ডিম আসেনি, আলু কি আসবে
দাম কমানোর জন্য শুধু ‘আমদানির ঘোষণা’র অস্ত্রে এখন আর কাজ হচ্ছে না। কয়েক দফায় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ার দেড় মাস পার হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কয়েক দফা ‘ডিম আসছে’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন। একটি ডিমও আমদানি হয়নি, বাজারে দামও কমেনি। উল্টো বেড়েছে। এ অবস্থায় দামের লাগাম টানতে নতুন করে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তাই প্রশ্ন উঠেছে, আলু আমদানি হবে কি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বৈঠক করে খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা এবং প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দেয়। একই সময় দেশি পেঁয়াজের দামও ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু দাম বেঁধে দেওয়ার পর দেড় মাস অতিবাহিত হলে বাজারে এ দাম কার্যকর হয়নি।
তাই বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকরে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু দাম কমানোর সঙ্গে আরও যেসব বিষয় জড়িত, সেগুলোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
দেশে কখনো ডিম আমদানি হয়নি; বরং আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ডিম আমদানিতে শুল্ক-কর রয়েছে ৩৩ শতাংশের মতো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনি ও ভোজ্যতেলের শুল্ক কমানোর ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করলেও ডিমের শুল্ক কমানোর অনুরোধ করেনি।
ফলে আমদানির অনুমতি নিয়ে বাড়তি শুল্কের কারণে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম আমদানিতে সময় ক্ষেপণ করছে। আবার ডিম আমদানিতে যে শর্তারোপ করা হয়েছে, সেসব শর্ত পূরণ করাও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝক্কির বলে জানান ব্যবসায়ীরা। যেমন ডিম আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ডফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। তাই আমদানির অনুমতিপ্রাপ্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘লোকসানের ঝুঁকি নিয়েও ভারত থেকে ডিম আমদানির জন্য ব্যাংকে ঋণপত্র খুলেছি। কিছুদিনের মধ্যে এসব ডিম দেশে আসবে।’
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম থাকার কথা প্রতি ডজন (১২টি) ১৪৪ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে ডিমের ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আলুর দাম। প্রতি কেজি আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এ অবস্থায় আলুর দামের লাগাম টানতে গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষিপণ্য হিসেবে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
তাই আগ্রহী আমদানিকারকেরা অনুমতির জন্য আবেদন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। গত মঙ্গলবার ১৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৭৭টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত দুই দিনে প্রায় ৫০ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আমদানি উদ্যোগের পাশাপাশি হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রির উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তবে আমদানির অনুমতি দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেরি করে বলে আমদানিকারকদের অভিযোগ। এ বিষয়ে জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসকে ফোনে না পেয়ে খুদে বার্তা দেওয়া হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি।