ইরানে হামলা হলে তেল আবিব হবে ‘ভুতুড়ে নগরী’

আয়াতুল্লাহ খাতামির এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন মাত্র কিছুদিন আগেই ইরান-ইসরাইলের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শেষ হয়েছে।
তেহরানের জুমআর অস্থায়ী খতিব আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আহমদ খাতামি জুমআর খুতবায় ইসরাইলকে সরাসরি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যদি আবারো ইরানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, তবে আমরা এমন ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধ নেব যে ইসরাইলের তেল আবিব পরিণত হবে এক ‘ভুতুড়ে নগরীতে’।’
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা আরো জানায়, খাতামি তার জুমআর ভাষণে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘যদি তোমরা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করো বা তোমাদের উন্মাদনা আবার দেখাও, আমরা ইসরাইলকে এমনভাবে গুঁড়িয়ে দেব যে তেল আবিবের অস্তিত্বই থাকবে না।’
আয়াতুল্লাহ খাতামির এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন মাত্র কিছুদিন আগেই ইরান-ইসরাইলের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শেষ হয়েছে। ১৩ জুন শুরু ইসরাইলের শুরু করা ওই যুদ্ধ মাত্র ১২ দিন স্থায়ী হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিপর্যয়কর।
ইসরাইল প্রথমে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ওপর সরাসরি আঘাত হানে। এই হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন ইরানের শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডাররা। ইসরাইলের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং লক্ষ্যভিত্তিক। আসলে তারা ইরানের নেতৃত্ব কাঠামোকেই দুর্বল করে দিতে চেয়েছিল।
কিন্তু যুদ্ধের মাঝেই ইরান পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি। ইরানি সশস্ত্র বাহিনী দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইলের অধিকৃত অঞ্চলে। হামলার লক্ষ্য ছিল সামরিক ঘাঁটি, রাডার ব্যবস্থা, যোগাযোগ অবকাঠামো ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রগুলো।
ইসরাইলের বিপর্যয়
ইরানের পাল্টা আঘাতে ইসরাইলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। তেল আবিবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভবন ধ্বংস হয়। হাইফা এবং আশদোদ শহরের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো আংশিক ভেঙে পড়ে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দু’টি সামরিক ঘাঁটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। অন্তত ২০০ জন নিহত হয় ইরানে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায়, যাদের মধ্যে সেনা ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছে। তেল আবিবের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়।
ইরান এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সময় একেবারে হিসাব কষে কৌশলগতভাবে ইসরাইলের দুর্বল জায়গাগুলো বেছে নেয়, যাতে শত্রুপক্ষের মনোবল ভেঙে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রকেও নিশানা
২২ জুন যুদ্ধবিরতির ঠিক দু’দিন আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এই হামলায় ঘাঁটিটির একটি বড় অংশ কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে বলে সূত্র জানায়। এই আক্রমণ ইঙ্গিত দেয় যে ইরান কেবলমাত্র ইসরাইল নয়, বরং যেকোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপও সহ্য করবে না।
তেহরানের অস্থায়ী খতিবের বার্তা, ঐক্য ও প্রতিরোধ
এই প্রেক্ষাপটে খুতবায় আয়াতুল্লাহ খাতামি ইরানিদের ঐক্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আমাদের জনগণ যে ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে, তা গোটা বিশ্বের কাছে একটি বার্তা হয়ে গেছে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান আক্রান্ত হলে জনগণ শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত তার পাশে থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইরানি জাতি একটি শরীরের মতো। কারো হাত যদি কাটা যায়, পুরো শরীর তা অনুভব করে। এই জাতির প্রতিরোধের শক্তি কোনো বাহ্যিক শক্তির দ্বারা দমন করা যাবে না।’
শেষবার্তাটি ছিল সবচেয়ে জোরালো
‘যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করো বা আবার সেই পাগলামি দেখাও, আমরা ইসরাইলকে এমনভাবে গুঁড়িয়ে দেব যে তেল আবিব এক ভৌতিক নগরীতে পরিণত হবে। তোমাদের প্রযুক্তি, তোমাদের সমর্থক, কেউই তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না।’
এই সতর্কবার্তা শুধু ইসরাইল নয়, গোটা বিশ্বকেই যেন জানিয়ে দিলো, ইরান আর পেছনে ফেরার পথে নেই। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার এই নতুন পর্যায়ে তেহরান এখন আর আত্মরক্ষার ভূমিকা নয়, বরং প্রতিরোধ ও পাল্টা হামলার কৌশলে এগোচ্ছে। আর তেল আবিবের আকাশে হয়তো সেই প্রতিশোধের ছায়াই ঘনিয়ে আসছে।