Bangladesh

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগ: নিত্যপণ্যের এলসি খোলা সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ

ব্যাংকগুলোয় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ডিম, আলু ও পেঁয়াজের এলসি খুলতে সমস্যা যেন না হয়, সেদিকে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পাশাপাশি কোল্ডস্টোরেজ গেটে আলুর কেজি ২৭ টাকা এবং খুচরা ৩৬ টাকা মূল্য নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। 

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ডিসিদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫-৩০টি ট্রাকে টিসিবি ডাল, তেল, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি করবে। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীর বাইরে থাকা লোকজন এ পণ্য কিনতে পারবেন।

দ্রব্যমূল্য ও সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ৩০টি ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৯০০ জন এই পণ্য কিনতে পারবেন। প্রতি কর্মদিবসেই পণ্য বিক্রি হবে। আর আগামী দিনে টিসিবি বেশি পরিমাণ পণ্য সংগ্রহ করতে পারলে ট্রাক সেলের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এটি ঢাকাবাসীর জন্য অবশ্য সুখবর। ঢাকার অনেক ভাসমান মানুষ যাদের ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা গ্রামে। এজন্য টিসিবির কার্ডধারী হতে পারেননি অথচ ঢাকায় বাস করছেন। তাদের চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ব্যাখ্যা দিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ কারণে আমরা ব্যাপকভিত্তিক যে পণ্য আমদানি করছি, বিশেষ করে তেল, চিনি ও ডালের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার বেশি হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সয়াবিন তেলের দাম ২০৫ টাকা লিটার ওঠে। সেখান থেকে ধাপে ধাপে কমিয়ে এখন ১৬৯ টাকায় আনা হয়। লিটারে ৩৬ টাকা কমেছে।

বাজার থেকে বড় কোম্পানিগুলো আইন অমান্য করে মূল্য বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান করা হবে কি না প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। ইতোমধ্যে বেশি মূল্য বাড়িয়ে পণ্য বিক্রির অভিযোগে ৬৫টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা চলমান প্রতিযোগিতা কমিশনে। দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও সংকট কাটছে না কেন-প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, সয়াবিনের সংকট নেই, ডিম ও আলুর মূল্য কমে আসছে। পেঁয়াজ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আগামী এক মাসে উৎপাদিত পেঁয়াজও আসবে না। আরও এক মাস উচ্চমূল্য থাকতে পারে। তবে কৃষকের পেঁয়াজ বাজারে চলে এলে মূল্য কমবে। 

চিনি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্রাজিল ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এরই মধ্যে ভারত বন্ধ করেছে রপ্তানি। আর ব্রাজিলে সারা বিশ্বের চাহিদা একসঙ্গে পড়েছে। এখন চিনির গড় মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৫৭৫ মার্কিন ডলার, এর সঙ্গে ডলারের উচ্চমূল্য। এসব প্রভাব চিনির ওপর গিয়ে পড়েছে। নতুন আলু না আসা পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত থাকবে।

কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মানছেন না। ব্যবসায়ীরা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী। প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চিনির আমদানি কম হয়েছে। ডলারের মূল্য বেশি। যে কারণে চিনির মূল্য মানছেন না। কিন্তু ডিম, আলু ও সয়াবিন তেলের মূল্য কমে আসছে। বিশ্ববাজার মূল্য, ডলারের দামসহ বেশ কয়েকটি কারণে বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে পণ্য রাখা যায় না।

এর আগে ট্রাক সেল বন্ধ করেছে টিসিবি, এখন নতুন শুরু করেছে, এটি জাতীয় নির্বাচনের পর বন্ধ হয়ে যাবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সেটি সামাল দেওয়ার জন্য এক কোটি পরিবারকে টিসিবির কার্ড করে দেওয়া হয়। এজন্য ট্রাক সেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

কিন্তু পণ্যের মূল্য এখনো কমেনি এবং ঢাকার অনেক ভাসমান মানুষ আছেন, যাদের টিসিবির কার্ডের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাদের জন্য এই টিসিবি ট্রাকসেল শুরু হবে। নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। পণ্যের মূল্য যথেষ্ট পরিমাণ কমলে এই ট্রাক সেল থাকবে না। টিসিবি কার্ডধারীরা এ পণ্য পাবেন না। কারণ, কার্ডধারীরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পাচ্ছেন।

সচিব বলেন, আলু সব সময় রপ্তানি করা হয় এবং ডিম আমদানি করা হতো না। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথম মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৫ মেট্রিক টনের বেশি আলু আমদানি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় আলু আমদানির জন্য ২ লাখ মেট্রিক টনের আইপিও দিয়েছে। 

এছাড়া এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার পিস ডিম আমদানি হয়েছে। অনুমোদন হয়েছে ২৫ কোটি পিস। এছাড়া জেলা প্রশাসক মূল্য পর্যবেক্ষণ করছে। এসব কারণে বাজারে আলু ও ডিমের মূল্য বেশ কমতে শুরু করেছে। তবে যতদিন বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, আলু ও ডিম আমদানি অব্যাহত থাকবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েকটি নির্দেশনা গেছে। এর মধ্যে হিমাগারে আলুর কেজি ২৭ এবং খুচরা ৩৬ টাকা মূল্য নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কোল্ডস্টোরে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তাদের উপস্থিতিতেই কেবল কোল্ডস্টোরেজ গেটে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে। 

এছাড়া চিনি ও ভোজ্যতেল, ডিম, আলু ও ডাল সরবরাহ বাজারে বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে। 

টিসিবির ট্রাক সেল: ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঢাকা শহরের দুটি সিটি করপোরেশনে টিসিবির কার্ডধারী সংখ্যা ১৩ লাখ জন। এর বাইরে কার্ডহীন মানুষের জন্য ২৫-৩০টি ট্রাকে টিসিবি পণ্য বিক্রি করবে। প্রতিজন ২ কেজি আলু, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ কেজি পেঁয়াজ ও ২ লিটার সয়াবিন কিনতে পারবেন। প্রতি কেজি ডাল ৬০, প্রতি লিটার সয়াবিন ১০০, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০  এবং আলু ৩০ টাকা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button