চীন-মার্কিন মহাকাশ প্রতিযোগিতায় অনিশ্চয়তার ছায়া আর্টেমিস প্রোগ্রামে
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বহু প্রত্যাশিত আর্টেমিস চন্দ্র অভিযানের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর মানুষ আবার চাঁদে নামবে—এমনটাই আশা ছিল। তবে অভিযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাসা আর্টেমিস ২ এবং আর্টেমিস ৩ মিশনের সময়সূচি পিছিয়ে দিয়েছে।
আর্টেমিস ২ মিশন, যা চাঁদের চারপাশ ঘুরে আসার পরিকল্পনা নিয়ে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এটা ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে পুনর্নির্ধারিত হয়েছে। আর চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করার কথা ছিল আর্টেমিস ৩ অভিযানে, যা এখন ২০২৬ সালের শেষ থেকে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হতে পারে। নাসা জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে এই বিলম্ব অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
২০২২ সালে সফল অভিযাত্রীহীন আর্টেমিস ১ মিশন চলাকালীন ওরিয়ন মহাকাশযানের তাপ ঢালে সমস্যা ধরা পড়ে। নভোযানের অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে তাপ ঢাল কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়। নাসার উপপ্রশাসক পাম মেলরয় বলেছেন, মহাকাশযানের পুনঃপ্রবেশের সময় গতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা জরুরি। সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতেই পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
মহাকাশ অনুসন্ধানে নাসার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী এখন চীন। বেইজিং ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা ২০৩০ সালের আগেই মহাকাশচারীসহ একটি মিশনে চাঁদে যাবে। নতুন রকেট ও চন্দ্র ল্যান্ডার নিয়ে চীন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আর্টেমিস প্রোগ্রামে দেরি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চলতি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবেন। তার প্রশাসন মহাকাশ প্রকল্পগুলো নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ব্যয়বহুল প্রকল্প নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা আগেও শোনা গেছে। ফলে আর্টেমিস প্রোগ্রাম পুনর্মূল্যায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিকল্প হিসেবে, স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেটকে আর্টেমিস মিশনের সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। যদিও নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে অনিশ্চয়তার ছায়া এর ভবিষ্যৎকে ঘিরে রেখেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তই হয়তো প্রোগ্রামটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
নাসার আর্টেমিস মিশন মানবজাতির চাঁদে ফেরার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে এর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে। চাঁদের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে নাসা কতটা দ্রুত এসব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।