প্লুটোর সবচেয়ে বড় চাঁদ চারনের জন্ম রহস্য নিয়ে যা জানাল গবেষণা
প্লুটোর সবচেয়ে বড় চাঁদ চারনের জন্মের পেছনে রয়েছে এক অনন্য মহাজাগতিক ঘটনা—‘চুম্বন ও আটক বা বন্দী’ তত্ত্ব। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় কয়েক বিলিয়ন বছর আগে প্লুটো ও চারনের মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত বরফময় সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই ঘটনার মাধ্যমে চারন প্লুটোর কক্ষপথে স্থায়ীভাবে আটকা পড়ে।
নাসার পোস্টডক্টোরাল গবেষক আদিন ডেন্টনের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। তিনি ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার লুনার ও প্ল্যানেটারি ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন। ডেন্টনের মতে, এই ‘চুম্বন ও আটক’ তত্ত্ব আমাদের গ্রহ ও উপগ্রহগুলোর গঠনের প্রক্রিয়া আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আগের মডেলগুলোতে প্লুটো ও চারনের মতো বরফময় ছোট গ্রহগুলোতে সংঘর্ষের সময় গঠনতান্ত্রিক শক্তি (structural strength) বিবেচনায় আনা হয়নি।
গবেষণাটি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে মনে করতেন, চারনের জন্ম পদ্ধতি অনেকটা পৃথিবীর চাঁদের মতো। প্রচণ্ড সংঘর্ষের ফলে চাঁদ বা চারনের মতো উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হতো। কিন্তু এই মডেলগুলো পৃথিবী ও চাঁদের ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও প্লুটো-চারনের জন্য কাজ করেনি। কারণ, পৃথিবী-চাঁদের তুলনায় প্লুটো ও চারন অনেক ছোট এবং ঠান্ডা। তারা মূলত পাথর ও বরফ দিয়ে তৈরি।
ডেন্টন বলেন, প্লুটো ও চারন তাদের গঠনগত বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন। যখন আমরা বরফ ও পাথরের প্রকৃত শক্তি বিবেচনায় নিলাম, তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঘটনা আবিষ্কার করলাম।
ডেন্টনের মতে, বেশিরভাগ গ্রহের সংঘর্ষের ঘটনা হয় ‘হিট অ্যান্ড রান’ বা ‘গ্রেজ অ্যান্ড মার্জ’। কিন্তু চারনের ক্ষেত্রে ঘটেছে ‘চুম্বন ও বন্দি’ পদ্ধতি। এর অর্থ, সংঘর্ষের পর তারা সাময়িকভাবে একসঙ্গে আটকে থাকে এবং পরবর্তীতে আলাদা হলেও মহাকর্ষীয় শক্তি তাদের স্থায়ীভাবে যুক্ত করে রাখে।
এই গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, চারনের কক্ষপথ সম্পর্কিত অনুমান সঠিকভাবে মিলে গেছে। গবেষণার আরেক লেখক এরিক অ্যাসফগ বলেন, এই মডেল একসঙ্গে দুটি বিষয় সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করেছে। চারনের বন্দি হওয়ার প্রক্রিয়া এবং তার বর্তমান কক্ষপথ।
এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মহাজাগতিক সংঘর্ষ এবং উপগ্রহ গঠনের নতুন দিক নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।