Bangladesh

থমকে গেছে পদ্মা পাড়ের জনজীবন: রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

পদ্মায় নতুন পানি। চারদিকে ঢেউ খেলছে। স্রোতটাও বেশ। হরিরামপুরের আন্ধারমানিক এলাকার নদী পাড়ে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। স্থায়ী রেস্তরাঁর পাশাপাশি অস্থায়ী দোকানের ছড়াছড়ি। স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন মিনি কক্সবাজার। এখানে ঢুকতেই চোখে পড়ে ব্যানারে রাসেলস ভাইপার নিয়ে সচেতনতামূলক নানা কথা লেখা। এই ব্যানার এলাকার অনেক স্থানেই দেখা মেলে। বিস্তৃত চর। চারিদিকে শুধু ফসলি জমি।

বিজ্ঞাপন মূল ভূখণ্ড থেকে নদীপথে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় নিয়ে যেতে হয় পদ্মার চরে। কৃষকদের ব্যস্ততা ফসল তোলাতে। মাঠে বর্গা চাষ করেন অধিকাংশই। চরজুড়ে দেখা মেলে ভুট্টা, বাদাম, তিলসহ ধানের চাষ। সাধারণ সময়েই কৃষি শ্রমিক মেলা দায়। তার ওপর হানা দিয়েছে সাপ আতঙ্ক। ফসল তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এলাকায় নীরবে আতঙ্ক  তৈরি করেছে সাপ। এই চরের অন্তত ছয়জন সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করেছেন। যেকোনো সাপ দেখলেই রাসেলস ভাইপার ভেবে মারছে মানুষ। 

গতকাল সরজমিন পদ্মার চরের নতুন হাট, নটাখোলা, ভগবানেরচর, ফাকের হাট, পাটগ্রাম, হাতিঘাটা, গঙ্গাদধি এলাকায় ঘুরে এসব তথ্য মেলে। এই চরগুলো মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার মধ্যে পড়েছে। চরের হাতিঘাটা এলাকায় লাউয়ের মাচা মেরামত করছিলেন মো. আলী নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, চরে কাজ করতে ভয় লাগে। সবসময় নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে হয়। কাজ না করলে ভাত পাবো না। তাই কাজ করি। চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার তার। তিন ছেলে মাঠে কাজ করাতে চান না। তিনি বলেন, এই সময়টা কাজের অভাব হয় না। এখন সাপের ভয়ে ছেলেরা কাজ করে না। জোর করতেও পারি না। একদিন কাজ করলে ৮০০ টাকা পাওয়া যায় কিন্তু করার কিছু নাই।

চরের পাটগ্রাম এলাকায় ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন কাইয়ুম ব্যাপারী। তিনি বলেন, ফসল উঠানোর সময় শ্রমিক পাই না। কী এক অবস্থায় পড়লাম, এদিকে বৃষ্টি কবে যে তলায় যায় সব। ৭০০/৮০০ টাকা শ্রমিকের রেট। ১২০০ টাকা দিয়েও লোক পাওয়া যায় না। অনেকে তো পাবনা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করছে।

জানা যায়, কেউ কেউ পাকা ধান কৃষি শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারেননি। তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম। একই এলাকার নীতিশ দাস বলেন, আমার বর্গা নেয়া জমি আট বিঘা। সাপ যখন খুবই ছড়িয়ে পড়ে তখন একদিন শ্রমিকরা সাপ দেখে ফিরে আসলো। এরপর আর কেউ যায় না। ৮০০ টাকা শ্রমিক ১২০০ টাকা করে দিয়েও পাই নাই। আমার প্রায় এক বিঘা জমির ধান শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারিনি। এরপর একদিন বাণ আসলো সব ধান নষ্ট হয়ে গেল।

