এরিস, প্লুটো এবং বামন গ্রহ
প্রধান গ্রহের বাইরেও ট্রান্স-নেপচুনিয়ান বস্তু নামে ছোট গ্রহগুলোর আলাদা একটা অঞ্চল রয়েছে। আমাদের পরিচিত কাইপার বেষ্টনীর মূল উপাদান হিসেবে এই বামন গ্রহগুলোই থাকে। কাইপার বেষ্টনীও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সৌরজগৎ সৃষ্টি হওয়ার শুরুর দিকে অর্থাৎ বিকাশের সময়কার ঘটনা।
বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের সম্মিলিত টানে অভ্যন্তরীণ সৌরজগৎ থেকে নির্গত গ্রহ-খণ্ড-এর একত্রিত রূপ এই বেষ্টনী। এরিস ও প্লুটো—দুটোই ট্রান্স-নেপচুনিয়ান বস্তু। সৌরজগতের যাথাক্রমে নবম ও দশম বৃহত্তম বস্তু এরা।
এরিসের ব্যাস ২,৩২৫ কিলোমিটার (১,৪৪৫ মাইল) এবং প্লুটোর ব্যাস ২,৩২০ কিলোমিটার (১,৪৪০ মাইল)।
১৯৩০ সালে প্লুটোকে সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
২০০৫ সালে এরিস আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীদের নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হলো—গ্রহের নির্দিষ্ট সংজ্ঞার্থে পরিবর্তন আনা চাই। ফলে ২০০৬ এবং ২০০৮ সালে বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এরিস ও প্লুটোর গ্রহের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদের নতুন পরিচয় হয় ‘বামন গ্রহ’।
মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী বৃহত্তম গ্রহাণু ‘সেরেস’-কেও একই পরিচয় দেওয়া হয়। ২০০২ এবং ২০০৭ সালে আবিষ্কৃত আরো বেশ কয়েকটি ট্রান্স-নেপচুনিয়ান বস্তুকে বামন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। যেমন- হাউমিয়া, মেকমেক, অর্কাস, কোয়ার, সেডনা প্রভৃতি। এসব গ্রহাণু, বামন গ্রহের অধিকাংশ নামই পৌরাণিক চরিত্রের নাম থেকে নেওয়া।
বামন গ্রহগুলোকে প্রধান গ্রহগুলোর কিশোর সন্তান বলা যেতে পারে।
বড় গ্রহগুলোর ক্ষুদ্র সংস্করণে নিজেদের একটা স্বতন্ত্র জগৎ গড়ে নিয়েছে বামন গ্রহগুলো।
পরিমণ্ডল
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রহগুলো তাদের নিজস্ব উপাদানে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। নির্দিষ্ট আকৃতি লাভ করেছে। একটি গ্রহ যত কঠিনে গড়া—তার মহাকর্ষ তত শক্তিশালী। গঠন ও ঘূর্ণনের ওপর নির্ভর করে প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার ব্যাসের চেয়ে বড় প্রধান ও বামন গ্রহ—উভয়ের জন্যই এটি প্রযোজ্য। প্রধান গ্রহগুলো তার প্রতিবেশী বস্তু দূরে সরে গেলে তা হটিয়ে দেয় বা শুষে নিয়ে চারপাশ পরিষ্কার রাখে। অন্যদিকে বামনগ্রহ ঠিক বিপরীত কাজ করে। এরা কক্ষপথে কখনো নিজেদের আধিপত্য দেখায় না। দেখাতে পারে না।