Trending

‘ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যাত্রা’: একটি নিবন্ধ


বই পোড়ানোর ইতিহাসের সাথে সাম্রাজ্য বিজয় এবং বিস্তারের গল্প ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ২১৩ খ্রিষ্টপূর্বে, চীনের প্রথম সম্রাট মানুষের ইতিহাসে প্রথম সরকার অনুমোদিত বই পোড়ানোর আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন শি হুয়ান চেয়েছিলেন ইতিহাস তাকে দিয়েই শুরু হবে, পূর্বপুরুষদের বাদ দিয়েই নিজেকে তিনি চীনের প্রথম সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বইপত্র ধ্বংস করা দরকার ছিল, কেননা তাতে তার আগের ইতিহাস লেখা। যখন তার চ্যান্সেলর লি শি, কিন প্রদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস বাদে সব বই পোড়ানোর ব্যাপারে প্রস্তাব রাখেন সম্রাট সম্মত হয়েছিলেন। এই বহ্নুৎসবের সময় সম্রাট শত শত কনফুসিয়ান পণ্ডিতদের জ্যান্ত পুঁতে মারেন বলেও ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। 

রোমান সম্রাট তার দীর্ঘ শাসনামলে গণনাতীত বই ধ্বংস করেছিলেন। প্রথম সম্রাট অগাস্টাস ভাবতেন, বইয়েরা মূলত ভবিষ্যৎবাণী আর নিয়তির কথা বলে। এ জন্যে তিনি বইবিরোধী ছিলেন। হেইগ এ বোসমেইজানের ‘বুক বার্নিং’ বইয়ের তথ্যমতে, তিনি দুই হাজারের অধিক বই ধোঁয়া আর ছাইয়ে পরিণত করেছিলেন। মুদ্রিত গ্রন্থের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতি, আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংস করবার ঘটনা। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ৩৩১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইজিপ্টের উত্তরাংশে এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এক শ বছরের মধ্যে অন্তত তিনবার এই গ্রন্থাগার পোড়ানো কথা বলা হয়। এখনকার সিরিয়া, পার্শিয়া, ইজিপ্ট, গ্রিস এবং ভারতের মতো নানা জাতি ও সংস্কৃতির পাঁচ লাখের বেশি বই, মুদ্রিত দলিল-দস্তাবেজ ছিল এই গ্রন্থাগারে। 

৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে আরব সেনাপতি আমর ইবনে আল-আস ইজিপ্ট ও আলেকজান্দ্রিয়া দখল করেন। তখনও একবার আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার ভস্মিভূত হওয়ার ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। প্রথম দিকের আরবদের বিজয়ের ইতিহাস বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ লিপিবদ্ধ করেছেন ইতিহাসবিদেরা, এদের মধ্যে ছিলেন আরব, কপ্ট ও বাইজেনটাইন ইতিহাসবিদেরা। আরবদের ইজিপ্ট বিজয়ের পাঁচ শতাব্দীর ইতিহাসে কোথাও আলেকজান্দ্রিয়া পোড়ানোর একটি তথ্যের উল্লেখও নেই। ১৩ শতকে আচমকা ইবনে আল-কিফতি ও আরো কয়েকজন আরব লেখকের লেখায় আমর কিভাবে প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির বই পোড়ান তার বিবরণ আসতে শুরু করে। তবে তাদের বর্ণনা ছিল কল্পনাশ্রায়ী ও অতিরঞ্জনের দোষে দুষ্ট, ফলে প্রবল সমালোচনার মুখেও পড়ে, উল্লেখ্য ১৮ শতকে ব্রিট্রিশ ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গিবন ও পরবর্তীর ইতিহাসবিদরা আমরের আলেকজান্দ্রিয়া পোড়ানোর ঘটনা ১২ শতকের বানোয়াট ইতিহাস বলে খারিজ করে দেন।  

