Hot

নেপালের বিদ্যুৎ ৫ বছরেও আসেনি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কমিটি গঠন হচ্ছে

গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৭৪ মেগাওয়াট। কয়েকদফা বেড়েছে গ্রাহক পর্যায়ে দামও। প্রতি ইউনিটের খুচরা দাম বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। শুধু ২০২৩ সালে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে, তার প্রতি ইউনিটের দাম ৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮ টাকা। অন্যদিকে নেপাল থেকে আনা বিদ্যুতের দাম কম হতে পারে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গত ২০১৮ সালে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হলেও তা গত ৫ বছরে বাস্তবায়ন না হলেও এবার মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বর্তমানে যখন আরো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন বলা হচ্ছে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট পানি বিদ্যুৎ আমদানির সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। পানিবিদ্যুৎ আমদানি করতে বছরে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিদ্যুতের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুধাবন করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে পানি বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগনেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নেপালের হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে যৌথ বিনিয়োগ করবে। এ লক্ষ্যে সুনকুসি-৩ এবং খিমতি শিভালয়া নামক ২টি প্রজেক্ট সাইট শর্ট লিস্টেড করা হয়েছে। নেপালের বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে গত ৫ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি তা বলতে পারছে না কোনো কর্মকর্তা। তারা শুরু বলছে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ এ বছরে আসছে।

ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ভর্তুকিমুক্ত করতে বার বার বলছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সরকারও এ খাতে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি পর্যালোচনা করেছে। ভর্তুকি তুলে নিলে বিদ্যুতের দাম ৭৮ শতাংশ বাড়তে পারে। সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে এ অর্থ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার কথা আগামী জুনে। এর আগে যেসব খাতে সংস্কার করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি যৌক্তিক করা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি দিন দিন বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির ভর্তুকি চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি সরকারের কাছে ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি চায়। গত অর্থবছরে (২২-২৩) তা আরও বেড়ে ৩৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। বিদ্যুতের বর্তমান গড় খুচরা দাম ৮ টাকা ২৫ পয়সা। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা। ভর্তুকি শূন্য করতে হলে পাইকারি দাম বাড়িয়ে ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। তখন গ্রাহক পর্যায়ে দাম বেড়ে হবে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও নেপালের যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি হতে পারে বলেও মত দেন নেপালি রাষ্ট্রদূত। গত ৭ ডিসেম্বর নেপাল থেকে সরাসারি ক্রয় পদ্ধতিতে ভারত হয়ে পানি বিদ্যুৎ আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন পায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট পানি বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। এ বিদ্যুৎ আমদানি করতে ব্যবহার করা হবে ভারতীয় সঞ্চালন লাইন। তাই এ নিয়ে তিন দেশের একটি চুক্তি থাকতে হবে। নেপাল ও বাংলাদেশ ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহে বৈচিত্র্য আনতে ও জ্বালানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বাড়াতে বাংলাদেশ বাহ্যিক উৎসের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে আগ্রহী।

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আমদানির বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর চুক্তি করার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিষয়টি নিয়ে এত দিন তেমন আলোচনা না হলেও নতুন সরকার গঠনের পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পিডিবি সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য পিডিবির চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের দফতর সরাসরি বিষয়টি নিয়ে নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে চুক্তি সইয়ের তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চুক্তি সইয়ের জন্য বাংলাদেশের একটি টিম নেপালে যাবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পিডিবি নেপালের সঙ্গে কথা বলছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের জন্য এত দিন অপেক্ষা করা হচ্ছিল, এখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

গত ৩১ জানুয়ারি সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সভায় তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরও ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টির অগ্রগতিও দৃশ্যমান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে। এ কমিটি নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কাজ করবে। এর আগে নেপাল ও বাংলাদেশ ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ২৫ বছরের চুক্তি সই হবে। শুধু রফতানি নয়, নেপাল শীতকালে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী। শীতের সময় নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে, অন্যদিকে বাংলাদেশে চাহিদা কম থাকে। এ কারণে বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নেপাল থেকে পানি বিদ্যুৎ আমদানি করতে বছরে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা। এই বিদ্যুৎ আসতে ভেড়ামারার এইচভিডিসি সাব-স্টেশন ব্যবহার করা হবে। ভেড়ামারার এইচভিডিসি সাব-স্টেশনের ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে এ সাব- স্টেশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে। সাব- স্টেশনটির অব্যবহৃত ক্ষমতা ব্যবহার করে নেপাল থেকে ভারতের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ৪০ মেগাওয়াট পানি বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব। ভারত থেকে এখন দুটি লাইন দিয়ে বাংলাদেশের মোট আমদানি ক্ষমতা ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। ভেড়ামারা এবং কুমিল্লা দিয়ে এখন বিদ্যুৎ আসে বাংলাদেশে। নেপাল দ্বিতীয় দেশ যেখান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করবে। ভারত থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে যে বিদ্যুৎ আমদানি করছে, প্রতি ইউনিটের দাম ৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮ টাকা। নেপাল থেকে আনা বিদ্যুতের দামও তার কাছাকাছি থাকতে পারে বলে সূত্রগুলো জানায়। এদিকে গত বছরের জুন মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ভারত সফর করেন। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে একটি চুক্তি সই হয় নেপালের। ওই চুক্তি অনুযায়ী নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসবে ভারতের সঞ্চালন লাইন দিয়ে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d