জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সমুদ্রের ভূমিকা: গবেষণায় উঠে এল গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া
পৃথিবীর কার্বন চক্রে সমুদ্রের তলদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়েছে নতুন এক গবেষণায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘সর্পশন’ এবং ‘মলিকিউলার ট্রান্সফরমেশন’ নামক দুটি প্রক্রিয়া সমুদ্রের তলদেশে কার্বন সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এই প্রক্রিয়াগুলো কার্বনকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে, যা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ম্যানচেস্টার এবং লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘ন্যাচার জিওসায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, সমুদ্রের তলদেশে মিনারেলের সঙ্গে কার্বনের সংযোগ (সর্পশন) এবং ক্ষুদ্র-অস্থিতিশীল অণুগুলোকে বড় ও স্থিতিশীল অণুতে রূপান্তর (মলিকিউলার ট্রান্সফরমেশন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত থাকে।
গবেষণায় একটি উন্নত মডেল ব্যবহার করা হয়েছে, যা বাস্তব ডেটার সঙ্গে মিল রেখে দেখিয়েছে, সমুদ্রের কার্বন সংরক্ষণ পূর্বের ধারণার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি কার্যকর।
গবেষণার মডেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে কার্বন সংরক্ষণের কার্যকারিতা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। গবেষণার প্রধান ড. পেইমান বাবাখানি জানিয়েছেন, এআই পরিবেশগত জটিল প্রক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণে সহায়তা করেছে।
গবেষণায় উঠে আসা এই প্রক্রিয়াগুলো কার্বনকে ভেঙে পড়ে পরিবেশে মিশে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং গভীর স্তরে তা সংরক্ষণে সহায়তা করে। এই সংরক্ষিত কার্বন সময়ের সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে পারে, যা বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রবেশ প্রতিহত করে।
গবেষণার এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন পথ খুলে দিতে পারে। সমুদ্রের কার্বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য ভবিষ্যতে ‘ওশান ফার্টিলাইজেশন’ এর মতো কৌশলগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।
সমুদ্রের প্রাকৃতিক কার্বন চক্র সম্পর্কে এই গবেষণা নতুন দিশা দেখিয়েছে। এটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং কার্বন নির্গমন কমানোর কৌশলগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।