নিত্যপণ্যের সরকারি তিন তালিকাই অকার্যকর, ‘চক্রের শিকড় অনেক গভীরে’
নিত্যপণ্যের সরকারি তিন তালিকার একটিও কার্যকর নেই রাজধানীর বাজারগুলোতে। শুধু তাই নয়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দৈনিক পণ্যমূল্য তালিকা প্রকাশ করলেও তা একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো মিল নেই। আবার এই দুই তালিকায় স্থান পাওয়া বিভিন্ন পণ্যমূল্যের সঙ্গে খুচরা বাজারে বিক্রিতে রয়েছে বেশ ফারাক।
অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাজারের মূল ফটকে তালিকা টানানোর বিধান থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অনুপস্থিত। কোনো কোনো বাজারে চোখে পড়লেও সেটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। বোর্ডের লেখা অস্পষ্ট। হালনাগাদও করা হয় না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিক্রেতারা কোনো তালিকারই তোয়াক্কা করছেন না। নিজেদের ইচ্ছেমতো ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন। প্রতিনিয়ত ঠকছেন ক্রেতারা। তাদের মতে, এ অকার্যকর তালিকা প্রতিদিন প্রকাশ করে সরকারি সংস্থাগুলো জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
বুধবার টিসিবির দৈনিক বাজার মূল্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম দেওয়া ছিল ৪৮-৫২ টাকা। আর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মূল্য তালিকায় প্রতি হালি ডিমের দাম দেওয়া ছিল ৪৭-৪৮ টাকা। একই দিন রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৬ টাকা। ওই দিন টিসিবির তালিকায় গরুর মাংসের দাম দেওয়া হয় ৭৫০-৭৮০ টাকা। আর কৃষি বিপণনের তালিকায় দেওয়া হয় ৭২৯-৭৫০ টাকা। তবে নয়াবাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা। টিসিবির তালিকায় প্রতি কেজি মুগ ডালের দাম দেওয়া ছিল ৯৫-১৩০ টাকা, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তালিকায় ১২২-১২৮ টাকা ও রাজধানীর রায় সাহেব বাজারে মানভেদে ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। টিসিবির তালিকায় কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা। আর কৃষি বিপণনের তালিকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৬৪ টাকা। তবে রামপুরা কাঁচাবাজারে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া টিসিবির তালিকায় কেজিপ্রতি চিনির দাম ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। কৃষি বিপণনের তালিকায় ছিল ১৩২-১৩৫ টাকা। কাওরান বাজারে ১৩৫ টাকায় চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। টিসিবির তালিকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম দেওয়া আছে ১৭০-১৮০ টাকা, কৃষি বিপণনের তালিকায় ১৬২-১৬৭ টাকা। কিন্তু বাজারে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে শুধু রোববারই নয়, অন্যান্য দিনও প্রতিষ্ঠান দুটির মূল্য তালিকায় অমিল থাকে। পাশাপাশি দুই তালিকার সঙ্গে বাজারদরেরও মিল থাকে না।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারি সংস্থাগুলোর দৈনিক বাজারদরের তালিকা তৈরি করতে হবে। তবে রাজধানীর একেকটি বাজারে পণ্য ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হয়, এটাও তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। কিন্তু সব মিলে সরকারিভাবে বাজারে পণ্যের মূল্য প্রকাশ করা সংস্থাগুলোর তালিকায় যদি বিভ্রান্তি থাকে, তবে ভোক্তারা সংস্থাগুলোর প্রতি আস্থা হারাবে। এছাড়া সংস্থাগুলো এই তালিকা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠায়। সেক্ষেত্রে ভোক্তার সঙ্গে নীতিনির্ধারকারও পণ্যমূল্য নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন টিসিবির জনবল দিয়ে একাধিক বাজার হতে সকাল ৮টা থেকে পণ্যমূল্য সংগ্রহের মাধ্যমে সেগুলো ওয়েবপেজে প্রকাশ করে। যদি কারও মনে হয় টিসিবির মূল্য তালিকায় পণ্যের মূল্য ভুল আছে, সেক্ষেত্রে আমাদের লিখিতভাবে দিলে আমরা তাকে অনুরূপভাবে এর ব্যাখ্যা জানাব। দরকার হলে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যাব। তিনি আরও বলেন, টিসিবি যে শুধু পণ্যের প্রতিদিনের মূল্য প্রকাশ করে সেটা নয়, কোন পণ্যের দাম বাড়ল বা কমল সেটাও প্রকাশ করে থাকে। এতে ভোক্তাদের উপকার হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের লোকজন প্রতিদিন সকালে বাজারে গিয়ে পণ্যের মূল্য তালিকা সংগ্রহ করেন। পরে এগুলো প্রকাশ করা হয়। কোন বাজারে কেমন মূল্য আছে সেটাও প্রকাশ করা হয়। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা বাজারের পার্থক্যও দেওয়া থাকে। রাজধানীর সঙ্গে অন্যান্য জেলার তুলনা করে পণ্যের দামও দেওয়া হয়। তাই আমাদের পণ্যমূল্য তালিকার সঙ্গে বাজারের মূল্য ভুল হওয়ার কথা নয়। তবে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজারের সামনে সিটি করপোরেশন কর্তৃক কোনো মূল্য লক্ষ্য করা যায়নি। বাজারের ভেতরে সিঁড়িঘরের সামনে জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখ। কোনো পণ্যেরই মূল্যও লেখা নেই। পাশাপাশি বাজারে একাধিক দোকান ঘুরে নিজ উদ্যোগে মূল্য তালিকা রাখলেও সেগুলো ৩-৫ দিনে আগের হালনাগাদ করা। এর পেছনেও বিক্রেতারা নানা ধরনের যুক্তি দিয়ে থাকেন। কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, দোকানের তারিখ ভুল লেখা আছে। কিন্তু যে দাম লেখা আছে সে দামেই বিক্রি হচ্ছে। তাই হালনাগাদ করা হয়নি। আমরা আড়তভাড়া ও অন্যান্য খরচ রেখে কিছু লাভ করি। সেভাবে পেঁয়াজ বিক্রি করি। তবে মাঝে মধ্যে বাজার তদারকি সংস্থার লোকজন এসে তালিকা দেখে। অনিয়ম পেলে জরিমানা করে।
কাওরান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাজারে আগে সিটি করপোরেশন থেকে একটি মূল্য তালিকা টাঙানো হতো। এখন নেই। তবে বাজারের সব দোকানদারকে সরকারি নির্দেশনা মেনে পণ্যমূল্য টাঙানো ও বিক্রি করতে নিয়মিত মাইকিং করা হয়। এরপরও কেউ ব্যত্যয় করলে আমাদের কি করার আছে। তবে আমার মনে হয় আমাদের বাজার অন্যান্য অনেক বাজারের তুলনায় সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছে।
এদিকে মালিবাগ কাঁচাবাজারেও দৃশ্যমান জায়গায় কোনো মূল্যতালিকা দেখা যায়নি। বাজারের সবজি বিক্রেতা নেসার আলী জানান, কাঁচামালের মূল্য প্রতিদিনই ওঠানামা করে। নানা রকমের তরকারি ও সবজি বিক্রি করি আমরা। প্রথমে কিছুদিন মূল্য তালিকা টানানো হয়েছিল। খুবই কষ্টকর বলে এখন আর করা হয় না। সিটি করপোরেশনের লোক মাঝেমধ্যে আসে। তারা টাঙানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আমাদের অলসতার কারণে মানা হচ্ছে না। আগে বাজারের সামনে মূল্য তালিকা থাকলেও এখন নেই।
অন্যদিকে হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে মূল্য তালিকা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু হালনাগাদ করা ছিল না। তালিকায় পণ্যের যে দাম উল্লেখ করা ছিল তা বাজারে মিল নেই। বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছামতো দামে পণ্য বিক্রি করছেন। গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা লেখা থাকলেও বাজারে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমন অন্যান্য পণ্যের দাম যা লেখা ছিল, বাজারে তা মিল পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি রাজধানীর নয়াবাজারে সামনে কোনো ধরনের পণ্যমূল্য তালিকা নেই। বাজারের ভেতরে দোকানে ব্যবসায়ীরা মূল্য তালিকা রাখলেও অনেকক্ষেত্রে দোকানে বিক্রীত পণ্যের দামের সঙ্গে মিল নেই। আবার অনেকেই পণ্যেরমূল্য বাড়িয়ে তালিকায় লিখে সেই বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন।
বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই বাজারে আমি ৬ বছর ধরে কেনাকাটা করি। কিন্তু কখনও সিটি করপোরেশন কর্তৃক কোন পণ্য মূল্য তালিকা দেখিনি। বা কখনও সিটি করপোরেশন থেকে এ তালিকা আছে কিনা তা দেখার জন্যও কাউকেই আসতে দেখিনি। কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। এছাড়া বাজারের একাধিক দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও তা অকার্যকর। বিক্রেতারা মূল্য লিখলেও তা হালনাগাদ করছে না। দোকানে পণ্যের দাম জানতে চাইলে যা বলছে তার সঙ্গে মূল্য তালিকায় মিল থাকছে না। সব কিছুতেই যেন হযবরল অবস্থা চলছে। দেখারও যেন কেউ নেই।
মিরপুর শাহ আলী কাঁচাবাজারে। একটি মূল্য তালিকার বোর্ড থাকলেও হালনাগাদ নেই। এছাড়া বাজারের সামনের দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা থাকলেও ভেতরের দোকানে মূল্য তালিকা নেই। ব্যবসায়ীর জানান, নিয়মিত মূল্য তালিকা টানানো একটি বিরক্তিকর কাজ। দোকানে বেচাকেনা করতে গিয়ে সময় পাওয়া যায় না। তাই মাঝে মধ্যে মূল্য তালিকা টাঙানো ও হালনাগাদ করা হয় না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাঁচাবাজারগুলোয় মূল্য তালিকা নিশ্চিত করতে তদারকি করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা মূল্য তালিকা মানেন না। এজন্য প্রায়ই মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে সপ্তাহের ৭ তিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পণ্যের দাম সহনীয় করাসহ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। এ সময় পণ্য কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে ও কেনা কত টাকা তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারের দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা রাখা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হচ্ছে। তালিকা না থাকা ও হালনাগাদ না করলে অথবা মূল্য তালিকা থেকে বেশি দামে পণ্য কিক্রি করলে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বাজার কমিটির সঙ্গে একাধিক সময় সভা করে বাজারে পণ্যমূল্য তালিকা টাঙাতে বলা হচ্ছে। দোকানগুলোতেও ভোক্তার স্বার্থে পণ্যমূল্য তালিকা রাখতে তদারকি করতে বলা হচ্ছে। তারপরও কিছু ব্যত্যয় পাওয়া যাচ্ছে, যা ঠিক না। তবে এ বিষয়ে আর ছাড় দেওয়া হবে না। এবার অনিয়ম পেলেই কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।