মাঠে কাজ করার সময় সাপ দেখে দৌড়ে পালিয়েছিলেন ভগবানের চর এলাকার বাসিন্দা সবিরুল। তিনি কৃষি শ্রমিক। বলেন, ঈদের আগে আগে আমরা ছয়জন কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমাদের সঙ্গে থাকা এক ভাই সাপ সাপ বলে চিল্লায় ওঠে। আমি কাছে যেয়ে দেখি একটা সাপ ফোঁস ফোঁস করতেছে। পাশে দুটা বা তিনটা বাচ্চা ছিল। হাতের কাস্তে দিয়ে ভয় দেখিয়ে আমরা পালায় আসি। পরে কয়েকজন মিলে লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে গেলে বড় সাপটা মারি। কিন্তু বাচ্চাগুলোকে পাই নাই। অনেকেই বলতেছে এটা রাসেলস ভাইপার। এরপর মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখি। 

এই চরে নতুন পানির কারণে নিচু স্থানগুলোতে জমেছে অল্প পানি। ডোবাগুলো পানিতে ছুঁই ছুঁই। এলাকাবাসী জানান, এই সময়টায় প্রচুর মাছ ধরেন তারা। কিন্তু সাপের ভয়ে পানিতে নেমে মাছ ধরছেন না। নৌকা দিয়ে বরশি ও ছোট খেও দিয়ে মাছ যতোটুকু ওঠে। নটাখোলা এলাকার সাইদুল নামে এক বাসিন্দা বলেন, এই সময়ে আমরা সবার বাড়িতে মাছ খাওয়া হয়। শুধু তাই নয় মাছ বিক্রিও করি। কিন্তু এবার মাছ ধরছেন না অধিকাংশই। পাড়ে থেকে বরশি ফেললেও ভয় হয় কখন সাপ আসে। যারা নৌকায় যাচ্ছেন মাছ ধরতে তারাও পানিতে হাত দিচ্ছেন কম। কচুরিপানার ভেতরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এসব মূলত হাত দিয়ে ধরা হয়। কিন্তু এখন হাত দিয়ে ধরা হয় না বললেই চলে। 

পদ্মার চরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস। এই এলাকায় সাপের দংশনে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ যেমন মরেছে সেইসঙ্গে প্রতিদিন মারা হচ্ছে সাপ। যাদের অধিকাংশই রাসেলস ভাইপার নয়। গঙ্গাদধি এলাকায় ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে তিন ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন কানিজ ফাতেমা। তার স্বামী ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের বাড়িটি একেবারে নিম্নভূমিতে ফসলি জমির পাশে। তিনি বলেন, বাড়িতে সবসময় লাঠি রাখি কখন না কখন সাপ আসে। রাইতে ঘুম আসে না। একটা গরু আছে রাতে ডাকলেই ভয় লাগে। তিনি বাড়ির একটি ভাঙা অংশ দেখান। কোনো রকম পলিথিন ও বস্তা দিয়ে আটকে রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, সাপ আসলে রক্ষা নাই। অনায়াশেই এই ফাঁকা দিয়ে ঢুকে যাবে।

এই গ্রামে কয়েকটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। স্কুলে আসতে শিশুরা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে আসে। সাপের কারণে তাদের কষ্টটাও হয়েছে দ্বিগুণ। আগে শিক্ষার্থীরা ক্ষেত পেরিয়ে দূরত্ব কমিয়ে স্কুলে যেতো। এখন রাস্তায় হাঁটছে সবাই। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আলিম বলে, আমার বাড়ি থেকে স্কুল দেখা যায়। নিচে দিয়ে আসলে ২০ মিনিট লাগে। এখন রাস্তা দিয়ে আসতে এক ঘণ্টা লাগে।

