Trending

ইতিহাসের উষ্ণতম মার্চ দেখলো পৃথিবী, একই অবস্থা সমুদ্রপৃষ্ঠেও

ঐতিহাসিক তাপদাহের টানা দশম মাস। পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম টানা দশটি মাস পার করলো বিশ্ব। গত ১০ মাসের প্রতি মাসেই তাপমাত্রার একটি নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মার্চ মাসটিও ছিল রেকর্ডে থাকা সবচেয়ে উষ্ণ মার্চ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) জানিয়েছে, আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গত মার্চের গড় তাপমাত্রা ১৪.১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫৭.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে।

সি৩এস এক মাসিক বুলেটিনে জানিয়েছে, গত ১০ মাসের প্রতিটিই আগের বছরের একই মাসের তুলনায় রেকর্ডে থাকা বিশ্বের উষ্ণতম মাস।

সি৩এস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) গড় তাপমাত্রা থেকে ১ দশমিক ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

সি৩এস-এর উপ-পরিচালক সামান্থা বার্গেস রয়টার্সকে বলেন, ব্যতিক্রমী রেকর্ড নিয়ে উষ্ণতার দীর্ঘমেয়াদি এমন প্রবণতা আমাদের খুবই উদ্বিগ্ন করেছে। মাসের পর মাস এ ধরনের রেকর্ড দেখলে বোঝা যায় যে, আমাদের জলবায়ু বদলাচ্ছে, খুব দ্রুত বদলাচ্ছে…।

এরই মধ্যে ১৮৫০ সালের পর থেকে থেকে ২০২৩ সাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। চরম আবহাওয়া এবং ব্যতিক্রমী তাপমাত্রা এই বছরও বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

আমাজন রেইনফরেস্ট অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরার কারণে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলায় রেকর্ড সংখ্যক দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার খরা ফসল নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে ক্ষুধার মুখোমুখি করেছে এই উষ্ণতা।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) সতর্ক করে বলেছে, ২০৩০ সালের শুরুর দিকে বিশ্বে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সাগরও উত্তপ্ত

মার্চ মাসে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও একটি নতুন বৈশ্বিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সি৩এস জানিয়েছে, মার্চ মাসে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল ২১.০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৯.৯৩ ফারেনহাইট), যা রেকর্ডের সর্বোচ্চ মাসিক মান। এই মান ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি।

আমাদের গ্রহের ৭০ শতাংশজুড়ে রয়েছে মহাসাগর। কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে উত্পাদিত কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মিথেন নির্গমনের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশ শোষণ করে জলবায়ুকে বাসযোগ্য রাখতে সহায়তা করে এসব মহাসাগর।

উডওয়েল ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জলবায়ুর গতিপথ পরিবর্তন হবে না। তার মানে আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে, বন উজাড় বন্ধ করতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও টেকসইভাবে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে।

সমুদ্রগুলো উষ্ণ হলে বায়ুমণ্ডলে আরও আর্দ্রতা বেড়ে যায়। যার ফলে শক্তিশালী ঝড়-বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাতসহ ক্রমবর্ধমান ‘অনিয়মিত আবহাওয়া’ দেখা দেয়। রাশিয়া বর্তমানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং ফ্রান্সের কিছু অংশেও মার্চ মাসে ব্যতিক্রমী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে গ্রহের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময় দেখা দিতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button