চীনের নতুন যুদ্ধকৌশলে হুমকিতে সাগরতলের গুরুত্বপূর্ণ কেব্ল, সতর্ক পাহারায় তাইওয়ান

তাইওয়ানের কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন জুয়ান চুং-চিং একটি জাহাজ নিয়ে তাইওয়ান প্রণালিতে টহল দিচ্ছেন। সমুদ্রের তলদেশে থাকা সাবমেরিন কেব্লগুলোর দিকে নজর রাখছেন তিনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চীনের নতুন ‘গ্রে-জোন যুদ্ধকৌশলের’ আওতায় কেব্লগুলো নিশানা করা হতে পারে। স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানের যোগাযোগব্যবস্থার জন্য কেব্লগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
ক্যাপ্টেন জুয়ান যে জাহাজটি নিয়ে টহল দিচ্ছেন, সেটির ওজন ১০০ টন। ওই জাহাজে কয়েকটি জলকামান এবং একটি স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে। সেগুলো ‘টিপি-থ্রি’ নামে পরিচিত ওই সাবমেরিন কেব্লের দিকে তাক করা থাকে। চলতি বছর ইচ্ছাকৃতভাবে এ কেব্ল কেটে ফেলার দায়ে এক চীনা ক্যাপ্টেন দোষী সাব্যস্ত হন। এরপরই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসে।
টিপি-থ্রি হলো তাইওয়ানকে দেশীয় ও বৈশ্বিক ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করা ২৪টি সাবমেরিন কেব্লের একটি। জুয়ান বলেন, চীনের ‘গ্রে-জোন যুদ্ধকৌশল’ মোকাবিলা করার অংশ হিসেবে এখন এ ধরনের টহল অভিযানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। চীনের এ কৌশলের উদ্দেশ্য হলো সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে অন্যভাবে তাইওয়ানের সম্পদের ক্ষতি করা।
গত ২৮ আগস্ট রয়টার্স প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যম হিসেবে তাইওয়ান কোস্টগার্ডের টহলগুলোর একটিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। জুয়ান বলেন, তাদের অনুপ্রবেশ তাইওয়ান সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে টিপি-থ্রি কেব্ল অকেজো হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জুয়ান তাঁর টহল জাহাজ নিয়ে চীন পরিচালিত ‘হং তাই ৫৮’ নামের জাহাজকে অনুসরণ করেন। পরে সেটিকে তদন্তের জন্য আটক করেন। জুয়ান বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় টহল বাড়িয়েছি। কোনো নৌযান যেন বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয়, সেদিকে নজরে রাখছি।’
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সাগরের তলদেশে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাইওয়ান নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে।
তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, চলতি বছর চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নৌযান ব্যবহার করে পানির নিচে দুটি নাশকতা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছে উত্তর তাইওয়ানে। এ ব্যাপারে জানতে চীনের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে চীন বলেছিল, সাগরের নিচে কেব্ল কেটে ফেলার ঘটনায় চীনের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ নিয়ে তাইওয়ান বাড়াবাড়ি করছে। সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার আগেই তারা অভিযোগ করছে। বেইজিং তাইওয়ানকে তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড মনে করে এবং গুরুত্বপূর্ণ এ জলপথের মালিকানা দাবি করে। তবে তাইপে চীনের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
২৪ ঘণ্টার টহল
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সাগরের তলদেশে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাইওয়ান নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। টিপি–থ্রির কাছে তাইওয়ানের কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো ২৪ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে।
তাইওয়ানের কোস্টগার্ড বলেছে, একটি সতর্কতা ব্যবস্থার আওতায় তারা টিপি–থ্রি থেকে এক কিলোমিটারের দূরে থাকা জাহাজ শনাক্ত করতে পারে। পাশাপাশি রাডার স্টেশনে কয়েকজন অপারেটর সন্দেহজনক জাহাজ চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। এমন নৌযান শনাক্ত হলে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। এতে কাজ না হলে কোস্টগার্ড জাহাজ পাঠিয়ে তাদের সতর্ক করে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপমহাসচিব লিন ফেই-ফান রয়টার্সকে বলেন, ‘এই সমস্যার মুখোমুখি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে তাইওয়ান শীর্ষে রয়েছে। আমরা চীনের খুব কাছাকাছি। আর ঘনবসতিপূর্ণ অনেক সাবমেরিন কেব্ল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।’
তাইওয়ানের কোস্টগার্ড বলেছে, একটি সতর্কতা ব্যবস্থার আওতায় তারা টিপি–থ্রি থেকে এক কিলোমিটারের দূরে থাকা জাহাজ শনাক্ত করতে পারে। পাশাপাশি, রাডার স্টেশনে কয়েকজন অপারেটর সন্দেহজনক জাহাজ চিহ্নিত করতে কাজ করছেন।
কোস্টগার্ডের নজরদারির তালিকায় সবচেয়ে ওপরের দিকে রয়েছে চীন-সংশ্লিষ্ট ৯৬টি জাহাজ। সেগুলোকে তাইওয়ান কালোতালিকাভুক্ত করেছে। কর ফাঁকি আর বিধিনিষেধ এড়াতে এসব জাহাজের অনেকগুলো তৃতীয় দেশের নামে নিবন্ধন করা।
এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, চীন-সংশ্লিষ্ট আরও প্রায় ৪০০ নৌযানকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রেখেছে তাইওয়ান। এর মধ্যে এমন কিছু পণ্যবাহী জাহাজ আছে, যেগুলোকে যুদ্ধজাহাজে রূপান্তর করা সম্ভব।