গত শুক্রবার রাতে নতুন হাট এলাকার আনিসুল ইসলামের বাড়িতে একটি সাপ মারা হয়েছে। ঘরের সামনে টিউবওয়েল। বদনায় করে পানি নিয়ে বাড়ির পেছনে গিয়েছিলেন। ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হঠাৎ একটা শব্দ শুনলাম। মোবাইলের আলোটা ধরতেই দেখি পাতার ভেতরে পেঁচিয়ে আছে। আমি বদনা রেখে দৌড়ে বাড়িতে আসি। এরপর আরও দুইজনসহ সাপটা মারি। সাপ মেরে মাটিতে পুঁতে রাখেন তারা। তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি সাপটি রাসেলস ভাইপার কিনা।

এই চরেই গত ২১শে জুন সাপের দংশনে মারা যান হোসেন ব্যাপারী। তিনি ২০শে জুন মাঠে কাজ করছিলেন। গবাদি পশুর ঘাস কাটার সময় হঠাৎ পায়ে দংশন দেয় সাপ। প্রথমে তারা সাপের দংশনে কিনা বুঝতে পারেননি। এরপর সাপ পানিতে দেখে নিশ্চিত হন। তার সঙ্গে থাকা জামিল ব্যাপারী বলেন, তখন কী করবো না করবো বুঝে উঠতে পারতেছিলাম না। আমরা চিল্লানো শুরু করি। আশেপাশে কয়েকজন আসে। একজন গামছা ছিঁড়ে পায়ের গিরার উপর বাঁধে। এরপর আমরা ভাইরে নিয়া বাড়িতে যাই।

তখনও আমরা জানতাম না বিষাক্ত সাপ কিনা। ভাইও ভালোভাবে কথা বলছিল। তবে হাঁসফাঁস করতেছিল। এরপর একজন ওঝাকে ডেকে আনা হয়। তিনি আরও বলেন, ওঝা একটা গাছের শিকড় চাবাইতে বলেন আর মুখে ধরে রাখতে বলেন। চাবানোর পর দেখি ভাই কিছুটা আরাম পান। হঠাৎ তার গরম লাগা শুরু হয়। আমরা বাতাস করি। যেহেতু আরাম পাইলেন আমরা তখন ভয় পাই নাই আর। 

কিন্তু রাতে তিনি আবার অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি আরও বলেন, আমরা এক মৌলভি চাচারে ডাকি। চাচা আসার পর দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে বলেন, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাইতে। আমাদের হাসপাতালে যাইতে যাইতে আরও দুই ঘণ্টা লাগে। ভাই অস্থির হয়ে যায় প্রথমে এরপর নিস্তেজ হতে থাকে।

ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়ার পর তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে কী চিকিৎসা দেয়া হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারেননি। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সেখানে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন তার কিডনি ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর তিনি সেখানে মারা যান। এত প্রচারণার পরেও ওঝাদের কাছে যাচ্ছেন মানুষ। চরে বেশ কয়েকজন ওঝার বাস। তাদের বেশ বিশ্বাস করেন মানুষজন। চরে আশকর কবিরাজের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন, আল্লাহ চাইলে গাছের শিকড় দিয়ে সব বিষ দূর হয়। যদি মনে আল্লাহর ভয় থাকে। কথা আগানোর আগেই কিছু একটা বুঝে ফোনটা কেটে দিলেন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরে প্রায় চার থেকে পাঁচজন ওঝা রয়েছেন। তারা সাপে কাটা রোগী দেখেন। এ ছাড়াও টুকটাক ‘সেবা’ দেন আরও অন্তত ৫০ জন। পাটগ্রামে ফার্মেসি চালান আউয়ুব মাস্টার। তিনি বলেন, এখানে মানুষের সাধারণ জ্বর সর্দির চিকিৎসা দেয়া হয়। ফার্মেসিগুলো মূলত গবাদি পশু, হাঁস, মুরগি এসবের ওষুধ মেলে। এখানের মানুষ নিজের চিকিৎসার থেকে এসবের রোগ হলে বেশি আতঙ্কিত হন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকটা রোগী পেয়েছি যারা দংশন নিয়ে এসেছিলেন আমি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে এখন যারা কাটা নিয়ে আসছেন অনেকেই আতঙ্ক থেকে আসছেন। অনেক কিছু আছে যেগুলো দংশনে হালকা ক্ষত হয় বা ফুলে যায়। আমার ধারণা এগুলোর অধিকাংশই সাপে কাটা রোগী নন।