তবে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, রোমান সাম্রাজ্য পতনের সময়ে, বই পোড়ানোর ব্যাপারটাতে ধর্ম বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল বলা হয়ে থাকে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইতালিয়ান ডোমিনিকান সংস্কারবাদী ধর্মপ্রচারক জিরোলামো সাভানারোলা মেডিচি পরিবারকে ফ্লোরেন্স নগরের বাইরে নিয়ে এসে নতুন সরকার গঠন করবার কাজে সাহায্য করেছিলেন। ‘দম্ভের বহ্নুৎসব’ হিসেবে ইতিহাসে কুখ্যাত ঘটনা সাভানারোলা দেখেছিলেন নিজের চোখে। অজস্র বই, ছবি, সোনার অলংকার, জামাকাপড়, চিত্রকর্ম—এককথায়, শহরের বাসভবনসমূহ থেকে তার সংগ্রহ করা দ্রব্যসামগ্রীর যা কিছুই আপত্তিকর মনে হয়েছে, সব ধ্বংসের খাতায় চলে গেছে। ক্যাথলিক চার্চ মধ্যযুগজুড়ে অসংখ্যবার বই পুড়িয়েছে,  প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পোপ নবম গ্রেগরি ইহুদি অধ্যাত্মবাদী বই লুপ্ত করবার আদেশ জারি করেন। ইহুদিদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ তালমুদসহ অনেক বই তখন পুড়িয়ে ফেলা হয়। বলা হয়, এসব গ্রন্থে ভুল আছে, যা মানবসভ্যতার জন্য ক্ষতিকর। জারিকৃত আদেশের কারণে ১২৪২ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ গাড়িভর্তি হাজার হাজার খণ্ডের মূল্যবান গ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলা হয় ফ্রান্সে। ভিন্ন ধর্মের বইপত্র ক্যাথলিক চার্চের প্রধান নিশানা ছিল। রোমান শাসক পঞ্চম চার্লস, বই নিষিদ্ধ এবং বিলুপ্ত করার এক ঐতিহাসিক চরিত্র। প্রটেস্ট্যানিজমের উদ্গাতা মার্টিন লুথারের বইও চার্লসের বিষনজরে পড়েছিল। পোপ দ্বাদশ জন, পোপ ষষ্ঠ আদ্রিয়ান, রাজা অষ্টম হেনরি—এই তিনজন ইতিহাসে মুদ্রিত গ্রন্থের বড় শত্রু। তাদের ভিন্নমত অসহ্য ছিল। মধ্যযুগজুড়ে প্রচুর সাহিত্য ও ধর্মের বই তারা ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন।


আধুনিক যুগেও স্বৈরশাসকেরা বইপত্রকে নিরাপদ ভাবেনি। ১৯৩৩ সালের মে মাসের ১০ তারিখ প্রকাশ্যে ২৫ হাজার ‘অ-জার্মান’ বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হিটলারের নাজি মতাদর্শের সৈনিকেরা এই মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়। বই বিলুপ্তির ইতিহাসে এই ঘটনাটি সংবেদনশীল বিশ্ব নাগরিকদের মধ্যে একধরনের বেদনা ও ক্রোধের সঞ্চার করে। এই ঘটনার ছবি ভিডিও এখনো পাওয়া যায়। 

মাও সে-তুং, কমিউনিস্ট মহান নেতা চীন দেশের, ষাট ও সত্তর  দশকের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় অসংখ্য ভিন্নমতের বই পোড়ানোর সাথে তার নামও জড়িয়ে যায়। চীনে এখনো বই নিষিদ্ধ করার ‘সংস্কৃতি’ বিদ্যমান। রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, আদিবাসী উইঘুর মুসলিম এথনিক মাইনোরিটির প্রচুর বই, দলিল বর্তমান চীন সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। জিনজিয়ান প্রদেশের ডিটেনশন ক্যাম্পে এখনো তাদের অবরুদ্ধ জীবন কাটাতে হচ্ছে, মিডিয়ায় প্রায়ই খবর আসে। 

একটি সিংহলি বৌদ্ধমতাবলম্বী সহিংস দল ১৯৮১ সালে শ্রীলঙ্কার জাফনা গণগ্রন্থাগারে লক্ষের কাছাকাছি বই বিনষ্ট করেছে। প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১—এই সময়কালে স্রেফ বর্ণবিদ্বেষজনিত কারণে সাউথ আফ্রিকান সরকার হাজার হাজার বই পুড়িয়ে দেয়। ১৯৯২ সালে সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদীরা বসনিয়ায় দুই মিলিয়ন বই পুড়িয়ে দেয়। টিম্বাকটু, মালিতে ২০১৩ সালে প্রাচীন পুঁথি ধ্বংস করে ইসলামিস্টরা। সিরিয়া আর ইরাকের ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসীরা ইরাকের ঐতিহাসিক মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, ২০১৫ সালের দিকে। 

জে কে রাউলিংয়ের হ্যারি পটার সিরিজ উইচক্র্যাফট প্রচারের দায়ে দীর্ঘদিন নজরবন্দী ছিল সরকারি কর্তৃপক্ষের। কুর্ট ভনেগার্ট প্রণীত ‘স্লটারহাউস ফাইভ’ এমনকি বিটলসের গানের রেকর্ডও আমেরিকান নানা প্রদেশে একাধিকবার নিষিদ্ধ ও লুপ্ত করার উদ্যোগের তালিকায় ছিল।  


বই লিপিবদ্ধ করে মতাদর্শ। যারা সেই মতাদর্শের সমর্থক নন, তাদের কাছে সেই বই চোখের বালি, পথের কাঁটা। অথচ বইয়ের পথের দাবি হয়ে ওঠার কথা, পথের কাঁটা নয়। কাগজ পৃথিবীর অন্যতম ভঙ্গুর পদার্থ, দাহ্য বস্তু। ফলে বইয়ের ওপর আক্রমণ ঘনিয়ে তোলা পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ রাজনৈতিক তৎপরতা। ধর্মের কারণে, রাজনীতির কারণে, যুদ্ধের কারণে বারবার আক্রান্ত হয়েছে বই। 

