Bangladesh

বাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন, ভারতকে তার কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে

৭ই জানুয়ারীর নির্বাচনে  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জয়ী হলে তারা  টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে  আসবে। আওয়ামী লীগ ও  জাতীয় পার্টিসহ মোট ২৯টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বাকিরা নির্বাচনী দৌড়ে নেই। প্রধান বিরোধী দল, কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং আরও ১৪ দল মাঠের বাইরে। এই নির্বাচনে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে বলে অনেকে মনে করছেন, যখন আওয়ামী লীগ একটি বিরোধীমুক্ত নির্বাচন জিতেছিলো । ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো। হাসিনা ৭৫ শতাংশ ভোট এবং ৮৫ শতাংশ আসন জিতে নেন – এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড, যেখানে বিএনপি ১৩  শতাংশ ভোট পেয়ে  সাতটি আসন দখল করে। ঐতিহাসিকভাবে, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয়েরই ৩০ শতাংশের বেশি মূল ভোট ছিল।

১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিল।  ১৯৯১-২০০৮ পর্যন্ত প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদে ভোটারদের অভিমত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আবর্তিত হয়েছে । জনগণের মতামত অনুযায়ী এই নির্বাচনে বিরোধী দল ভালো ফল করবে। কিন্তু হাসিনা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য খুব বেশি সুযোগ রাখেননি।

নির্বাচনকে নিছক কাগজের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপান্তরিত  করতে বিরোধীদের ভয় দেখানো হচ্ছে , বেড়েছে গ্রেপ্তারের পরিমাণ।  কিন্তু ভারতের পূর্ব প্রতিবেশী বাংলাদেশে নির্বাচন কখনোই ধারাবাহিকভাবে প্রহসনমূলক ছিল না। তাই ভারতের উপর দোষ চাপানো হলে তা গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হবে। ঢাকার  দৃশ্যপট কীভাবে বদলেছে এবং  ভারতের এখানে কী ভূমিকা তা তুলে ধরা হলো –

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে অনেক আলোচনা সত্ত্বেও  গত পাঁচ বছর বাংলাদেশে চীনা স্বার্থের বিকাশ লক্ষ্য  করা গেছে  যেখানে ভারতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া ১০ কিলোমিটার আগরতলা (ত্রিপুরা)-আখাউড়া (বাংলাদেশ) রেল সংযোগ একটি উল্লেখযোগ্য  ঘটনা। আখাউড়া-ঢাকা মিটারগেজ দ্বারা সংযুক্ত হওয়ায় ভারত-স্পন্সরকৃত ব্রড-গেজ প্রকল্পের ব্যবহার কতটা কাজে আসবে তা প্রশ্নের বিষয় । আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা নিরবিচ্ছিন্ন রেল চলাচল তো আরো  দূরের স্বপ্ন। একইভাবে, ঢাকা উত্তর-পূর্ব ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। বন্দর সংযোগের সুবিধার্থে ত্রিপুরার সাব্রুমে একটি বিশাল রেল-সংযুক্তি , সমন্বিত চেক-পোস্টের কাজ  সম্পূর্ণ করার থেকে ভারত ছয় মাস দূরে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে কার্গো সুবিধার কোনো অগ্রগতি নেই। 

অন্য কোন বিকল্প নেই?

দিল্লি ২০১৪ এবং ২০১৮ উভয় নির্বাচনের সময়েই হাসিনাকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করেছিল। ভারত এবার সতর্ক ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা ব্লক এবং চীনের তুলনায় কম প্রোফাইল বজায় রেখেছিল। কিন্তু এটি সাহায্য করেনি। আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট মন্ত্রীরা – যারা চীনের বিপরীতে নীতিগত সিদ্ধান্তে ভারতের পক্ষ নেয়ার জন্য  পরিচিত ছিলেন না – তারা ব্যক্তিগতভাবে বা প্রকাশ্যে মিডিয়াকে বলার কোনো সুযোগ ছাড়েননি  যে তারা দিল্লির সমর্থন উপভোগ করেছেন। কেউ কেউ এমনকি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে হাসিনাকে ছাড়া  ভারতের কোনো বিকল্প নেই। “আমি ভারতকে বলেছিলাম যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে,” এরকম মন্তব্য বাংলাদেশে প্রথম পাতার শিরোনামে এসেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নির্লজ্জভাবে অস্বীকার করায় দিল্লি  সাধারণ বাংলাদেশিদের চোখে খলনায়ক হয়ে ওঠে এবং  এটি বিপজ্জনক।

