জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা নিয়ে গবেষকদের সতর্কতা
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ে গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও ‘খরা’র একটি সুস্পষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে, তবে ‘মহাখরা’ নামে পরিচিত দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ খরার এখনো কোনো সর্বসম্মত সংজ্ঞা তৈরি হয়নি। ১৯৯৮ সালে কনি উডহাউস এবং জোনাথন ওভারপেক তাদের গবেষণাপত্র ‘টু থাউজেন্ড ইয়ারস অব ড্রাট ভেরিয়েবিলিটি ইন দ্য সেন্ট্রাল ইউনাইটেড স্টেটস’-এ এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী খরার সময়কাল উল্লেখ করে এই সমস্যা তুলে ধরেন।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার ভয়াবহ দাবানলের জন্য বিশেষ ধরনের খরাকেই দায়ী করেছেন গবেষকরা। তাদের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতি কেবল শুরু। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে এমন আরও দাবানল দেখা দিতে পারে। ভূবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মহাখরার ঝুঁকি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পাচ্ছে। এতে শুধু ভূমি নয়, প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনযাত্রায়। আগামী এক দশকে এই নেতিবাচক পরিবর্তনগুলোর প্রভাব সক্রিয় থাকবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।
সুইজারল্যান্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর ফরেস্ট, স্নো অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপ রিসার্চ’-এর গবেষক দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন লিয়ানজি চেন, জানিয়েছেন যে মহাখরার পাশাপাশি মহাদাবানলের আশঙ্কাও রয়েছে। এতে সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
এর ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘন ঘন দাবানল সৃষ্টি হবে, যা ব্যাপক প্রাণহানি ও ফসলহানি ঘটাবে। এমনকি খাদ্যের অভাবে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে পারে।
গত তিন দশক ধরে খরার চিহ্ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় বিশ্বজুড়ে প্রকৃতির এই বিপর্যয় মানব সভ্যতার জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই অশনিসংকেত কেবল ভবিষ্যতের নয়, বর্তমানের সমস্যা। বিশ্বনেতাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, নতুবা মহাখরা এবং মহাদাবানল বিশ্বজুড়ে মানবজীবনে স্থায়ী বিপর্যয় ডেকে আনবে।