনবল ছাঁটাই করা হচ্ছে। ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলে ব্রোকার হাউজগুলো কোনোভাবে টিকে থাকতে পারে। সেখানে লেনদেন হচ্ছে ৩০০ কোটির ঘরে। তাহলে কীভাবে আমরা টিকে থাকব।
তিনি বলেন, গত আট মাসে সরকারি ভালো কয়েকটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনা যেত। এছাড়া, বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের যে শেয়ার আছে, তার একটা অংশও বাজারে ছাড়া যেত। এতে কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরত।
পুঁজিবাজারে ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ডিবিএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা কোনো আশা দেখছেন না। তিনি বলেন, আমাদের বাজারের একটি বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নেই। যে বাজারে পুঁজির নিরাপত্তা নেই, সেখানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক।