চাঁদের অন্যদিক কি সত্যিই অন্ধকার
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শিশু ভোলানাথ’ বইয়ের ‘বুড়ী’ কবিতায় লিখেছেন, ‘এক যে ছিল চাঁদের কোণায়/ চরকা-কাটা বুড়ী/ পুরাণে তার বয়স লেখে/ সাত–শ হাজার কুড়ি। সাদা সুতোয় জাল বোনে সে/ হয় না বুনন সারা/ পণ ছিল তার ধরবে জালে/ লক্ষ কোটি তারা।’ সেই চরকা-কাটা বুড়ী চাঁদের কোণে কী করে, তা নিয়ে অনেক গল্পও প্রচলিত আছে। পৃথিবী থেকে শুধু চাঁদের একদিক দেখা যায়। ফলে চাঁদের অন্যদিকে কী আছে, তা জানার সুযোগ কম।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রশাসক বিল নেলসন চাঁদের অন্যদিক সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে বলেন, ‘চীন চাঁদের অন্যদিকে একটি ল্যান্ডার যান স্থাপন করছে। ওই দিকটি সব সময় অন্ধকারে থাকে। আমাদের সেখানে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা জানি না চাঁদের অন্য পাশে কী আছে।’ তবে বিল নেলসনের তথ্য অসত্য বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাই মার্কিন কংগ্রেসের সামনে ভুল তথ্য দিয়ে রীতিমতো প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিনি।
প্রচলিত ধারণা আছে চাঁদের অন্যদিক অন্ধকার। তবে মার্কিন বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের অন্যদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। চাঁদের যে অংশ আমরা পৃথিবী থেকে দেখার সুযোগ পাই না, সেই অংশেও আলো আছে। চাঁদের অন্ধকার এলাকা দক্ষিণ মেরুতে। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, সেখানে বরফের আস্তরণ আছে। সেই দক্ষিণ মেরুর হিমশীতল গর্ত ছায়ায় আবৃত। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের প্রায় এক মাস সময় লাগে। চাঁদের অক্ষের ওপর একটি পূর্ণ ঘূর্ণনের জন্যও প্রায় একই সময় লাগে। এই কাকতালীয় ঘটনার কারণেই আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের একই দিক দেখতে পাই।
পৃথিবী থেকে কোনো মহাকাশযান চাঁদের অন্যদিকে গেলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে চীন চাঁদ থেকে প্রায় ৪০ হাজার মাইল দূরে মহাকাশে যোগাযোগের জন্য রিলে স্যাটেলাইট স্থাপন করে এ সমস্যার সমাধান করেছে। সে বছরই চীন চ্যাঙই-৪ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের বিপরীত দিকে অবতরণকারী প্রথম দেশ হিসেবে নিজের নাম লেখায়।