Trending

প্রণোদনা হ্রাসে চ্যালেঞ্জের মুখে রপ্তানি খাত

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসাবে রপ্তানি খাতে প্রণোদনা সর্বনিæ ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এতে অনেক খাতের প্রণোদনা কমেছে অর্ধেক। হ্রাসের এই হার আজ ১ জুলাই থেকে  কার্যকর হবে। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। 

এদিকে রপ্তানিকারকরা বলেছেন, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশীয় অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা অর্ধেক কমানোর ফলে রপ্তানি খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এমন কি দেশের রপ্তানি বাজার অন্য দেশেও চলে যতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন। প্রণোদনা কমালে বিকল্প নীতি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা।

রোববার রপ্তানির বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়। এতে দেখা যায়, সরকার রপ্তানির ৪৩টি খাতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা প্রদান করে। সব খাতেই প্রণোদনার হার কমানো হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ খাতে প্রণোদনা কমানো হয়েছে অর্ধেক। কৃষি ও চামড়া খাতেও প্রণোদনা কমানো হয়েছে। এর আগে ১২ ফেব্র“য়ারি প্রণোদনার হার আরও একদফা কমানো হয়েছিল। ৫ মাসের ব্যবধানে প্রণোদনা আরও কমানো হলো।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবে। ওই তালিকা থেকে বের হলে রপ্তানি খাতে কোনো প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। এ কারণে আগে থেকেই রপ্তানি খাতে প্রণোদনার হার কমানো হচ্ছে। যাতে ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানি খাত প্রণোদনা ছাড়াই স্বনির্ভর হতে পারে। এছাড়া আইএমএফের শর্ত রয়েছে রপ্তানিতেও প্রণোদনা কমানোর জন্য। সব মিলে সরকার প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে তারা এ সার্কুলার জারি করেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ফেব্রুয়ারিতে একদফা প্রণোদনা কমানো হয়েছে। এখন আরও কমানো হলো। দুই দফায় প্রণোদনা কমানোর পর রপ্তানি খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এমনিতেই সুদের হার, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। তারপর বৈশ্বিক মন্দা তো আছেই। এত প্রতিক‚ল অবস্থায় প্রণোদনা কমানো ভালো লক্ষণ নয়।

তিনি বলেন, প্রণোদনা কমানোর বিপরীতে রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা দিতে পারে সরকার। বিষয়টি নিয়ে সরকারের  উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করা হবে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৩ শতাংশের পরিবর্তে এখন দেওয়া হবে দেড় শতাংশ। এ খাতে প্রণোদনা কমেছে অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতে রপ্তানিকারকদের জন্য আগে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন তা কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়। এ খাতে আগে প্রণোদনা দেওয়া হতো ১ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এ খাতেও অর্ধেক কমেছে প্রণোদনা।
তৈরি পোশাকের নিট ওভেন ও সোয়েটার খাতে সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে বস্ত্র খাতের সহায়তা সম্প্রসারণের আওতায় আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপ ব্যতীত অন্যান্য অঞ্চলে ৩ শতাংশের পরিবর্তে এখন থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে। তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। পাটজাত বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতেও প্রণোদনা কমানো হয়েছে। বৈচিত্র্যকৃত পাটপণ্যে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, পাটজাত চ‚ড়ান্ত পণ্যে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং পাটসুতা রপ্তানিতে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, ঘরে তৈরি পণ্য হোগলা, খড়, আখের বা নারিকেলের ছোবড়া, গাছের পাতা, গার্মেন্ট ঝুট রপ্তানিতে ৮ শতাংশের পরিবর্তে প্রণোদনা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। গরু-মহিষের নাড়ি-ভুঁড়ি, শিং, রগ, রপ্তানিতে ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে আচ্ছাদিত বরফের হার অনুযায়ী আগে ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হবে ৮ থেকে ৪ শতাংশ। অন্যান্য মাছ রপ্তানিতে বরফ আচ্ছাদনের হার অনুযায়ী আগে ৪ থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হবে সাড়ে ৩ থেকে দেড় শতাংশ।

কৃষি পণ্য শাকসবজি-ফলমূল রপ্তানিতে আগে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হবে ১০ শতাংশ। এ খাতে কমেছে ৩৩ শতাংশ। আলু রপ্তানিতে আগে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো এখন দেওয়া হবে ১০ শতাংশ।

হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে আগে ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। হালাল মাংস বা হালাল প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানিতে আগে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

চামড়া খাতেও এ হার কমানো হয়েছে। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত চামড়া শিল্প নগরী ও এর বাইরে অবস্থিত চামড়া শিল্পগুলোর মধ্যে যাদের নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা আছে এমন সব কারখানায় উৎপাদিত ক্রাস্ট লেদার রপ্তানিতে আগে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হতো না। এখন দেওয়া হবে ৬ শতাংশ। ফিনিশড লেদারে আগে ৭ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন তা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

পেট বোতল ফ্লেক্স রপ্তানিতে প্রণোদনা ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ এবং এ ধরনের বোতল থেকে উৎপাদিত পলিইস্টার স্টাপল রপ্তানিতে প্রণোদনা ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

জাহাজ রপ্তানিতে প্রণোদনা ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন ও জুট পার্টিকেল বোর্ড রপ্তানিতে ১০ শতাংশের পরিবর্তে এখন দেওয়া হবে ৮ শতাংশ। শস্য ও শাকসবজির বীজ রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

ফার্নিচার রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। আগর ও আতর জাতীয় পণ্যে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। 

ওষুধ খাতের উপকরণ ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ দেওয়া হবে।

এ্যাকুমেলেটেড ব্যাটারি রপ্তানিতে প্রণোদনা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, সিন্থেটিক ও কাপড় দিয়ে তৈরি ব্যাগ ও জুতা রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার রপ্তানিতে ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে আগে ফ্রিল্যান্সারদের দেওয়া হতো ৩ শতাংশ প্রণোদনা। এখন দেওয়া হবে আড়াই শতাংশ।

ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে যথা সার্জিকেল ও মেডিকেল পণ্যে ৮ শতাংশ পরিবর্তে এখন দেওয়া হবে ৬ শতাংশ। মোটরসাইকেলে ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ, ফটোভোলাটিক মডিউলে ৮ শতাংশের পরিবর্তে দেওয়া হবে ৬ শতাংশ, রেজর ও রেজর ব্লেডে ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ, সিরামিক পণ্যে ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ, টুপিতে ৯ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ, কাঁকড়া-কেঁচোর বিপরীতে ৮ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে।

গ্যালভানাইজিং শিল্পে ৮ শতাংশের পরিবর্তে এখন দেওয়া হবে ৬ শতাংশ, রাসায়নিক পণ্যে ৭ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ, ইলেকট্রনিকক্স, ইলেট্রিক্যাল হোম কিচেন পণ্যে ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।  

চাল রপ্তানিতে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এখন চাল রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। চা রপ্তানিতে ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ, স্টিল পণ্যে ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।

সাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ খাতে সাড়ে ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। সিমেন্ট শিটে সাড়ে ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।  বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চলগুলো থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে আগে ৩ শতাংশ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হবে ২ থেকে দশমিক ৩০ শতাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d