Bangladesh

জাতীয় পার্টিই হচ্ছে বিরোধী দল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬২টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। এদের কারও কারও বিরোধী দলের নেতা হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তা হচ্ছে না। একাদশ সংসদের বিরোধী দল হচ্ছে জাতীয় পার্টিই। ১১টি আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও সে দলটিই বসতে যাচ্ছেন দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দলের আসনে।

তবে স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের অধিকাংশই বিরোধী দলে বসতে রাজি নন। তারা সরকারি দলের সঙ্গেই থাকতে চান। তাই জাতীয় পার্টিই ফের বিরোধী দলের মর্যাদা পাচ্ছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা কে হবেন সে বিষয়ে সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত জাপা এখনও স্পিকারকে জানায়নি। দলটি তাদের সিদ্ধান্ত স্পিকারকে জানালে ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরুর আগেই বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা ও হুইপদের বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পাওয়ায় বিরোধী দলগুলোর মোট আসন ১৪টি। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে দুজন এমপি পাবে জাপা। তখন বিরোধীদের আসন হবে ১৬টি। স্বতন্ত্রদের চেয়ে জাতীয় পার্টি কম আসনে জয়ী হওয়ায় স্বতন্ত্র এমপিদের গ্রুপ গঠন করে বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার সুযোগ ছিল।

তবে একাধিক স্বতন্ত্র এমপি জানান, তারা বিরোধী দলের এমপি হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নেননি। দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় দলীয় প্রধানের পরামর্শেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র এমপি হলেও তারা এখনও আওয়ামী লীগের কমিটিতে বিভিন্ন পদে রয়েছেন। তাই তারা বিরোধী দলের আসনে বসতে আগ্রহী নন। কারণ বিরোধী দলে গেলে স্থানীয় রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হতে পারে। এতে আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সমস্যা হবে। স্বতন্ত্র ৬২ জন এমপির মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুই স্বতন্ত্র এমপি জোট গঠন করে বিরোধী দল হওয়ার আভাস দিলেও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় তারাও জোট গঠনের বিষয়ে আর সামনে অগ্রসর হননি।

এ বিষয়ে বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি পঙ্কজ নাথ জানান, বিরোধী দলে নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চান তিনি। তার মতে স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও দলের অনুমোদিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তাই সরকারের সঙ্গে থেকেই সংসদে ভূমিকা রাখতে চান। শেরপুর-১ আসনে টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদে দুবারের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আতিউর রহমান আতিককে হারিয়ে স্বতন্ত্র এমপি হয়েছেন শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ছানুয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করলেও বিরোধী দলে বসার জন্য এমপি হইনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে সংসদে দায়িত্ব পালন করতে চাই। ময়মনসিংহ-৮ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মাহমুদ হাসান সুমন জানান তিনিও বিরোধী দলে বসতে আগ্রহী নন।

সরকারের সঙ্গে থাকতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাপার প্রার্থী। তাই বিরোধী দলের সঙ্গে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকেই উন্নয়নকাজ করতে চাই।

হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া বলেন, স্বতন্ত্র জোটের বিষয়ে আগ্রহী নই। কারণ স্বতন্ত্র এমপি হলেও আমি আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নই। তাই সংসদে বিরোধী দলের জোটে আমি থাকতে চাই না।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকার গঠনে ন্যূনতম ১৫১ আসনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে কয়টি আসন থাকতে হবে সংবিধান ও সংসদ কার্যপ্রণালি বিধিতে তার কোনো উল্লেখ নেই। তবে কার্যপ্রণালি বিধিতে বিরোধী দলের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি স্পিকারের একক এখতিয়ারের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২ (১) (ট) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসংঘের নেতা।’

সে হিসেবে বিরোধী দলের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি স্পিকারের একক এখতিয়ারের বিষয়। তাই স্বতন্ত্র এমপিরা যেহেতু জোট গঠন করে বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি এবং তাদের আগ্রহ না থাকায় শেষ পর্যন্ত জাপাই বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের আগেই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ হবে।

এদিকে জাপা সূত্র জানায়, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অথবা মুজিবুল হক চুন্নু বিরোধী দলীয় উপনেতা হতে পারেন। জাপা সংসদীয় দল এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত স্পিকারকে জানালে সংসদ সচিবালয় থেকে তাদের পদমর্যাদা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, স্বতন্ত্ররা সংখ্যায় বেশি হলেও কোনো দল নয়। তাই কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী দ্বিতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হিসেবে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হবে।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংসদ নেতা নির্বাচিত হলেও ওই সংসদে কোনো বিরোধী দল বা বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন না। আর চতুর্থ সংসদে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা আ স ম আবদুর রব সংসদের অন্য দলগুলোকে নিয়ে কম্বাইন্ড অপোজিশন পার্টিস (কপ) বা সম্মিলিত বিরোধী দল গঠন করেন। তখন তাদের দখলে ছিল ১৯টি আসন। কপ প্রথমে সংসদীয় গ্রুপের মর্যাদা লাভ করলেও বিরোধী দলের মর্যাদা পায়নি। পরে আরও ১৪ জনসহ মোট ৩৩ জন সংসদ সদস্য আ স ম আবদুর রবকে নেতা মেনে নিয়ে স্পিকারের কাছে আবেদন পেশ করলে স্পিকার তাকে বিরোধী দলের নেতার স্বীকৃতি দেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button