Bangladesh

ঢাকা ওয়াসার গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন: শুধু পরামর্শক খরচ ১০৬ কোটি টাকা

আপত্তি দিয়ে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন * নানা শর্ত প্রতিপালনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ফেরত * এ ধরনের গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রয়োজনীয়তাই প্রশ্নের মুখে -ড. জাহিদ হোসেন

আন্তর্জাতিক মানের একটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করতে চায় ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু এটি তৈরিতে দুই প্যাকেজের আওতায় শুধু পরামর্শক খরচই চাওয়া হয়েছে ১০৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ খাতে পরামর্শকদের প্যাকেজ না রেখে কতজন কত মাসের জন্য কাজ করবেন, তা উল্লেখ করে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ‘ঢাকা ওয়াসার আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন’ প্রকল্পের জন্য এ ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়। এর ওপর ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নানা শর্ত প্রতিপালনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ফেরত দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

তবে ওয়াসার এ ধরনের গবেষণাকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি শনিবার যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় সেবার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটা গবেষণাকেন্দ্র হতে পারে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা যে ধরনের কাজ করে আর সেখানে কোন ধরনের গবেষণা হবে, সেটি আগে জানা দরকার। এরপরই পরামর্শক নিয়ে কথা বলা যাবে। তিনি আরও বলেন, যুগ যুগ বিশ্বব্যাপী পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, নিষ্কাশনসহ এ সংক্রান্ত কাজগুলো চলে আসছে। সেখানে নতুন করে কী ধরনের গবেষণা হবে, সেসব বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। সেই সঙ্গে ওয়াসার কাজে এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট কী কাজে আসবে, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্প প্রস্তাবে দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি ও যান্ত্রিকবিষয়ক প্রশিক্ষণ কিংবা গবেষণার জন্য একটি প্যাকেজে পরামর্শক খরচ ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। যেটি মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এছাড়া আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন পরামর্শক হিসাবে প্যাকেজ-২-এর খরচ ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ দুই প্যাকেজ মিলে পরামর্শক ব্যয় দাঁড়ায় ১০৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিইসি সভার সভাপতি ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান শনিবার বলেন, সভায় এত বেশি ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ ধরনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র তাদের কেন প্রয়োজন এবং কারা যুক্ত থাকবেন, সেসব জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে বলা হয়, যদি বিদেশি কোনো লিংক এর সঙ্গে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে, সেটি জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, শুধু ওয়াসার জন্য এ গবেষণা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র সীমাবদ্ধ না রাখতে বলা হয়েছে। ওয়াসার কর্মকর্তারা এখানে বেসিক ট্রেনিং নিলেও সরকারে যেসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থা একই ধরনের কাজ করে, তাদের এটির সঙ্গে যুক্ত করতে বলা হয়। এমনকি এটি পরিচালনা কমিটিতেও ওইসব সংস্থার প্রতিনিধি রাখা দরকার। যেমন: সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রভৃতি সংস্থা, যারা ওয়াসার মতোই কাজে যুক্ত আছে। এরকম নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে পিইসি সভায়। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৬৮ কোটি ৫৫ লাখ, ওয়াসার নিজস্ব অর্থ ৬০ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৫০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করার কথা। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মিরপুর এলাকায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব আছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) ঢাকা মহানগরবাসীর পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ করে। সংস্থাটি ৪১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২০ কোটি নগরবাসীর পানি এবং ২ শতাংশ এলাকায় পয়ঃসেবা দিচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা ৫টি পানি শোধনাগার, ৯০৬টি গভীর নলকূপ এবং ২টি পয়ঃশোধনাগারের মাধ্যমে পানি ও পয়ঃসেবা দিয়ে যাচ্ছে। নগরবাসীর পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন, পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঢাকা ওয়াসা দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু অবকাঠামোগত সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে শতভাগ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২০৩০ সালের মধ্যে সেবাভুক্ত এলাকায় সেবা দেওয়ার জন্য অবকাঠামো সম্প্রসারণের পাশাপাশি এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি অর্জনের জন্য সংস্থাটি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

পিইসি সভা সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৬০ কোটি টাকা ধরা হলেও কী পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে তা বলা হয়নি। এছাড়া এ ব্যয় প্রাক্কলনে জেলা প্রশাসন সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, সেটি নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। প্রস্তাবে ল্যান্ড ক্লিয়ারেন্স এবং ইউটিলিটিজ স্থাপন খাতে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে কী কী কাজ করা হবে, তা জানতে চাওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩৭ জন জনবলের প্রস্তাব আছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির কোনো সুপারিশ নেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পে সম্মানি খাতে ৩০ লাখ, ওভার টাইম খাতে ৫০ লাখ এবং জ্বালানি ও মেরামত খাতে ৯০ লাখ টাকার প্রস্তাব আছে। এছাড়া স্টেশনারি ও স্ট্যাম্প খাতে ৯০ লাখ এবং ট্রেনিং ওয়ার্কশপ খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকাও চাওয়া হয়। এসব ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে পিইসি সভায়। আলোচনা শেষে বিভিন্ন খাতের ব্যয় কমিয়ে আনার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button