কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জানাবে কখন ঘুম ভাঙবে আগ্নেয়গিরির
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় দেড় হাজার সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে, যারা যেকোনো সময় অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮৫টি বড় অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে। পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণের বাইরে আছে। সেই সংকট মোকাবিলায় ২০১৯ সাল থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালে জার্মানিতে একটি এআই টুলের মাধ্যমে বিশ্বের সব আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণের কৌশল তৈরি করা হয়। সাধারণভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অনুমান বা পূর্বাভাস করা কঠিন। ভূমিকম্প কিংবা অগ্ন্যুৎপাতের মতো ঘটনা আগে থেকেই অনুমান করার প্রযুক্তি নিয়ে অনেক বছর ধরে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি মার্কিন বিজ্ঞানীরা নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর একটি সরঞ্জাম তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে ৯৫টি নির্ভুলতার সঙ্গে অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরি মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স সক্রিয় বা ঘুম থেকে জেগে উঠছে বলে বিজ্ঞানীরা নতুন সরঞ্জামের মাধ্যমে জানার সুযোগ পেয়েছেন। নতুন কৌশলের মাধ্যমে বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ কখন ঘটবে, এমন দিন আগে থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করতে সিসমিক সিগন্যাল বিশ্লেষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে অবস্থিত মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স সম্প্রতি সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ভালোভাবে জরুরি অবস্থান মোকাবিলার জন্য আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ খুঁজে বের করার জন্য একটি মেশিন লার্নিং টুল তৈরি করেছেন। নতুন সিস্টেমটি আগ্নেয়গিরিটির অবস্থা বিশ্লেষণ করে প্রাক্-বিস্ফোরণ ও বিস্ফোরণের সময়কাল সম্পর্কে জানাতে পারে।
ফ্রন্টিয়ার্স ইন আর্থ সায়েন্স জার্নালে আগ্নেয়গিরির পূর্বাভাস নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য ব্যবহার করে মেশিন লার্নিং টুল প্রযুক্তি কমপক্ষে তিন দিন আগে ভবিষ্যদ্বাণী করে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের কথা জানায়। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম সিসমিক নেটওয়ার্ক গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই অঞ্চলে প্রায় ৩৫০টি ভূমিকম্প শনাক্ত করেছে, যা আগ্নেয়গিরি জাগ্রত হওয়ার লক্ষণ বলা যায়। এই মাসের শুরুর দিকে বিশেষজ্ঞরা ৮ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতার আগ্নেয়গিরির চারপাশে ৩৮টি ভূমিকম্প রেকর্ড করেন। ভূমিকম্পের কারণে প্রায় ৪.৬ মাইল ভূ–অভ্যন্তরে আঘাতের নমুনা পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা একটি নতুন মেশিন লার্নিং টুল ব্যবহার করে ১২টি মাত্রা শনাক্ত করেন, যা আগ্নেয়গিরির একটি টাইমলাইন তৈরি করে। সেই প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে আগ্নেয়গিরি কতটা সক্রিয় তা জানা যায়।
সর্বশেষ ১৯৮০–এর দশকে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ৫৭ জন মানুষ নিহত হয়। ২০০৪ সালে একবার মাউন্ট সেন্ট হেলেন্সের আংশিক সক্রিয় হয়ে অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টি করেছিল। তখন ১০ হাজার ফুট ওপরে ছাই ও বাষ্পের মেঘ গঠন করতে দেখা যায়।