Bangladesh

ফিরে দেখা ২০২৩: বছরজুড়ে রাজপথে থাকলেও এখন কোণঠাসা বিএনপি

দল ভাঙতে না পারা সবচেয়ে বড় সফলতা * নির্বাচনের আগে গ্রেফতার-সাজায় কাবু, ঘরছাড়া বেশির ভাগ নেতাকর্মী

বছরজুড়েই আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ ছিল বিএনপির। সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট নিয়ে নামে যুগপৎ আন্দোলনে। এ সময়ে বিভাগীয় সমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশ, অবস্থান, রোডমার্চের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পায় তারা। তবে রাজপথের আন্দোলন তুঙ্গে থাকলেও বছর শেষে চাপে পড়েছে দলটি। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ডের পর দলটি হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিতে গেলে বেশ চাপে পড়ে। হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও সাজার কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। বেশির ভাগ নেতাকর্মী দুই মাস ধরে বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর আন্দোলন আরও জোরদার করার লক্ষ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। ‘অসহযোগ’ আন্দোলন ঘোষণার পর গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি দিয়ে আবারও চাঙা হওয়ার চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচন বর্জনসহ ৫ দফা আহ্বান নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। সংগঠিত হয়ে নতুন বছরের শুরুতে ভোটকেন্দ্রিক কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে চায়। ভোটের পরও কর্মসূচি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

তবে এর মধ্যে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়ে সবচেয়ে সফলতা দেখিয়েছে বিএনপি। নানা প্রতিকূল পরিবেশ থাকলেও দল ভাঙা যায়নি। এক্ষেত্রে নেতাদের আত্মগোপনের কৌশল কাজে লেগেছে। যে কারণে কিছুটা স্বস্তিতে দলটি। বছরজুড়ে এ আন্দোলনে যুগপতে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ সমমনারাও পাশে আছে। সরকার পদত্যাগের একদফা আন্দোলনে যুগপতে না থাকলেও জামায়াতে ইসলামীও অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে নতুন করে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বিএনপি একটি উদারপন্থি রাজনৈতিক দল। যারা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এবং সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় আস্থাশীল হয়ে তাদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন পরিচালনা করে থাকে। এই একদলীয় সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের অপশাসন, মামলা-হামলা, জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি-লুটপাট, আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও বিদেশে টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশকে নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপি আজ সরকারের ডামি নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ কর্মসূচি (সিভিল ডিজওবিডিয়েপ্স) ঘোষণা করেছে। লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশকে এই বাকশালী সরকার দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক গভীর অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল এদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতে পারে, যা অর্জন করার উদ্দেশ্যে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী আজ রাজপথে নেমেছেন। বিএনপির জন্য নয়, কোনো ব্যক্তির জন্য নয়, বরং এদেশের সব মানুষের মৌলিক ভোটের অধিকার তথা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন চলতেই থাকবে।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সমমনা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এলডিপিসহ অন্তত ৩৭ দল একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি পালনে ঐকমত্য হয়। ঘোষণা করে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা ‘রূপরেখা’ ও ১০ দফা দাবি। এরপর যুগপতের আন্দোলন ও নিজস্ব কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। জুলাই থেকে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি দেওয়া হয়। সব কর্মসূচিতেই ব্যাপক লোকসমাগম হয়। চাঙা হন নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। পরদিন ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ পর্যায়ে আন্দোলনের গতিতে কিছুটা ভাটা পড়লেও শেষ পর্যন্ত দলকে আবারও রাজপথে ফিরিয়ে আনেন হাইকমান্ড। সভা-সমাবেশ আর পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়ে চাঙা করেন নেতাকর্মীরা। দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে ফেলতে ফের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ডাক দেয় মহাসমাবেশের। তবে সংঘর্ষের জেরে তা পণ্ড করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নতুন মেরূকরণ ঘটে রাজনীতিতে। শুরু হয় দেশব্যাপী গণগ্রেফতার অভিযান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ইতোমধ্যে প্রায় ২৪ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতার এড়াতে অনেকে ধানখেতে, বনে-জঙ্গলে, চরের মধ্যে রাতযাপন করছেন বলেও গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসে। এ ঘটনার পর থেকেই রাজপথের হরতাল-অবরোধের মতো টানা কঠোর কর্মসূচিতে প্রবেশ করে বিএনপি। বিরতি দিয়ে এখন পর্যন্ত চার দফায় ৫ দিন হরতাল ও ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এ পরিস্থিতিতে একদিকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের গতি যত বাড়িয়েছে, অন্যদিকে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের বিভিন্ন মামলার সাজা দেওয়ার ঘটনা গতি পেয়েছে। ইতোমধ্যে পুরোনো মামলায় প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে দেওয়া হয় সাজা। রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কিছু মামলা।

ডিসেম্বরের শেষে এসে ৭ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে ভোট বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি। একই সঙ্গে ভোট বর্জনে জনমত গঠনে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে সমমনা বিরোধী দলগুলো। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টিও পালন করছে একই কর্মসূচি।

লক্ষ্য অর্জনে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে মরিয়া বিএনপি। সর্বশেষ এবার আন্দোলনে নামতে নতুন করে পরিকল্পনা ঢেলে সাজাচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। ভোটের পাঁচ দিন আগে থেকে ওই আন্দোলন শুরু করার কথা রয়েছে। সেখানে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ আরও বেশকিছু দলকে এক মঞ্চে অথবা যুগপতে দেখা যেতে পারে। তবে জামায়াতকে নিয়ে আপত্তি থাকায় যুগপৎ আন্দোলনেই মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো কোনো দল। ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটাতে চায় নির্বাচন বর্জন করা রাজনৈতিক দলগুলো।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল। ওয়ান-ইলেভেনেও এই দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু তা সফল হয়নি। এই অবৈধ সরকারও একই চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। কারণ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব স্তরের নেতাকর্মী এখন ঐক্যবদ্ধ। নেতাকর্মীদের গুম-খুন, হামলা-মামলা, সাজা-হেন কোনো অত্যাচার ও নির্যাতন নেই, যা করছে না এই সরকার। কিন্তু নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। রাজপথে থেকে প্রতিটি কর্মসূচি তারা সফল করছেন। তিনি বলেন, সরকারের এই একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল। আমাদের আন্দোলনে জনগণেরও পূর্ণ সমর্থন আছে। তাই সরকার যতই ‘আমি-ডামির’ একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করুক না কেন, তা বাস্তবায়ন হতে দেবে না দেশের জনগণ। যে কোনো মূল্যে এ আন্দোলন সফল করবে তারা। সরকারের পতন অনিবার্য। জনগণের বিজয় হবেই।

Show More

8 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d