তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাইলে মৃত্যুদণ্ড
তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষের কট্টর সমর্থকদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি বিচারিক নির্দেশিকায় যুক্ত করেছে চীন। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুতর মামলার ক্ষেত্রে এ শাস্তি প্রযোজ্য হবে। গতকাল শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এ তথ্য জানিয়েছে।
বেইজিং গণতান্ত্রিক তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখে। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের কথাও বলে আসছে বেইজিং। সম্প্রতি তাইপের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বেইজিং। এ ছাড়া দ্বীপটি ঘিরে বেশ কয়েকবার সামরিক মহড়াও করেছে চীন। তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাই চিং তে গত মাসে দায়িত্ব নেওয়ার সময় সর্বশেষ সামরিক মহড়া করে বেইজিং।
সিনহুয়া জানায়, শুক্রবার বেইজিংয়ের জারি করা নির্দেশিকায় দেশকে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্নতা উসকে দেওয়ার জন্য তাইওয়ানের স্বাধীনতার কট্টরপন্থী সমর্থকদের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার প্রচেষ্টায় যাঁরা মূল ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং রাষ্ট্র ও জনগণের মারাত্মক ক্ষতি করবেন, তাঁদের এ শাস্তি দেওয়া হবে।
নোটিশে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে যাঁরা ওকালতি করবেন, তাঁদের ১০ বছর থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
চীনের এ নির্দেশ জারির পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাইপে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরো তাইওয়ানে কোনো আইনি এখতিয়ার রাখে না বেইজিং। এ ছাড়া যে নিয়ম মানার জন্য বেইজিং নির্দেশ দিয়েছে, তা তাইওয়ানের জনগণের জন্য মানা বাধ্যতামূলক নয়।
তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, বেইজিং কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপের কথা বলেছে, তাতে তাইওয়ান প্রণালিজুড়ে জনগণের মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার উসকানি হিসেবে কাজ করবে। এ পদক্ষেপ বেইজিং ও তাইওয়ানের মধ্যে সম্পর্কের ইতিবাচক উন্নয়নের জন্য সহায়ক নয়।
সিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, বেইজিংয়ের নির্দেশনাটি মূলত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে বিভক্ত করে, এমন কর্মকাণ্ড চালাতে নির্দেশ দেওয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে।
এ নির্দেশ চীনের অংশ হিসেবে তাইওয়ানের আইনি অবস্থা পরিবর্তন করার প্রচেষ্টার লক্ষ্য থেকেও করা হয়েছে। শুক্রবার থেকেই এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পিপলস ডেইলি জানায়, শুক্রবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সান পিং এ নির্দেশিকার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ নির্দেশনার অর্থ অভিযুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর আইনি পদক্ষেপের ধারালো খড়্গ সব সময় উঁচুতে ঝুলবে। সান আরও বলেন, এ নিয়ম তাইওয়ানের সব জনগণকে লক্ষ্য করে জারি করা হয়নি। কেবল তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিয়ে ওকালতি করা অল্প কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীকে লক্ষ্য করে জারি করা হয়েছে।
গত ২০ মে তাইওয়ানের ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির সদস্য লাই ক্ষমতায় আসেন। তিনি তাইওয়ান নিয়ে তাঁর পূর্বসূরি সাই ইং ওয়েনের অবস্থানের পক্ষে অবিচল রয়েছেন। সাই ইং ওয়েন মনে করতেন, তাইওয়ান ইতিমধ্যে কার্যকরভাবে স্বাধীন, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণার প্রয়োজন নেই।
বেইজিং লাইকে বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাইপের সঙ্গে ২০১৬ সাল থেকে শীর্ষ স্তরের কোনো যোগাযোগ রাখেনি বেইজিং।
চীনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত তাইওয়ান প্রণালি যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানের নজরদারিতে রাখা হয়। গত মাসেই তাইওয়ান ঘিরে জয়েন্ট সোর্ড-২০২৪এ নামের একটি তিন দিনের মহড়া করেছে বেইজিং। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এ মহড়া ছিল দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ দখল করার ক্ষমতার একটি পরীক্ষা।