ভারত বাংলাদেশে কখনই জনপ্রিয় ছিল না, এমনকি ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরেও নয়।  যখন দিল্লি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের  পাশে ছিলো । এটি মূলত ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে যা পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল। তাই বলা যায় ,বাংলাদেশ কিছু পার্থক্য সহ পাকিস্তানেরই  একটি সম্প্রসারণ। ঐতিহ্যগতভাবে, ঢাকায় ভারতীয় সমর্থনের  ভিত্তি সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং  আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি অংশ, বেশিরভাগই উচ্চবিত্ত সমাজের ছিলেন । তারপর থেকে,  গোটা পরিস্থিতির  নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন  হয়। হিন্দুরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কম প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে কারণ তাদের জনসংখ্যা ১৯৭৪ সালে ১৩শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশে নেমে আসে। আওয়ামী লীগের  সাইনবোর্ড আর শেখ হাসিনা ছাড়া গত ১৫ বছরে সব বদলে গেছে।

দল ও সরকারের সব ধরনের শক্তিকে বেহিসাবি ক্ষমতা আকৃষ্ট করে। সরকারও হেফাজত-ই-ইসলামের মতো কট্টর ইসলামপন্থী শক্তির সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে  বৈধতা অর্জন করতে চেয়েছিল। একসময়  এর সাথেই দূরত্ব  বজায় রেখেছিল তারা ।  এমনকি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতারাও এখন নতুন ভাষায় কথা বলছেন। কুমিল্লার বিশিষ্ট নেতা ও সংসদ সদস্য একেএম  বাহাউদ্দিন বাহার সম্প্রতি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে ‘মদের উৎসব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।  ক্ষুব্ধ হিন্দুরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে দলীয় কর্মীরা তাদের মারধর করে। বাহার ২০২৪ সালের নির্বাচনে টিকিট পেয়েছেন।

কে কাকে ব্যবহার করছে?

এখানে একটি  প্রশ্ন আসে, সেটি হলো- বাংলাদেশে ভারতীয় কৌশল কেমন কাজ করছে ? দিল্লি যে হাসিনা সরকারকে সমর্থন করে তা গোপন নয়। কিন্তু এটা কি ভারতের নিজের স্বার্থের কারণে ? চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী মহলে এত বেশি বিনিয়োগ করেছে যাতে  ক্ষমতার পরিবর্তন তাদের প্রভাবিত না করতে পারে । জনসাধারণের মতামত  চীনের পক্ষে এবং বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা এটিকে বেইজিংয়ের পক্ষ নেয়ার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। ভারত কি শুধু হাসিনাতেই বিনিয়োগ করেছে? এটাই কি বাংলাদেশে ভারতের অ-জনপ্রিয়তার কারণ?  যদি তাই হয় তাহলে এটাও সত্য যে  নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে দিল্লির স্বার্থ জড়িত ।   ২০০১-২০০৬  সালের মধ্যে শেষ বিএনপি-জামায়াত সরকারের সাথে দিল্লির একটি দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতা ছিল।  এটাই  কি হাসিনার কাছে ফ্রি পাস হতে পারে নাকি ভারতীয় স্ট্যান্ড অনড়  থাকা উচিত? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৮ সালে সফল পারমাণবিক পরীক্ষার পর ভারতের অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে দৃঢ়  অবস্থান নিয়েছিল। কয়েক বছরের মধ্যে, তারা বাজপেয়ীর নেতৃত্বে দিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করেছিল। ২০০৫ সালে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির  ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ, প্রধানমন্ত্রী মোদি  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ‘সেলিব্রিটি’ । শেখ হাসিনার বয়স এখন  ৭৬। আশা করি, ভারত ভবিষ্যতেও  বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor