Bangladesh

ফের টানা হরতাল অবরোধ!রোববার থেকে ২ দিনের অবরোধ ঘোষণা বিএনপি-জামায়াতের

বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর মহাসমাবেশ, হরতাল ও দেশ জুড়ে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির পর আবারও হরতাল বা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি আসছে। আগামীকাল শুক্র ও পরদিন শনিবার বিরতি দিয়ে এমন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে আজ বৃহস্পতিবার। গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপিসহ বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা তিন দিনের সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ, যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতায় অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বাস ও লরিসহ ১৩টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকালের এসব সহিংসতার সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫৬ জন এবং নাশকতার মামলায় গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ২৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি নাশকতার অভিযোগে নতুন করে নয়টি মামলা করা হয়েছে।

অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সড়কে চলাচল বেড়েছে; প্রথম দিনের চেয়ে গাড়ি বেশি চলতে দেখা গেছে। অবশ্য সড়কে গণপরিবহন থাকলেও যাত্রীর চাপের তুলনায় তা ছিল কম। রিকশা ও ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যা ছিল বেশি। তবে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়েছে কম। অবরোধ চলাকালে বিএনপি-

জামায়াতের পাল্টা হিসেবে ‘শান্তি মিছিল ও সমাবেশ’ কর্মসূচি নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় মাঠে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো।

নতুন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতারা বলেন, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে হামলা করে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির রাস্তায় বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তাই বাধ্য হয়ে লাগাতার কর্মসূচির দিকেই যেতে হচ্ছে তাদের।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই বলেছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আমাদের সরকার পতনের এক দফার দাবি আদায় করতে চাই। কিন্তু সরকার বাধ্য করলে হরতাল, অবরোধের কর্মসূচি যে দেব না, তা বলিনি কখনো। শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে হামলা করে সরকার আমাদের কঠোর কর্মসূচির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের পিছু হটার সুযোগ নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে আবারও অবরোধের মতো কর্মসূচির ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন। এরপর দলের মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আমাদের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে প- করে দিয়েছে। টিকতে না পেরে নেতারা কার্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। এ সুযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কার্যালয় দখল করে রেখেছে। তারা কাউকে কার্যালয়ে ঢোকা তো দূরের কথা, কার্যালয়ে যেতে দিচ্ছে না। এরপর একাধিক মামলা দিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ সারা দেশের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করেছে। এ অবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ে আমাদের হার্ডলাইনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় বা অন্য কোথাও উন্নয়নমূলক কাজ হলে লেখা থাকে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আমরা তেমনভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। সরকার পতনের এক দফার দাবি আদায়ে আমাদের কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে হচ্ছে। দেশের জনগণ অনেক কষ্ট করছে। সামনে কিছুদিন আরেকটু কষ্ট হবে। সাময়িক কষ্ট মেনে নিয়ে জনগণ ধৈর্যধারণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য থেকে যেসব কর্মসূচি দেওয়া যায়, তাই দেওয়া হবে। তবে আমার কাছে কোনো মেসেজ আসেনি। এলে আমি গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার বিরতি থাকবে। রবিবার থেকে আবার ধারাবাহিক কর্মসূচি আসবে। হরতাল ও অবরোধের মতো দুটি কর্মসূচি নিয়েই আলোচনা চলছে। টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন কী কর্মসূচি আসবে।’  

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিএনপিসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে হামলা করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যেভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তাতে অবরোধের মতো কর্মসূচির বিকল্প আমাদের সামনে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বলছে, যেকোনো মূল্যে তারা নির্বাচন করবে। কিন্তু দেশের মানুষ আর কোনো একতরফা নির্বাচন হতে দেবে না।’

গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের যা করার ছিল তাই করেছে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তারা অপেক্ষা করছিল। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে তারা আমাদের হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি পালনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন আমাদের অলআউট কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

অবরোধে ১৩ যানে আগুন : অবরোধের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার পন্থিছিলা এলাকায় একটি লরিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে চড়ে আসা দুজন গাড়িটিতে পরপর দুটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায় বলে জানান গাড়িটির চালক। পুড়ে যাওয়া গাড়িটি সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের বলে তিনি জানান। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভেল্লাপাড়া সেতু এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাসচালক মোজাম্মেল হক (৬০) আহত হন। গতকাল সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জেলার রাঙ্গুনিয়ায় কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর এবং একটি লরিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীর তেলিপাড়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি বাসে এবং শিমুলতলী রোডের মাঝিরখোলা এলাকায় আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। দিনাজপুরের পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়েছে অবরোধকারীরা। ঢাকার সাভারে থেমে থাকা দূরপাল্লার একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

