প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে শীর্ষে ভারত, প্রতিবছর উৎপন্ন করে এক কোটি টনের বেশি

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৫ কোটি ৭০ লাখ টনেরও বেশি। এর মধ্যে ভারত অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি বর্জ্য উৎপাদন করে। গবেষকরা দেখেছেন, ভারত প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে, যা অব্যস্থাপনার মধ্য দিয়ে খোলা পরিবেশে রাখা হয়। এটি বৈশ্বিক বর্জ্য উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ।
বুধবার নেচার জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। লিডস স্কুল অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কস্টাস ভেলিসের নেতৃত্বে একটি দলের গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বর্জ্যের ভাগাড় নেই। যেসব স্থানে বর্জ্য রাখা হচ্ছে, সেগুলো সরাসরি পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। গবেষকরা বলছেন, গ্রামীণ অঞ্চলে যেসব প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় বা যেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়, সেগুলোকে এ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করেননি তারা।
ভারতের পরই বিশ্বে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নাইজেরিয়া। দেশটি প্রতি বছর ৩৯ লাখ টন বর্জ্য উৎপাদন করে, যা ভারতের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। আগের গবেষণার ফলাফলে চীনকে প্লাস্টিক বর্জ্যের এক নম্বর উৎস হিসেবে দেখা গিয়েছিল। বর্তমানের তালিকায় দেশটি চতুর্থ অবস্থানে আছে। সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, চীন প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
গবেষকরা দেখেছেন, বিশ্বের বেশির ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য আসে ‘গ্লোবাল সাউথ’ থেকে। তারা দেখেছেন, সীমিত আয়ের দেশগুলোতে এ প্লাস্টিক দূষণ বেশি। বার্ষিক প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭০ শতাংশ আসে ২০ দেশ থেকে, যার মধ্যে চারটি নিম্ন আয়ের, নয়টি মধ্যম আয়ের ও সাতটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ রয়েছে। যদিও উচ্চ আয়ের দেশগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রধান উৎপাদক, তাদের বেশির ভাগেরই নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আছে। এ কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণে দায়ী দেশগুলোর তালিকায় সামনের সারিতে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিচের দিকে। দেশটি বছরে প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন করে। তালিকায় তারা ৯০তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় তৃতীয় স্থান রয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তা দিয়ে নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক ভরে ফেলা সম্ভব। এতে সেখানে বর্জ্যের স্তূপের যে উচ্চতা হবে, তা ১৫৭টি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সমান হবে। এমনটা হবে শুধু সংগ্রহীত বর্জ্য দিয়েই। বিশ্বের ১৫ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ বা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বাইরেই থেকে যায়।
এসব প্লাস্টিক বর্জ্য ভয়ংকর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। এগুলোর ৫৭ শতাংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশের কথা না ভেবে সড়ক, ভাগাড়, বাড়িঘর কিংবা মাঠে এগুলো পোড়ানো হয়। প্লাস্টিক বর্জ্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে পুড়িয়ে ফেলা মানুষের জন্য ভয়াবহ হুমকির কারণ। স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ও মস্তিষ্কের ওপর এর প্রভাব গুরুতর। দরিদ্র জনগণের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত খারাপ। এ কারণে গবেষকরা বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্লাস্টিক অব্যবস্থাপনায় সবার শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান। ২০২৪ সালে দেশটির প্রত্যেক ব্যক্তি ১১১ কেজি প্লাস্টিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনতে পারেননি।
এর বাইরে গত এপ্রিলে সায়েন্স অ্যাডভান্সের সমীক্ষার ভিত্তিতে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী এক-চতুর্থাংশের প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী মাত্র পাঁচটি কোম্পানি। গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়ন্ড প্লাস্টিকস গ্রুপের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পূর্ণরূপে পুনর্ব্যবহারের পরিবর্তে ভাগাড়ে পাঠানো হয়।