একাত্তর সালে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরে সারা দেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নারকীয় বর্বরতার পাশাপাশি পণ্ডিত মানুষজনের, বই সংগ্রাহকদের অসংখ্য বই, দুষ্প্রাপ্য পুঁথি, প্রাচীন দলিল নির্মমভাবে ধ্বংস করেছে। যেহেতু বই মতাদর্শ লিপিবদ্ধ করে এবং সেই মতাদর্শ যাদের পছন্দ নয়, তারা বইয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক পিটার গার্ডোসের এক স্বল্পালোচিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চরচ্চিত্রের কথাও এখানে উল্লেখ করা যায় । সাতাশি সালের ছবি—নাম হুপিং কফ; পটভূমি ১৯৫৬।  যখন খ্রুশ্চেভ আর আইজেনহাওয়ার মিলে বিশ্ব শাসন করছেন। একটি দশ বছরের ছেলে—তার পরিবার, স্কুল, স্কুলের বন্ধুরা, চারপাশের পৃথিবী, তার বাড়ন্ত শরীর নিয়ে উৎকণ্ঠা এবং বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে তার শহরের সহনাগরিকদের দুশ্চিন্তা— কারফিউ দেওয়া হলে সবাইকে ঘরের ভেতর থাকতে হয়। স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল বন্ধ হলে সকল শিশুই খুশি হয়। শ্রেণিকক্ষের অ্যাকুরিয়ামে নানা রঙের মাছ, ছেলেরা তাদের নানা রকম নাম দেয়। কিন্তু স্কুল বন্ধ হলে এসব মাছেদের যেহেতু নিয়মিত খাবার দেওয়া যাবে না, সে কারণেই প্রতিটা বেঞ্চিতে একেকটা মাছকে এনে রাখা হয়। বাচ্চারা নিষ্ঠুরভাবে মাছগুলোকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। মাছেরা বাতাসের অভাবে তড়পায়। যেন শহরের মানুষগুলোই—দুশ্চিন্তায়, উদ্বেগে রাতে ঘুমাতে না পারা মানুষগুলো। স্তালিন একটা রেজিম। খ্রুশ্চেভও তা-ই। পরেরজন আগেরজনের রচনাবলি নিষিদ্ধ করে দিলে পরিবারের মধ্যে স্তালিনের রচনাবলি পোড়ানোর ধুম পড়ে যায়। পূর্ব ইউরোপের যে দেশগুলো আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, সোভিয়েত ভাঙনের বাজনা বাজার পর তাদের মধ্যেই ইতিহাসের বেদনাবিধুর প্রসঙ্গ উঠে এল। লেনিনের বিশাল স্ট্যাচু ক্রেন দিয়ে নামানো হলো। গ্রিসের থিও অ্যাঞ্জেলোপোলুসের ছবিতে লেনিনের হাতের একটি অংশ বাতাসে ভেসে যেতে দেখি—যেন তিনি কিছু বলতে চান এখনো, দিতে চান কোনো নির্দেশ। 

এত সব ভাঙনের ইতিহাসের মধ্যে কোথাও কি আশার ইশারা নেই? ইতিহাস জানান দেয়, আছে। মানুষ মরে যায়, কিন্তু পরাজিত হয় না মানুষের চেতনা। যে চেতনা গণমানুষের পক্ষে, যৌথ স্মৃতির মধ্যে যে মানুষ নিজেকে রাখতে পারেন, তিনি আর তার কথা যে বইয়ে লেখা থাকে, সে বই অবিনশ্বর। পোড়ানো সম্ভব নয় এমন বই। বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘মাস্টার অ্যান্ড মার্গারিটা’র লেখক মিখাইল বুলগাকভ বলেছিলেন, ‘পাণ্ডুলিপি পোড়ে না।’ স্তালিন রেজিমে অন্যায় ও নিপীড়নের শিকার বুলগাকভ তার সতীর্থ লেখক, শিল্পীদের মতোই জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তারা বিশ্বের সংবেদনশীল, সৃজনশীল, প্রতিবাদী মানুষের যৌথ স্মৃতির অংশ। তাদের কোনো রেজিম ধ্বংস করতে পারবে না। পাণ্ডুলিপি পোড়ে না। পাণ্ডুলিপি পোড়ানোর প্রযুক্তি এখনো কোনো শাসনব্যবস্থার অধিকারে আসেনি, যত দিন মানুষের হৃদয়ে মানুষের হয়ে কথা বলার স্বপ্ন থাকবে, সে প্রযুক্তি অধিকারে আসবেও না। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor