Hot

ডিজিটালাইজেশনের সুফল নিয়ে অসাধু চক্রে জিম্মি ই-কমার্স

ডিজিটালাইজেশনের সুফল নিয়ে দেশে করোনাকালে ফুলেফেঁপে ওঠে ই-কমার্স খাতটি। লকডাউনে ঘরে বসেই শুরু হয় কেনাকাটা। এরপর থেকে ক্রমেই ই-কমার্সের ব্যাপ্তি বেড়েছে। কর্মব্যস্ত নগরজীবনে অনেকটাই স্বস্তি এনে দিয়েছে কেনাকাটার এ অনলাইন মাধ্যম। রেস্টুরেন্টের খাবার, মুদি বাজার, মাছ, মাংস, কাপড়-চোপড়, ওষুধ, ইলেকট্রনিকস পণ্য, কোরবানির গরু- সবই কেনা যাচ্ছে ঘরে বসে। আর ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতাকে পুঁজি করে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে অসাধু চক্র। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ই-কমার্স পেজ খুলে নানাভাবে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আসল পণ্যের ছবি দেখিয়ে গছিয়ে দিচ্ছে নকল পণ্য। ৭০ থেকে ৮০% মূল্যছাড়ের লোভনীয় অফার দিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে।

এ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা মিলছে না। এতে সম্ভাবনাময় ই-কমার্সের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। বিপদে পড়ছেন সৎ উদ্যোক্তারা। প্রতারণার শিকার ভোক্তারা জানান, ফেসবুক স্ক্রল করতে গেলে এখন শত শত বিজ্ঞাপন সামনে আসে। ফ্যাক্টরি থেকে বিক্রির কথা বলে ২৪ হাজার টাকার বাইসাইকেল ৫০০০ টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। কিনতে চাইলে অগ্রিম কিছু টাকা পাঠাতে বলে। টাকা পাঠানোর পর ওই পেজ থেকে এবং যে নম্বরে টাকা পাঠানো হয়- সব জায়গা থেকে ব্লক করে দেয়। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, সফটওয়্যার, জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নামমাত্র মূল্যে দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়ে পরে আর কিছুই দিচ্ছে না। অল্পকিছু টাকার জন্য অধিকাংশ মানুষই এ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হন না। আবার ৪ হাজার ৫০০ টাকার থ্রিপিস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রির অফার দিয়ে এমন পণ্য পাঠাচ্ছে যা বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

কিছু পণ্য ডেলিভারি চার্জ গচ্চা দিয়ে তাৎক্ষণিক রিটার্ন করা যায়। কিছু পণ্য রিটার্ন করা যায় না। ব্যক্তিগত ভুয়া প্রোফাইল থেকেও প্রতারণা করা হচ্ছে। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব বলছে, যে কোনো উৎসবে অনলাইনে বেচাকেনা বাড়ে। সেই সুযোগটা নেয় প্রতারকরা। গত ঈদে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ পণ্য ডেলিভারি করেন অনলাইন ব্যবসায়ীরা। তখন প্রতারণাও বাড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ঈদের আগে শুধু মার্চ মাসে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারিত হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে প্রায় ৮০০ মানুষ অভিযোগ দেয়। তবে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ফেসবুক পেজগুলোর অস্তিত্ব কিংবা ঠিকানা না পাওয়ায় অধিকাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয় না। শফিক আহমেদ নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে ফেমাস ওয়ার্ল্ড নামের একটি পেজ থেকে মাত্র ২৯৯ টাকায় হইচই, নেটফ্লিক্স, চরকি, প্রাইম ভিডিও, জিফাইভ, এইচবিওসহ জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন বিক্রির বিজ্ঞাপন আসছে। তাদের টাকা পাঠানোর পর কোনো সাবস্ক্রিপশনই দেয়নি।

খিলক্ষেতের বাসিন্দা জামান বলেন, অনেক দিন ধরে একটি বাইসাইকেল কিনতে চাচ্ছিলাম। ফেসবুকে ‘ড্রিম বাইসাইকেল শপ’ নামে একটি পেজে দেখলাম ৬৫% মূল্যছাড়ে মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় অনেক সুন্দর সুন্দর সাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তবে তাদের শর্ত হোম ডেলিভারি নিতে ৩১০ টাকা অগ্রিম পাঠাতে হবে। অল্প টাকা চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়ে ৩১০ টাকা পাঠাই। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছি না। পরে দেখলাম এমন শত শত পেজ থেকে একই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ লাখ লাখ মানুষ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব প্রতারক। গতকাল ফেসবুকের মার্কেট প্লেসে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৩ হাজার ৫০০ টাকায় আইফোন সিক্স প্লাস, ২৫০০০ টাকায় সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেল, ১৫০০ টাকায় আইপ্যাড, ৩৯৯০ টাকায় অত্যাধুনিক বিদেশি বাইসাইকেল, ২০ হাজার টাকায় দেড় টনের গ্রি এসি, ৩০০ টাকায় স্কেটিং সু, ১২০ টাকায় ব্লুটুথ হেডফোনসহ আকর্ষণীয় অসংখ্য পণ্য নামমাত্র মূল্যে বিক্রির বিজ্ঞাপন ঘুরছে।

এ ব্যাপারে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ই-কমার্সের জগৎটাই এমন। এখানে প্রতারক ছিল, এখনো আছে। এজন্য সবার আগে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। কোথাও একটা পণ্যের দাম কম দেখলেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া অনুচিত। দেখতে হবে ওই পণ্যটার বাজারমূল্য সত্যিই এত কম কিনা। কোনো কিছু অর্ডার করার আগে পেইজটির বয়স, রিভিউ ও পেমেন্ট সিস্টেম যাচাই করতে হবে। মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট বাদে লেনদেন করা যাবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকরা অনেক মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পেজটি বন্ধ করে দেয়। নতুন পেজ খোলে। মন্ত্রণালয় যদি একটা পেজ বন্ধ হওয়ার পর তার ঠিকানা সরবরাহ করতে পারত, তাহলে প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তিনি বলেন, প্রত্যেক উদ্যোক্তার ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ডিবিআইডি) নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এটা নিয়ে কাজ চলছে, পলিসি লেভেলে কিছু সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। এটা ফাংশনাল হলে এসব প্রতারণা কমে যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button