কুখ্যাত এপস্টেইনের নথিতে ট্রাম্পের নাম রয়েছে: আটর্নি জেনারেলই তাঁকে জানিয়েছেন

কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তসংক্রান্ত নথিপত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম থাকার কথা আগেই তাঁকে জানিয়েছিলেন তাঁর অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে গতকাল বুধবার এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে।
শিশুদের যৌন নিপীড়ন এবং নারী ও শিশু পাচারের অভিযোগে মার্কিন ধনকুবের এপস্টেইনকে ২০০৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতির মধ্যেই ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগার থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। যদিও এপস্টেইনের মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এপস্টেইন কোনো গ্রাহক তালিকা রাখতেন বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করতেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বো হয়েছে যে এপস্টেইনকে কারাগারে হত্যা করা হয়নি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ তদন্ত নিয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
এরপরই এপস্টেইন–কাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে ঝড় উঠেছে। গতকাল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাসে জেফরি এপস্টেইন মামলার পর্যালোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন যে তথাকথিত ‘এপস্টেইন ফাইলসে’ ট্রাম্পের নাম রয়েছে।
গতকাল ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, চলতি বছরের মে মাসে জেফরি এপস্টেইন মামলার পর্যালোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন যে তথাকথিত ‘এপস্টেইন ফাইলসে’ ট্রাম্পের নাম রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সূত্রের বরাতে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে কোন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের নাম এসেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা ওই প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সবার আগে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। তাদের খবরে বলা হয়, পাম বন্ডি ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্লেঞ্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ওই নথিতে তিনিসহ বহু মানুষের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য থাকার কথা বলেছেন। তবে কর্মকর্তারা এসব তথ্যকে ‘অযাচাইকৃত গুজব’ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
এটা স্বাভাবিক যে কোনো অপরাধ তদন্তের সময় তদন্তকারীরা বিভিন্ন সূত্র অনুসরণ করতে গিয়ে অনেক সময় এমন লোকজন সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করেন, যাঁদের নাম অপরাধকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন তালিকায়ও থাকে না।
‘না, না। তিনি (পাম বন্ডি) শুধু আমাদের খুব সংক্ষিপ্ত একটি ব্রিফিং দিয়েছেন, আর যেসব বিষয় তাঁরা দেখেছেন, সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কেই মূলত বলেছেন।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
এ মাসের শুরুর দিকে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এপস্টেইনের ফাইলে তাঁর নাম থাকার বিষয়ে বন্ডি তাঁকে কিছু বলেছিলেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘না, না। তিনি শুধু আমাদের খুব সংক্ষিপ্ত একটি ব্রিফিং দিয়েছেন, আর যেসব বিষয় তাঁরা দেখেছেন, সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কেই মূলত বলেছেন।’
হোয়াইট হাউসের জনসংযোগ পরিচালক স্টিভেন চিয়ুং সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোকে ‘ভুয়া খবর’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, অসভ্য আচরণের জন্য জেফরি এপস্টেইনকে নিজের ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে ট্রাম্পের সঙ্গে জেফরি এপস্টেইনের সুসম্পর্ক ব্যাপক আলোচিত ছিল। ট্রাম্প একবার তাঁকে ‘চমৎকার মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে ট্রাম্পের সঙ্গে জেফরি এপস্টেইনের সুসম্পর্ক ব্যাপক আলোচিত ছিল। ট্রাম্প একবার তাঁকে ‘চমৎকার মানুষ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঝগড়া হওয়ার পর তিনি ১৫ বছর এপস্টেইনের সঙ্গে কথা বলেননি।
এপস্টেইন কেলেঙ্কারি ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোকে উসকে দিচ্ছে
গণমাধ্যমে এপস্টেইন মামলাসংক্রান্ত নথিতে ট্রাম্পের নাম থাকার খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর এ–সম্পর্কিত আরও তথ্য প্রকাশের চাপ বেড়ে গেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফ গতকাল বলেন, পাম বন্ডি ও এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেলকে সিনেট বিচারিক কমিটির সামনে ডেকে পাঠানো উচিত।
‘আমাদের এখনই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে বন্ডি ও প্যাটেলকে জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে আনতে হবে।’
অ্যাডাম শিফ, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে শিফ লিখেছেন, ‘আমাদের এখনই এই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে বন্ডি ও প্যাটেলকে জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে আনতে হবে।’
ট্রাম্পের ওপর এপস্টেইন–সম্পর্কিত মামলার তদন্তের সব তথ্য প্রকাশ করতে চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে তাঁর ‘মেগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সমর্থকেরা এটা চাইছেন।

পাম বন্ডি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স
সমর্থকদের আশা ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি ষড়যন্ত্রের সত্য প্রকাশ নিশ্চিত করবেন, যেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধে জড়িত ছিলেন।
এখন ট্রাম্পের অনেক কট্টর সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও এফবিআইয়ের তদন্তে হতাশা প্রকাশ করছেন।
কারাগারে এপস্টেইনের মৃত্যু নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও এফবিআই বলেছে যে তিনি আত্মহত্যাই করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণও তাঁদের হাতে নেই।
তদন্তে আরও বলা হয়, জনসাধারণের জন্য অতিরিক্ত তথ্য প্রকাশ ‘উপযুক্ত বা যৌক্তিক নয়’।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরি তদন্তের হাতে লেখা বিবরণের অনুলিপি প্রকাশের জন্য বিচার বিভাগের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
পাম বন্ডি বলেছেন, তদন্তকারীরা যে হাজার হাজার ভিডিও উদ্ধার করেছেন, সেগুলো প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কারণ সেগুলোয় শিশু নিপীড়নমূলক উপাদান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক গতকাল জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরি তদন্তের হাতে লেখা বিবরণের অনুলিপি প্রকাশের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
চাপের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন গ্র্যান্ড জুরির হাতে লেখা বিবরণের অনুলিপি প্রকাশ করার আবেদন করেছিল।
ফ্লোরিডার ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ রবিন রোজেনবার্গ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর হাত বাঁধা। কারণ, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে সমর্থকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে যে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কোনো বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ নয়।