ফরিদপুরে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির মিছিলে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত আটজন। বিএনপির পক্ষ থেকে এ হামলার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটকসহ সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালা ভেঙে ফটক খুলে দেওয়া হয়। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রদলের এক কর্মীকে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

পাবনার ঈশ্বরদীতে কলকাতা-ঢাকা রুটের আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে লোকোশেড এলাকায় ট্রেনটিতে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।

বরিশালে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন ও বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেনসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সিলেটে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিএনপির ছয় নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

বগুড়ায় একটি কাভার্ড ভ্যান ভাঙচুর, ৩-৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ও একটি মালবাহী ট্রাক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে অবরোধকারীরা।

নারায়ণগঞ্জের একাধিক স্থানে সড়ক ও মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ নাশকতার পুরনো মামলায় বিএনপির ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া রুহুল কবির রিজভীকে প্রধান আসামি করে ফতুল্লা থানায় একটি, আড়াইহাজারে আরেকটি এবং সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির ৬৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ।

ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জে বিএনপির ২৭ নেতাকর্মীকে নাশকতার পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খুলনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে।

অবরোধের পক্ষে রাজশাহী নগরীতে বিএনপি বা জামায়াতের তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। তবে দিনভর নগরীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

টাঙ্গাইলে সড়ক-মহাসড়কঘেঁষা এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অবরোধবিরোধী মিছিল করা হয়েছে। গাজীপুরেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন।

রাজধানীর চিত্র : রাজধানী ঢাকায় তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার ১৪১ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ঢাকার চারটি বড় টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বস ছেড়ে যায়নি। ঢাকাতেও কোনো বাস প্রবেশ করেনি। তবে গতকাল ঢাকা মহানগরে অল্পসংখ্যক সিটি বাস চলাচল করেছে।

গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মুগদা হাসপাতালের সামনে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশ আগুন লাগানোর অভিযোগে আলামিন নামে একজনকে আটক করেছে। সন্ধ্যায় শ্যামলী এলাকায় শ্যামলী স্কয়ারের সামনে যাত্রীবেশে বাস থেকে নেমে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর রাত ৯টার দিকে মিরপুর ১২ নম্বরে আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাফরুল থানার গেটের সামনে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া রাতে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের পাশের সড়কে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের ব্যক্তিগত সহকারী ফারুকুল ইসলাম সেলিমকে আটকের অভিযোগ করেছে বিএনপি। তারা জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে শান্তিনগর থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। সেলিমের স্ত্রী শামসুন্নাহার বলেন, ‘সেলিমকে রাতে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। আমার স্বামীকে এখন পর্যন্ত কোর্টে ওঠানো হয়নি। ডিবি অফিসে স্বামীর খোঁজ জানতে গেলে তাদের কাছেও কোনো সদুত্তর পাইনি। আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই।’

পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপির সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ৪০টি মামলা করা হয়েছে। প্রতিদিনই এসব মামলায় গ্রেপ্তার ও আটক অব্যাহত রেখেছে ডিএমপি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন মামলায় যারা এজাহারভুক্ত আসামি তাদের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। আসামিদের হয় আদালতে হাজির হতে হবে, নয়তো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করবে।’

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ঝটিকা মিছিল : গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। মিছিলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। যারা মিছিলে নেমেছেন তারা গ্রেপ্তার এড়াতে ঝটিকা মিছিল করে সটকে পড়েছেন। গত শনিবার মহাসমাবেশের পর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে পুলিশ। একাধিক মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে কার্যালয়মুখী হচ্ছেন না দলটির নেতাকর্মীরা।

গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর রামপুরায় মিছিল ও পিকেটিং করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের নেতাকর্মীরা। বনশ্রী-মেরাদিয়া বাজারে অবরোধ সমর্থনে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

জামায়াতসহ অন্যান্য দলের কর্মসূচি : গতকাল সকালে অবরোধের সমর্থনে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিরপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। রাজধানীর পল্টনে মিছিল বের করে বিএনপির সমমনা জোট। দুপুর পৌনে ১২টায় তোপখানা রোড থেকে মিছিল বের করে গণসংহতি আন্দোলন। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে আরামবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে ১২-দলীয় জোট। বিজয়নগর ৭১ হোটেলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা। বিজয়নগরে মিছিল করে এলডিপি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button