Trending

চিনি উৎপাদনে আখের বিকল্প হতে পারতো যে ফসল

বাংলাদেশে যতটুকু চিনি উৎপাদন করা হয় তার পুরোটাই তৈরি হয় আখ থেকে। যদিও দেশে চালু থাকা নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হয়, তা বাংলাদেশের বার্ষিক চাহিদার পাঁচ শতাংশেরও কম।

কিন্তু গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই চিত্র পরিবর্তন করা সম্ভব আখের পাশাপাশি নতুন ফসল সুগারবিট থেকে চিনি তৈরি করে।

বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা দেশের মাটিতে সফলভাবে সুগারবিট উৎপাদন করেছেন। এই ফসলের উৎপাদন সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে তারা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে সুগারবিট থেকে আখের চেয়ে কম সময়ে চিনি উৎপাদন করা সম্ভব।

তবে সুগারবিট চাষের পরীক্ষামূলক প্রকল্প সফল হওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে চাষের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বাংলাদেশে শেষ পযর্ন্ত সুগারবিট চাষ ও সুগারবিট দিয়ে চিনি তৈরির কার্যক্রম আলোর মুখ দেখেনি।

বিশ্বের মোট উৎপাদিত চিনির ২০ শতাংশ সুগারবিট থেকে আসে
ছবির ক্যাপশান, বিশ্বের মোট উৎপাদিত চিনির ২০ শতাংশ সুগারবিট থেকে আসে

সুগারবিট কী?

সুগারবিট অনেকটা মিষ্টি আলু জাতীয় একটি উদ্ভিদ, যেটির মূলে উচ্চ মাত্রায় সুক্রোজ থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশেই সুগারবিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে সাদা চিনি উৎপাদন করা হয়।

সাদা চিনির পাশাপাশি গুড় ও লাল চিনিও তৈরি হয়ে থাকে সুগারবিট থেকে।

সুগারবিটের মূলকে কুচি কুচি করে কেটে এটিকে পানির সাথে মিশিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জাল দিলে এর ভেতরে থাকা চিনি নির্গত হয়ে পানির সাথে মিশে যায়। তারপর সেই পানিকে সিদ্ধ করলে এক পর্যায়ে দানাদার চিনি পাওয়া যায়।

সুগারবিট সাধারণত শীত প্রধান দেশের ফসল হলেও নাতিশীতোষ্ণ এলাকাতেও এটি হয়ে থাকে।

গবেষকরা বলছেন, আখ উৎপাদন করতে এক বছর সময় লাগলেও সুগারবিট শীতের পাঁচ মাসেই উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি আঁখের সাথে একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবেও সুগারবিট উৎপাদন করা সম্ভব।

আখের তুলনায় সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনে কিছুটা বেশি খরচ হয়। আখের ক্ষেত্রে ফসলের রস নিয়ে সেটিকে তাপ দিয়ে চিনি উৎপাদন করা হয়। তাপ দেয়ার ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে আখের বাকি অংশই সাধারণত ব্যবহার করা হয়।

আর সুগারবিটের ক্ষেত্রে বিটকে ছোট করে কেটে সেটিতে পানি মিশিয়ে তাপ দিয়ে চিনি আলাদা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য আলাদা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়।

বিশ্বের মোট উৎপাদিত চিনির ৮০ ভাগই আসে আখ থেকে। সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন করে ব্রাজিল আর ভারত।

বাংলাদেশে সুগারবিট চাষ

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১০-১১ থেকে প্রায় আট বছর বাংলাদেশে সুগারবিট উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই করে। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত চিনি কলের জমিতে আখ চাষীদের সুগারবিট চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এই গবেষণার সাথে শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন কৃষি গবেষক সোহরাব হোসেন, যিনি বর্তমানে ঠাকুরগাওঁয়ের ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

