Trending

ডলারের সংশ্লিষ্টতা নেই, তবু বাড়ছে পণ্যের দাম

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু ডলারের সংশ্লিষ্টতা নেই এমন পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত চার পণ্য—দেশি পেঁয়াজ, দেশি রসুন, আলু ও মোটা চালের দাম তিন বছরের ব্যবধানে ২০ থেকে ২২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ বড় আর্থিক চাপে পড়েছে।

খাদ্যতালিকা কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্তরা। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক দশকের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দেশে উৎপাদিত পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।  

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানীকৃত পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

কিন্তু দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, বাজার মনিটরিংয়ে ঘাটতি ও বিপণন ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে।

২০২১ সালের নভেম্বর এবং গতকাল শনিবারের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিন বছরে আলুর দাম কেজিতে ১২০ থেকে ১৫০ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ থেকে ১১৮ শতাংশ দাম বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুনের দাম কেজিতে ১৮৭ থেকে ২২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়।

মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৯ শতাংশ বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি দেশের বাজারে আলু রেকর্ড দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় উঠে ছিল। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আমদানি শুরু হওয়ায় দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরেই রয়েছে আলু।

বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো সরকার আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও দেশি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং ফার্মের ডিমের ডজন বেঁধে দেয় ১৪৪ টাকায়।

যদিও নির্ধারিত দরের চেয়ে এখনো বেশি দামে আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা কমে প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা হয়েছে।

রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা ও বাড্ডার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর বাড্ডার পাইকারি ও খুচরা আলু, পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১০ বছরে পণ্যের দাম যা বেড়েছে, তার ৮০ শতাংশই বেড়েছে গত তিন বছরে। সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন আমাদের আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। কিন্তু লাভের পরিমাণ একই আছে। বিনিয়োগের তুলনায় লাভ কমে যাওয়ায় অনেকে ব্যবসা ছেড়েও দিয়েছেন।’

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘ভারতের বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের দামের একটা সমন্বয় রয়েছে। কারণ ভারত থেকেই পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে হয়। শুধু দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে তো আমাদের চাহিদা পূরণ হয় না। যখন ভারতে পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন দেশের বাজারেও প্রভাব পড়ে। আর বিদেশিটার দাম বাড়লে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যায়। আবার কমলে দুটোরই কমে।’

আব্দুল মাজেদ বলেন, দেড় বছরের ব্যবধানে ৮৫ টাকার ডলার ১২০ টাকার ওপরে উঠে গেছে। যেকোনো দেশের বাণিজ্যের মেরুদণ্ড ডলার। ডলারের দাম বাড়ায় চাহিদামতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। ফলে বাজারে পণ্যের দাম কমছে না। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন দাম কমতে শুরু করবে বলেও জানান তিনি। 

রামপুরা বাজারের ক্রেতা মোহাম্মদ আপেল বলেন, কয়েক বছর ধরে সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েছেই। কিছু কিছু পণ্য আছে গত দুই বছরে দাম অন্তত সাত-আটবার করে বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কিছু দেশীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। বাজার তদারকিতে সরকারি সংস্থাগুলোর কোনো নজরদারি না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী।

মোহাম্মদ আপেল বলেন, ‘উচ্চ দামের কারণে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। খরচ সামাল দিতে না পাড়ায় বাধ্য হয়ে আমার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের একটি প্রাইভেট টিউশনি বাদ দিতে হয়েছে।’  

জানতে চাইলে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে উৎপাদিত পণ্য পেঁয়াজ ও রসুন। এগুলো আবার আমদানিও করতে হয়। যখন আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়, তখন দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে যায়। তাই দেশের পণ্য উৎপাদন হতে হবে প্রতিযোগিতামূলক। যদি পণ্য উৎপাদন ব্যয়বহুল হয় তাহলে ভোক্তা উপকৃত হবে না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব পণ্যেরই আমদানির সুযোগ থাকা উচিত এবং কোনো পণ্যেরই নিয়ন্ত্রক বা অশুল্ক বাধা থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। শুল্ক অতিরিক্ত থাকলে বা অশুল্ক বাধা থাকলে দেশীয় উৎপাদনে নানা রকমের দুর্বলতা দেখা দেয়।

গোলাম রহমান বলেন, দেশে এখন ঊচ্চ মুদ্রাস্ফীতিও বিরাজ করছে। মুদ্রাস্ফীতি কিন্তু পণ্যের সরবরাহ, জোগান ও চাহিদার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে না। যখন মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশ থাকে তখন সব পণ্যেরই মূল্য ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়। এখন এটিই ঘটছে। তবে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d