পারমাণবিক মেঘ এবং নীহারিকা
নক্ষত্রগুলোর মধ্যবর্তী স্থান সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে না। ওই স্থানে পরমাণু ও গ্যাসীয় অণুতে গড়ে ওঠে আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যস্থান। আকাশগঙ্গার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমস্ত গ্যাসের সম্মিলিত ভর নক্ষত্রের মাত্র এক-দশমাংশ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেঘে জমে আছে বলেই বিশাল মনে হয়।
নক্ষত্রের আবহওয়ার পরিধি বিস্তৃত করে। পরম শূন্য তাপমাত্রার ওপর দশ থেকে শত ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই মেঘের তাপমাত্রা বেশ শীতল থাকে। এতই শীতল যে হাইড্রোজেন নিরপেক্ষ হাইড্রোজেনে পরিণত হয়। যা দৃশ্যমান আলোতেও স্বচ্ছ।
কার্বন, অক্সিজেন এবং আয়রনের মতো ভারী মৌলসমূহের চিহ্ন— মেঘের প্রাণ ফেরায়।
বৃহদাকার নক্ষত্রে বিস্ফোরণে কেন্দ্র থেকে পাওয়া মৌলের সঠিক পুনর্ব্যবহার হয় এর মাধ্যমে। এই মেঘ যত ঘন হয়ে আসবে, নতুন একটা নক্ষত্রের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। মেঘ বলি বা আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম।
এই থেকে সদ্য গঠিত নক্ষত্রগুলোর চারপাশের মেঘগুলো শক্তিশালী আলোয় আলোকিত হয়। মেঘের গ্যাসগুলো তীব্র আলোর প্রভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এবং আলোকিতও হয়। গ্যাসই তখন নিজস্ব গোলাপি-লাল নীহারিকা বা নেবুলা হিসেবে স্পষ্ট হয়। তরুণ বা নবজীবন পাওয়া নক্ষত্রের সাথী হয়ে নীল নক্ষত্রগুচ্ছের সাথে সাথে থাকে।
ল্যাটিন ‘নেবুলা’ অর্থ ‘কুয়াশা বা মেঘ’। ইংরেজি নেবুলা শব্দের বাংলা হলো নীহারিকা। ধুলো, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও আয়নিত গ্যাসের আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘকে নীহারিকা বলা হয়।
আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যস্থানে নীহারিকার মূল আবাস। এর ভৌত উপাদান হিসেবে রয়েছে ৯০ শতাংশ হাইড্রোজেন, ৯ ভাগ হিলিয়াম। বাকি ১ ভাগে কার্বন, নাইট্রোজেন, সালফার, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন প্রভৃতি। নীহারিকার প্রথম সন্ধান মেলে আরবীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আব্দেল রহমান আল সুফির বর্ণনা থেকে। তিনি আলাদা ধরনের নক্ষত্রগুচ্ছকে নীহারিকা ভেবেছিলেন। ১৮৬৪ সালে উইলিয়াম হাগিন্স প্রায় ৭০টি নীহারিকার বর্ণালি পরীক্ষা করেন। তিনি অবশ্য নীহারিকার এক-তৃতীয়াংশকেই দেখেন নিষ্প্রভ মেঘ রূপে।
আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসীয় মেঘ নতুন নক্ষত্র সৃষ্টির জন্য একটা ভিত্তি। দেখা যাচ্ছে মেঘ সৃষ্টি হয় ধ্বংসাবশেষ থেকে, আবার সেই মেঘ থেকে নতুনের আগমন ঘটে।
পরিমণ্ডল
ক্ষুদ্র কঠিন কণা (ধূলিকণা) গ্যাসের সাথে মিশে যায়। এভাবে বাড়তে থাকে গ্যাসের ঘনত্ব। আর গ্যাসের ঘনত্ব মানেই তো মেঘের ঘনত্ব। অস্বচ্ছ হয়ে যায় কাঠামো। ধুলো মেঘের কেন্দ্র রক্ষা করে তাপ ও আলোর প্রভাব থেকে। পরম শূন্য তাপমাত্রার ওপর ওঠে যায় তাপমাত্রা। এবং পরমাণুগুলো জটিল অণুতে পরিণত হয়। আণবিক মেঘের আকার সাধারণত ৩ থেকে ৫০ আলোকবর্ষের মাঝে হয়। ভর হয় সূর্যের ১,০০০ গুণ পর্যন্ত।