চরের এনজিওকর্মী শারমিন আক্তার বলেন, এলাকায় এখন সাপের আতঙ্ক বেশি। প্রতিদিনই শুনছি সাপ মারা হচ্ছে। আমার ধারণা সেগুলোর সব রাসেলস ভাইপার না। কিন্তু জীবন তো বাঁচাতে হবে তাই মারছে। এখন যত সাপ মারা হচ্ছে তা আগে মারা হতো না। আগে দেখতাম সাপ দেখলে তাড়িয়ে দেয়া হতো। এখন এগিয়ে গিয়ে মারা হচ্ছে। এতে প্রকৃতির একটা ক্ষতি তো ডেকে আনছি হয়তো। কিন্তু এই অসহায় মানুষগুলোর আসলে করার কিছু নাই। 

চরে একটা বদ্ধ জলাশয়ে নেট দিয়ে ঘিরে হাঁস পালন করেন মকবুল হোসেন। নয়াহাটের এই খামারি পাড়ে লাগিয়েছেন গরুকে খাওয়ার ঘাস ও পেঁপে গাছ। প্রায় ৩৫০ হাঁস আছে তার। তিনি বলেন, আমাদের কারবার পানি নিয়ে। পানিতে কিছু একটা নড়লেই মনে হয় সাপ। পানির পাড়ে ডিম দেয় অনেক হাঁস। এই ডিমগুলা নিতে গেলেই ভয় করে। খুব নজর করে ডিমগুলো খাঁচাতে তুলি। আর ইঁদুরের গর্ত দেখলেই নষ্ট করে দেই। কিন্তু ব্যাঙতো থাকেই আর পানিতে কখন সাপ আসে বলা যায় না। খুব ভয় নিয়ে কাজ করি। আর রাতে চেষ্টা করি না যাইতে।

চরে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালান মো. মিলন। তিনি বলেন, রাতে মাছ ধরা টেঁটা নিয়ে বের হই। অনেকেই বের হয়। এদিন রাতে কিছু একটার উপর পা পড়লো দেখলাম চেঁচায় উঠলো। লাইট দিয়ে দেখি একটা সাপ দৌড়ে পালাচ্ছে। কী সাপ ছিল জানি না। কিন্তু এরপর থেকে টেঁটা নিয়ে বের হই।
হরিরামপুর বাজারে জুতার দোকানে দেখা যায় গামবুট ঝুলছে। তবে ক্রেতা নেই বলে জানান দোকানদার সাইফুল ব্যাপারী। তিনি বলেন, বুটের সর্বনিম্ন দাম ৬০০ টাকা। কয়েক জোড়া বিক্রি হইছে কিন্তু তা খুবই কম। লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সাপের উপদ্রব সেইসঙ্গে মানুষের ভয়ও আছে। সচেতনতা সৃষ্টির কারণে আতঙ্ক কিছুটা কমেছে।

সাপে কাটলে চরাঞ্চলের মানুষ সাধারণত যান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে। এ ছাড়াও আসেন ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হরিরামপুরে। হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায় চারপাশে নীরবতা। অল্প ক’জন রোগী সেখানে। মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদা নাজনীন বলেন, কয়েক সপ্তাহ হলো এন্টিভেনম আনা হয়েছে। এরমধ্যে গত বুধবার সাপের দংশনের একজন রোগী এসেছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সম্ভবত মানিকগঞ্জে গেছেন। 
তিনি আরও বলেন, এন্টিভেনম থাকলেও আমাদের হাসপাতালে সাপের দংশনে রোগীর সার্বিক উন্নত তত্ত্বাবধানের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor