USA

নয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথ ২০ জানুয়ারি, পরাজয় স্বীকার করছি, তবে লড়াই চলবে ॥ কমলা

দ্বিতীয় দফা হোয়াইট হাউসে ফেরার পথ নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তিনি এখনো আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট নন। ওভাল অফিসে ফিরতে তার দুই মাসেরও বেশি সময় লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যুক্তরাজ্যের তুলনায় বেশ আলাদা। জুলাই মাসে স্যার কিয়ার স্টারমারকে ভোটের ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ততক্ষণে ঋষি সুনাক নিজের জিনিসপত্রও গুছাতে পারেননি।
কিন্তু আটলান্টিকের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রে পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে অনেক বেশি সময় নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের অভিষেক হবে আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি। ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত জো বাইডেনই ক্ষমতায় থাকবেন। যদিও তিনি রাজনৈতিকভাবে খুব সীমিত ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। চার বছর হোয়াইট হাউসের বাইরে থাকার পর লাখো আমেরিকানের ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ফিরে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাইরে রিপাবলিকানরা পশ্চিম ভার্জিনিয়া, ওহাইও এবং মন্টানার সিনেট আসনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আগে এগুলো ডেমোক্র্যাটদের দখলে ছিল।

প্রতিনিধি পরিষদের কিছু আসন এখনো নির্ধারিত হয়নি। সিবিএস নিউজের মতে, হাউসের নিয়ন্ত্রণও রিপাবলিকানদের দিকেই ঝুঁকছে। যদি সফল হয়, তবে জানুয়ারিতে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর, প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট ও হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ একসঙ্গে রিপাবলিকানদের হাতে থাকবে। এদিকে পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায় এমনটা জানান তিনি। তবে যে আদর্শ তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে শক্তি জুগিয়েছে, সে আদর্শের জন্য লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও করছেন এই নারী। খবর সিবিএস, বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের।   
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কমলা ভাষণ দেওয়ার সময় তার  সমর্থকদের বেশির ভাগের চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। এ সময় ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘মানুষের প্রাপ্য মর্যাদার জন্য লড়াই করুন।’ তিনি নারী অধিকার ও বন্দুক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমি এই নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেছি, তবে লড়াইয়ে হার মানব না। কমলা আরও বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্পকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শেষে এখন পর্যন্ত ২৯৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, আর কমলা পেয়েছেন ২২৩টি। ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজের ম্যাজিক ফিগার অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কমলা হ্যারিসের রানিংমেট টিম ওয়ালজও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মূলনীতি হলো, আমরা নির্বাচনে হেরে গেলে সে ফলাফল মেনে নিই। এই মূলনীতি একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রকে আলাদা করে। আর কেউ যদি জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে চায়, তবে সেটির প্রতি তাকে  অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল থাকবে হবে।
নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছেন মার্কিন বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম পরিচালিত না করার একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি রয়েছে। বর্তমানে ট্রাম্পের পক্ষে একাধিক মামলায় লড়ছেন স্মিথ। এর মধ্যে সরকারি গোপন নথির অপব্যবহার এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হারের পর ফল পাল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলাও রয়েছে। এদিকে নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বাইডেন মঙ্গলবার নির্বাচনে তার দলের পরাজয়ের পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তিনি হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে এ ভাষণ দেবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ভাষণে অভ্যন্তরীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু উঠে আসতে পারে। তবে এতে সবচেয়ে প্রাধান্য পাবে মার্কিন নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর।
নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান এবং হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান।
হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাইডেন সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে তার জয়ের জন্য অভিনন্দন এবং হোয়াইট হাউসে দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এরপরই সাক্ষাতের দিনক্ষণ এবং আপ্যায়নে প্রস্তুতি শুরু করেছে হোয়াইট হাউস।  ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, খুব শীঘ্রই দুই নেতার দেখা হতে যাচ্ছে। তারিখ নির্ধারণের পর তা সাংবাদিকদের জানানো হবে।
এই জয়ের মাধ্যমে ১৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছেন ৭৮ বছর বয়সী মার্কিন ধনকুবের ট্রাম্প। আধুনিক আমেরিকার ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, অতীতে মাত্র এক বারই এক প্রেসিডেন্ট ভোটে পরাজিত হয়েও পরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। ট্রাম্পের বেলায়ও তাই হলো। এর আগে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। 
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের পেছনে কাজ করেছে ডেমোক্র্যাটিকদের যুদ্ধবাজ নীতি। এবারের নির্বাচনে ৭টি দোদুল্যমান বা রণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর ভোটারদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন ভোটাদের অনেকেই বলেন, কমলা হ্যারিস ও বাইডেনের দল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা। মধ্যপ্রাচ্যে সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন-যুদ্ধ, সুদানে গৃহযুদ্ধ এবং ইউরোপসহ বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী।  
ভারতীয় বংশোদ্ভূত হয়েও কমলা বর্ণবাদ ও অভিবাসন বিরোধী বক্তব্য দেওয়াতে প্রবাসীরা তাকে ভোট দেয়নি। মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান করার সুযোগ দেবে। এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিং মেট জে ডি ভান্স।
‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুইবার অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তারপরও কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে তাকেই ফিরিয়ে আনল জনগণ। বিশৃঙ্খলা আর ঘরে-বাইরে সমালোচনার মধ্যে চারটি বছর হোয়াইট হাউসে কাটিয়ে ২০২০ সালের নির্বাচনে চরম নাটকীয়তার মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প, যদিও সেই পরাজয় তিনি কখনো মেনে নেননি।

ওই নির্বাচনের পর ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা চিহ্নিত হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কুখ্যাত এক অধ্যায় হিসেবে। মনে হচ্ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হয়ত সেখানেই শেষ হয়ে গেল। কিন্তু ৪ বছর পর ভোটের মাঠে বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন যে শেষ পর্যন্ত তাকে ওভাল অফিসে নিয়ে যাবে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button