International

গোপনে ইসরাইলে অস্ত্র রফতানি করছে ভারত

প্রায় আট মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় চলছে ইসরাইলের গণহত্যামূলক নির্বিচার হামলা। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নির্মূলের এই অভিযানের মাঝে ভারতের কাছ থেকে রকেট ও বিস্ফোরক পেয়েছে ইসরাইল। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

গত ১৫ মে ভোরে স্পেনের কার্তাহেনা বন্দরের উপকূলে মালবাহী জাহাজ বোরকাম এসে পৌঁছায়। বন্দর থেকে অল্প দূরে সমুদ্রে অবস্থানরত এই জাহাজের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করে স্পেনের জনগণ। তাদের দাবি, এই জাহাজে করে ইসরাইলের জন্য অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে এই ‘সন্দেহজনক’ জাহাজ পরিদর্শন করার আহ্বান জানায়। তবে স্পেন সরকার কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেয়ার আগেই স্পেনের বন্দরে থামার পরিকল্পনা বাতিল করে সেøাভেনিয়ার বন্দর কোপারের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায় বোরকাম নামের জাহাজটি। এতে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

আল জাজিরার হাতে কিছু নথি এসেছে, যা থেকে জানা গেছে এই জাহাজটিতে ভারত থেকে নিয়ে আসা বিস্ফোরক উপকরণ বোঝাই করা ছিল এবং এর শেষ গন্তব্য ছিল ইসরাইলি বন্দর আশদোদ, যা গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। মেরিন ট্র্যাকিং সাইটের তথ্য থেকে জানা গেছে, জাহাজটি ২ এপ্রিল চেন্নাই থেকে ছেড়ে আফ্রিকার পাশ দিয়ে ঘুরে গেছে। লোহিত সাগরে হুতিদের সম্ভাব্য হামলা এড়াতে এ বিকল্প পথে যায় জাহাজটি। এসব নথি অনানুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ করেছে সলিডারিটি নেটওয়ার্ক এগেইন্সট দ্য প্যালেস্টিনিয়ান অকুপেশান (রেসকপ)। নথি থেকে জানা গেছে, বোরকাম জাহাজে ২০ টন রকেট ইঞ্জিন, সাড়ে ১২ টন বিস্ফোরক-যুক্ত রকেট, দেড় হাজার কেজি বিস্ফোরক এবং ৭৪০ কেজি চার্জ ও কামানের প্রপেলান্ট বোঝাই করা হয়েছিল। গোপনীয়তা সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব কর্মী, উপদেষ্টা বা অন্যান্য ব্যক্তিরা যেন ‘কোনো পরিস্থিতিতে’ আইএমআই সিস্টেমস অথবা ইসরাইলের নাম উল্লেখ না করে। ইসরাইলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান আইএমআই সিস্টেমসকে কিনে নেয়। জাহাজটির বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে জার্মান প্রতিষ্ঠান এমএলবি ম্যানফ্রেড লতারজুং বেফ্রাখতুং। প্রতিষ্ঠানটি আল জাজিরাকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘জাহাজে এমন কোনো অস্ত্র বা মাল বোঝাই করা হয়নি যেটার গন্তব্য ইসরাইল।’

ভারত ছেড়ে আসা দ্বিতীয় একটি জাহাজ ২১ মে কার্তাহেনা বন্দরে এসে পৌঁছালেও নোঙর করার অনুমতি পায়নি। স্পেনের পত্রিকা এল পাইস জানায়, মারিয়েন দানিকা নামের জাহাজটি চেন্নাই ছেড়ে এসেছিল এবং এটি ২৭ টন বিস্ফোরক নিয়ে ইসরাইলি বন্দর হাইফার উদ্দেশে যাত্রা করছিল। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন, ইসরাইলের জন্য সামরিক পণ্য বহনকারী জাহাজটিকে স্পেনের বন্দরে ভিড়ার অনুমত দেয়া হয়নি। এসব ঘটনা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভারত গোপনে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি করছে, যা দেশটির ‘সামরিক উদ্যোগ নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের’ পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে এ ধরনের লেনদেন সম্ভব হয়ে থাকতে পারে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপরি) গবেষক জেইন হুসেন আল জাজিরাকে বলেন, ‘যাচাই করার মতো তথ্যের অভাবে এ ধরনের লেনদেন আদৌ ঘটেছে কী না, তা নিশ্চিত করে বলা খুবই কঠিন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে ইসরাইল ও ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, তাই ভারতীয় অস্ত্র বা উপকরণ ইসরাইলের হাতে এসে পৌঁছানোর এবং তা গাজায় ব্যবহার অসম্ভব কিছু নয়।’

মেইড ইন ইন্ডিয়া
৬ জুন নুসেইরাত আশ্রয়শিবিরে ইসরাইলি বোমাহামলার পর ফিলিস্তিনি কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখানো হয়। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষে পরিষ্কারভাবে একটি লেবেল দেখা যায়, যেখানে লেখা ছিল, ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া (ভারতে নির্মিত)’। জেইন হুসেন জানান, এই ভিডিওটি আরও ভালো করে যাচাই করা প্রয়োজন। তবে তিনি জানান, এ বিষয়টি সর্বজনবিদিত যে ইসরাইল-ভারত ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে একে অপরকে সহযোগিতা করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button