Bangladesh

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন: বিচার শেষ হচ্ছে না, স্বজনেরা হতাশ

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের মামলার বিচার ১০ বছরেও শেষ না হওয়ায় স্বজনদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অপেক্ষা বাড়ছে। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায়ের পর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের পাঁচ বছর হয়ে গেছে। শুনানি এখনো শুরু হয়নি। আপিলের শুনানি শেষ করে দ্রুত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিলের আলোচিত ওই ঘটনার ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। সন্তান হত্যার বিচার দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে মারা গেছেন নিহত সিরাজুল ইসলামের বাবা মনির হোসেন। জামাতা হারানোর শোক নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। এখন সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেবন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের।

সাত খুনে মারা যাওয়া মানুষগুলো শুধুই স্মৃতি। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা তো কবরে আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। যাঁরা জীবিত আছেন, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে বেঁচে আছেন, সেটা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম

গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, সরকারি দলের লোক ও সরকারি বাহিনী দিয়ে এতগুলো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা শুধু নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের চাওয়া নয়, এটি সারা দেশের মানুষের চাওয়া। কিন্তু বেঁচে থাকতে এ মামলার রায় কার্যকর দেখে যেতে পারবেন কি না, জানেন না।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়। বিষয়টি দেখে ফেলায় নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকেও অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে সাতজনের লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় হওয়া দুই মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডিতরা। আপিলের রায়ে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল এবং অপর ১১ আসামির দণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া ৯ আসামির দণ্ড বহাল থাকে। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা এবং সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা নূর হোসেন।

তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে সাতজনের লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় হওয়া দুই মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের আদালত।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, সাত খুনের মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘সাত খুনে মারা যাওয়া মানুষগুলো শুধুই স্মৃতি। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা তো কবরে আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। যাঁরা জীবিত আছেন, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে বেঁচে আছেন, সেটা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button