পরিবারে মাসে কোন খাবারে ব্যয় কত
দেশের মানুষের ক্যালরি গ্রহণের হার বেড়েছে। মাছ, মাংসের মতো ব্যয়বহুল খাবার কমিয়ে ফল খাওয়া বাড়িয়েছে মানুষ। গত কয়েক বছরে মাছ ও মাংসের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে নিজেদের আয়কে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় খাবার তালিকা পাল্টে গেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে মাছ-মাংসের বদলে ফল খাওয়ার হার বেড়েছে।
২০২২ সাল শেষে প্রতি মাসে একটি পরিবার খাবারের পেছনেই গড়ে ব্যয় করে ১৪ হাজার ৩ টাকা। অথচ ২০১৬ সালেও এ ব্যয় ছিল মাত্র ৭ হাজার ৩৫৪ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের খাবারের খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, মাসে খাবারের পেছনে যদি ১০০ টাকা ব্যয় ধরা হয় তাতে কোন খাবারে কত টাকা ব্যয় হয় সে হিসাবও উঠে এসেছে জরিপে। ১০০ টাকার মধ্যে মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে শস্য কেনার পেছনে। বিশেষ করে ধান ও গমের মতো শস্যের জন্য মানুষের ব্যয় হয় ২১ টাকা ৬২ পয়সা। ধান-গমের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয় মাংস ও ডিম কেনায়, এতে ব্যয় ১৬ টাকা ৬২ পয়সা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয় মাছ কেনার জন্য। এতে ব্যয় হয় ১৪ টাকা ৫৯ পয়সা।
তাছাড়া অন্য ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে ডাল কেনায় ১ টাকা ৬৫ পয়সা, সবজি কেনায় ৮ টাকা ১২ পয়সা, দুধ কেনায় ২ টাকা ৭২ পয়সা, ভোজ্য তেলে ৫ টাকা ৪২ পয়সা, মসলায় ৫ টাকা ৯৪ পয়সা, ফলে ৬ টাকা ১৫ পয়সা, চিনি বা গুড়ে ১ টাকা ৮৭ পয়সা, কোমল পানীয় ২ টাকা ২৬ পয়সা ও অন্য খাবারে ব্যয় ১৩ টাকা।
জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে একেকটি পরিবারের খাবারের ব্যয় মাসে ১৪ হাজার ৩ টাকা। এ খরচের চাল বা গম জাতীয় শস্যের ওপর ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ ছিল। ২০১৬ সালেও চাল ও গমের জন্য ব্যয় ছিল আরও বেশি, ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খাদ্যশস্যে ব্যয়ের অংশ ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে।
গ্রামীণ এলাকায়, খাদ্যশস্যে ব্যয়ের অংশ ২০১৬ সালের তুলনায় ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে কমে ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশে এ দাঁড়িয়েছে। শহুরে এলাকায়, ২০১৬ সালে ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশের তুলনায় ২০২২ সালে শস্যের ব্যয়ের অংশ কমে ১৮ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে।
বিবিএস বলছে, বাংলাদেশের একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। এর বিপরীতে খরচ হয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। বিবিএস জানাচ্ছে, মোটাদাগে সব মিলিয়ে ১৩টি খাতে সংসারের জন্য অর্থ খরচ করতে হয়, তবে এটি গড় হিসাব। স্বাভাবিকভাবেই ধনী পরিবারে মাসিক খরচ তুলনামূলক বেশি, গরিব পরিবারে কম।
খানার আয় ও ব্যয় জরিপের জন্য সারা দেশের ১৪ হাজার ৪০০ পরিবারের সারা বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওইসব পরিবারের সংসার চালাতে প্রতি মাসে গড়ে কত টাকা খরচ করতে হয় জরিপে সেই চিত্র উঠে এসেছে। সবশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, সারা দেশে ৪ কোটি ১০ লাখ পরিবার আছে।
এখন একটি পরিবারের ৪২ শতাংশ খরচ হয় খাবার কেনায়। চাল, ডাল, তেল, মরিচ, পেঁয়াজ, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ ইত্যাদি কিনতে এ খরচ হয়। এটি সংসারের সবচেয়ে বড় খরচের খাত।
সংসারের দ্বিতীয় বৃহত্তম খরচের খাত হলো বাসাভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল ইত্যাদি। এ বিল খাতে একটি পরিবারের মাসে খরচ হয় ৪ হাজার ৪১৮ টাকা। এটি মোট খরচের ১৪ শতাংশ। তবে যেসব পরিবারের নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তাদের বাসা ভাড়ার খরচ নেই। গ্রামে বাসা ভাড়ার প্রচলনও নেই। তাই এ খাতে খরচ আপাতত দৃষ্টিতে কম মনে হয়।
নয়টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে সাতটি গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এসে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে মানুষের। আর দুটিতে কমেছে। ২০১৬ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এসে যেসব খাবার খাওয়া মানুষ বাড়িয়েছে সেগুলো হলো গম, ডাল, সবজি, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য, মাছ, মাংস ও ফলমূল। তার বিপরীতে ভাত ও ডিম খাওয়া কমেছে মানুষের।
মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণের ক্ষেত্রেও। ২০১৬ সালের তুলনায় মানুষের দৈনিক জনপ্রতি ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে ২০২২ সালে এসে। জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এসে জনপ্রতি দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩৯৩ কিলোক্যালরি খাবার গ্রহণ করেছে। ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২১০ কিলোক্যালরি।