Trending

তৈরি পোশাকশিল্পে চ্যালেঞ্জ বাড়বে 

মানসম্মত কাজের পরিবেশ, স্বাধীনভাবে শ্রম সংগঠন করা ও যৌথ দর-কষাকষির ক্ষেত্রে দুর্বলতা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

মানবাধিকার ও পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যবাধকতার যে বিধান ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হয়েছে, তা কার্যকর হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানায় প্রভাব পড়বে।

তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, নতুন বিধানের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পোশাক রপ্তানিতে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনাও সৃষ্টি হতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁদের মতে, পোশাকের বাড়তি দাম নেওয়ার সুযোগ বাড়বে। যদিও ২০২৯ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিধানটি কার্যকর হবে। তাই এখনই রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

অবশ্য শ্রমিকনেতারা মনে করেন, মানসম্মত কাজের পরিবেশ, স্বাধীনভাবে শ্রম সংগঠন করা ও যৌথ দর-কষাকষির ক্ষেত্রে দুর্বলতা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ, এগুলো নতুন বিধানটির মূল বিষয়। 

গত বুধবার করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডিরেক্টিভ (সিএসডিডিডি) নামের নির্দেশনাটি পাস করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এতে পণ্য সরবরাহ ও বিপণনের সার্বিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে কোম্পানিগুলোর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।

২০২৭ সালে এমন ইইউ কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রথমবার বিধানটি কার্যকর হবে, যাদের ৫ হাজারের বেশি কর্মী ও বৈশ্বিক ১৫০ কোটি ইউরো বার্ষিক লেনদেন রয়েছে। পরের দুই বছরে তা কমে ১ হাজার কর্মী ও ৪৫ কোটি ইউরো বার্ষিক লেনদেনের কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

■ বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত দেশগুলো।

■ ২০২৯ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিধানটি কার্যকর হবে।

■ বিধানটি ইইউভুক্ত দেশের পাশাপাশি অন্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিধানটি এমন দিনে পাস হয়েছে, যেদিন বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পূর্তি হয়। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারের ওই ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন পোশাকশ্রমিক নিহত হন। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন বহু শ্রমিক। সেই ঘটনায় পোশাক কারখানার মালিকদের দোষী করা হলেও যেসব বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ দিয়েছিল, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা যায়নি। তবে ইইউর নতুন বিধানের কারণে প্রথমবারের মতো সরবরাহ ব্যবস্থায় কর্মপরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে তার দায় আমদানিকারক বা বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকেও নিতে হবে।

ইইউ বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার। মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত দেশগুলো। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। তার মধ্যে ইইউতে রপ্তানি হয় ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার। 

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে আজকের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল অবদান ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের। ইইউর নতুন বিধান কার্যকর হলে বাংলাদেশের পোশাক খাত বড় বিনিয়োগকারীনির্ভর হয়ে যাবে। তখন ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বিপদে পড়বে। কারণ, নতুন বিধান মানতে অনেক বিনিয়োগ লাগবে, যা এসব কারখানার পক্ষে করা কঠিন।

নতুন বিধানটি ইউরোপীয় কোম্পানির পাশাপাশি ওই সব দেশে ব্যবসা করা বাইরের কোম্পানিগুলোর ওপরও কার্যকর হবে। যদিও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বেশ এগিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২১৫টি কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে। এর বাইরে পাঁচ শতাধিক কারখানা পরিবেশবান্ধব হওয়ার পথে রয়েছে। 

নতুন বিধানের কারণে চ্যালেঞ্জ থাকলেও সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন শাশা গার্মেন্টেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যায্য চর্চা বন্ধ হবে। এতে করে কারখানামালিকেরা ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাকের বাড়তি দাম নিতে পারবেন।

চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা ডেনিম এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ইইউ যেসব বিধান আনতে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বে ব্যবসা পরিচালনায় মৌলিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ফলে এগুলো বাদ দিয়ে ব্যবসা করার অবকাশ নেই। এখন ক্রেতাদের পোশাকের ন্যায্যমূল্য দিতে আমাদের চাপ দিতে হবে।’

ইইউর নতুন বিধানের কারণে শ্রম অধিকারের উন্নতি ঘটবে বলে মনে করেন শ্রমিকনেতারা। তাঁরা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পণ্য সরবরাহকারী সব দেশেই বিধানটি কার্যকর হবে। ফলে ইইউর কোম্পানি যেখান থেকে পণ্য নেবে, সেখানেই শ্রম মান উন্নত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। রানা প্লাজা ধসের পর শ্রম অধিকারের কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও চর্চায় এখনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, ‘বিধানটি কীভাবে প্রয়োগ হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে আমাদের কিছু নতুন আইন করার প্রয়োজন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে খরচও বাড়বে। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান যাতে সেসব খরচের অংশীদার হয়, তার জন্য আমাদের মালিকদের কথা বলতে হবে। প্রয়োজনে আমরাও শ্রমিকস্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে মালিকদের সঙ্গে মাঠে নামব।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d