মি. হোসেন বলছিলেন, “প্রায় আট বছর তিন ধাপে গবেষণা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, বাংলাদেশে সুগারবিট উৎপাদন করা সম্ভব। উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি দক্ষিণের লবণাক্ত পানির অঞ্চলেও সুগারবিট চাষ করেছি।”

দেশে ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২টি চিনি কল এলাকায় এক হাজারের বেশি আখ চাষীকে সুগারবিট উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় পাইলট প্রকল্পের অধীনে।

এই প্রশিক্ষণের পুরোটাই ছিল গবেষণা প্রকল্পের অংশ, তাই এ সময় আখ চাষীদের জমিতে সুগারবিট চাষ না করে চিনি কলের নিজস্ব জমিতে এই গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণার সাথে জড়িত থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, জমিতে ফলন এবং চিনি উৎপাদনের হার – দুই হিসেবেই আখের চেয়ে বেশি লাভজনক সুগারবিট।

“এক একর জমিতে ৩০ থেকে ৪০ টন সুগারবিট উৎপাদন করা সম্ভব, যেখানে এক একর জমিতে বাংলাদেশে ২০-২৫ টন আখ উৎপাদন করাই কঠিন হয়ে পড়ে,” বলছিলেন কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন।

“আখের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায় যে, কারও জমিতে অনেক ফলন হয় আবার কারও জমিতে খুব কম ফলন হয়। কিন্তু সুগারবিট প্রায় সব জমিতেই একই ধরণের ফলন হয়।”

এছাড়া সুগারবিটে আখের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ চিনি থাকে। একশো কেজি আখ থেকে যেখানে সর্বোচ্চ সাত কেজি চিনি উৎপাদন করা সম্ভব, একই পরিমাণ সুগারবিট থেকে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ সেখানে ১২ থেকে ১৩ কেজি হয়ে থাকে।

সোহরাব হোসেন বলছিলেন, উৎপাদনশীল জাতের আখের অভাব, সময়ের আগে বা পরে আখ কাটা, চিনি কলে পৌঁছানোর আগে আখ শুকিয়ে যাওয়া, কারখানার ভুলত্রুটি – এরকম নানা কারণে বাংলাদেশে যে পরিমাণ আখ উৎপাদন হতে পারে, সেটা তা হয় না।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দুই ধরনের সুগারবিটের জাতও উদ্ভাবন করে যেগুলো বাংলাদেশের লবণাক্ত মাটিতে সহজে, কম খরচে চাষ করা যায়।

সুগারবিট

কৃষকরা যা বলছেন

বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় চিনি কলে পরীক্ষামূলকভাবে সুগারবিট চাষ করা হলেও কৃষকরা নিজে থেকে সুগারবিট চাষ করেননি। চাষের ক্ষেত্রে বীজ দেয়া থেকে শুরু করে চাষ পরবর্তী সার্বিক সহায়তাও সবসময় ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে।

আর বাংলাদেশে এই ফসলের বাজার না থাকায় এর নির্ধারিত বাজারমূল্যও নেই। তবে কয়েকজন কৃষক নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা পোষণ করেন যে ফসল সময়মত বিক্রি করা গেলে সুগারবিট চাষ বেশ লাভজনক হতে পারে।

ঠাকুরগাঁওয়ের একজন আখ চাষী রফিকুল হোসেন বলছিলেন যে সুগারবিট চাষে কম সময় লাগা এবং অন্য ফসলের সাথে একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা সম্ভব হওয়ায় এর চাষ বেশ লাভজনক হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলছিলেন, “এক বিঘা জমিতে চাষ করতে ১৪-১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়, বেশি সেচও লাগে না। এই খরচে এখান থেকে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব।”

ঠাকুরগাঁও ছাড়াও গাইবান্ধা, পাবনা, সাতক্ষীরার মতো যেসব অঞ্চলে কৃষকদের সুগারবিট চাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, তাদের অধিকাংশই সুগারবিট চাষ চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন বলে জানা যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d