Bangladesh

দরিদ্রের অংশগ্রহণ বাড়ছে

সর্বজনীন পেনশনে ক্রমে দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। দরিদ্রদের জন্য করা সমতা স্কিমে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ প্রান্তিক মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিজীবীরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চাঁদা দিয়েছেন। তবে পেনশন কর্মসূচিতে তেমন আগ্রহ নেই মধ্য ও উচ্চবিত্তদের।  পেনশন  কর্তৃপক্ষের সম্প্রতি এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্নকারীদের ৭৬ শতাংশই দরিদ্র, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাস্তবায়নে আরও গতি আনার লক্ষ্যে নতুন করে বুধবার ৭টি ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। 
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এ পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৩ কোটি টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ। এই শ্রেণির মানুষের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম।

এই স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০৫ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩৩ কোটি ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধকারীদের ৭৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
উল্লেখ্য, সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পরপরই আবেদন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা এই চার স্কিম নিয়ে সরকার সর্বজনীন পেনশন চালু করে।

পরবর্তীসময়ে সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে এ স্কিম কার্যকর হয়েছে।
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর আট মাস পরে নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা এক লাখের বেশি হয়েছে। এরপর মে ও জুন মাসেও বিপুলসংখ্যক মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দিয়েছে। ফলে নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা দ্রুততম সময়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হয়ে গেছে। জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তবে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে যারা নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দিয়েছেন তাদের সিংহভাগ দরিদ্র্য মানুষ। গত ২৯ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৩৮ জন।

এর মধ্যে ৫৪ হাজার ৪৫৫ জন ছিলেন যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। গত দুই মাসে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নতুন করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৪ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৩ হাজার ৫০ জনের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত দুই মাসে নিবন্ধন সম্পন্নকারীদের ৮৫ শতাংশই দরিদ্র্য। সমতা স্কিমে নিবন্ধন দ্রুত বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, লোকাল প্রশাসনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলেই নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ছে।

মানুষ বুঝতে পারছে ৫০০ টাকা দিলে সরকার আরও ৫০০ টাকা দেবে, এতে ভবিষ্যৎ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মানুষ বুঝতে পারছে বলেই করছে। এদিকে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সবচেয়ে বেশি চাঁদা জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। তাদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে এরই মধ্যে চাঁদা জমা পড়েছে ৩৪ কোটি ৭৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। এই স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৭৯৩ জন। তবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবাসীদের কাছ থেকে এখনো আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। 
সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ॥ সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাস্তবায়নে আরও গতি আনার লক্ষ্যে ৭টি ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এ সাতটি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক পিএলসি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি। বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। ৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওসহ অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, পেনশন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৭টি ব্যাংক সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন স্কিমে জনগণকে নিবন্ধন কাজে সহায়তাসহ নিবন্ধনকারীর সাবস্ক্রিপশন গ্রহণ করবে। যেকোনো নিবন্ধনকারী ৭টি ব্যাংকের শাখার কাউন্টারে সাবস্ক্রিপশন জমা দিতে পারবেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো গ্রাহককে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের জন্য শাখা ব্যবস্থাপকরা সহায়তা প্রদান করবেন। এস ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাপ ব্যবহার করেও গ্রাহকরা রেজিস্ট্রেশন ও অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d