অভিযানে দোকান বন্ধ করে পালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা…
বেঁধে দেওয়া দর কার্যকরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালালেও পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তাদের লোকবল কম। এছাড়া, অভিযানের সময় ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালাচ্ছেন। গত রবিবার রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজারে অভিযান চলাকালে অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। কেউ কেউ আবার ত্রিপল দিয়ে দোকান বন্ধ করে বাজারের আশপাশে অবস্থান নেন। অনেকেই আবার শাটার লাগিয়ে দোকান পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার খুচরা বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। আমাদের জরিমানা করছে। কিন্তু আমাদের তো এসব পণ্য বেশি দামে কেনা।’
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এখন অভিযানে গেলে খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের রশিদ দেখিয়ে বলেন, বেশি দামে কেনা। কিন্তু এখন তো দাম কিছুটা কমেছে। ডিমের দাম বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন পাড়া-মহল্লার দোকানের কথা বললে তো হবে না। এছাড়া, পেঁয়াজ ও আলুর দর নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা মোকাম ও হিমাগারে অভিযান চালাচ্ছি। ফরিদপুরে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকায় আনতে পারলে খুচরা বাজারে তা ৬৫ টাকায় পাওয়া যাবে।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘হিমাগারে আলু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র আছে। এই চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদের পক্ষে এই চক্রকে ধরা অনেক কঠিন। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি এই চক্র ভাঙতে।’
Having read this I thought it was really enlightening.
I appreciate you spending some time and energy to put this information together.
I once again find myself spending a significant
amount of time both reading and posting comments. But so what,
it was still worth it!
Visit my blog post – vpn coupon 2024
We stumbled over here from a different website and thought I might check things out.
I like what I see so now i’m following you. Look forward to exploring your web page for a second time.
Feel free to surf to my blog :: vpn special coupon code 2024 (vpnspecialcouponcode.wordpress.com)
Hey there this what is a vpn somewhat of off
topic but I was wanting to know if blogs use WYSIWYG editors or if you
have to manually code with HTML. I’m starting a blog soon but have no coding know-how so I wanted to get advice from
someone with experience. Any help would be enormously appreciated!
My programmer is trying to convince me to move to .net from PHP.
I have always disliked the idea because of the expenses.
But he’s tryiong none the less. I’ve been using WordPress
on several websites for about a year and am anxious
about switching to another platform. I have heard very good things about blogengine.net.
Is there a way I can import all my wordpress posts into it?
Any help would be greatly appreciated!
Feel free to visit my blog – vpn special coupon code
It’s going to be end of mine day, except before
end I am reading this wonderful piece of writing facebook vs eharmony to find love online
improve my know-how.
Do you have a spam problem on this site; I also am
a blogger, and I was wanting to know your situation; we have developed some nice
procedures and we are looking to exchange methods with others, why not
shoot me an email if interested.
My webpage: eharmony special coupon code 2024
I every time emailed this website post page to all my contacts, as if like to
read it next my contacts will too.
Feel free to surf to my website nordvpn special coupon code 2024